বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বহুদিন পর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে এক গুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল এমন সব দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।
কিভাবে এই কমিশনের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন হতে পারে, সে ব্যাপারেও কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি।
খালেদা জিয়া এমন এক সময় নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাঁর প্রস্তাবনা তুলে ধরলেন যখন বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন তার মেয়াদের প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
সামনের বছরের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষে যে কমিশন গঠিত হবে তার অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা।
ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে সাংবাদিকদের সামনে খালেদা জিয়া এক দীর্ঘ বিবৃতি পড়ে শোনান যেখানে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে বিএনপির প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
বিবৃতি পড়া শেষ করেই তিনি উঠে চলে যান। সাংবাদিকদের কোন প্রশ্ন করার সুযোগ সেখানে দেয়া হয়নি।
কী আছে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবে:
খালেদা জিয়া তাঁর প্রস্তাবে বলেছেন, সব দলের সাথে আলোচনা করে দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
” সব দলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের যোগ্যতা ও মনোনয়ন প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সব সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন দলগুলো নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।”
আর সব দলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের যে বাছাই কমিটি গঠন করা হবে সেটিও ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
“রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সব সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন দলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি বাছাই কমিটি গঠন করবেন। রাষ্ট্রপতি সর্বজনশ্রদ্ধেয়, প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠন করবেন।”
খালেদা জিয়া তাঁর প্রস্তাবনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের যোগ্যতা, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে গণ প্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিওসহ নির্বাচনী বিধি বিধান সংস্কারসহ নানা প্রস্তাবের মধ্যে পাশাপাশি, নির্বাচনের সময় কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এবং প্রতিরক্ষাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন।
“নির্বাচন-কালীন সময়ে প্রতিরক্ষাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে ভোটকেন্দ্র ও বিশেষ স্থানগুলোতে মোতায়েনের ব্যবস্থা করবে। এটা ভোটের সাত দিন আগে থেকে ফলপ্রকাশের গেজেট প্রকাশনা পর্যন্ত স্থায়ী হবে।”
তবে খালেদা জিয়া এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরার পর পরই এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন খালেদা জিয়ার প্রস্তাবগুলো হাস্যকর ও অন্তঃসারশূন্য।
তিনি বলেন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি।
“বেগম জিয়া কর্তৃক তথাকথিত নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রস্তাব অন্তঃসারশূন্য ও জাতির সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। জনগণ, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের ওপর তার আস্থাহীনতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতিকে যে সংলাপের কথা বলেছেন তা হাস্যকর।”
ক্ষমতাসীন দলের তরফ থেকে নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে যাই বলা হোক না কেন আজকের সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া জানিয়ে রেখেছেন যে তিনি খুব শীগগিরই নিরপেক্ষ নির্বাচন কালীন সরকারেরও একটি রূপরেখা তুলে ধরবেন।
তবে দু প্রধান দল বা জোট যাই বলুক সামনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন যে সরগরম হতে যাচ্ছে, সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিবিসি
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।