কক্সবাজারসময় ডেস্কঃ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসন। এই আসনে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে প্রায় ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। নির্বাচনি সহিংসতায় রোহিঙ্গাদের ব্যবহার হতে পারে এমন শঙ্কায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর যৌথটিমের সদস্যরা বিশেষ নজরদারিতে রেখেছে উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে।
নির্বাচনকে ঘিরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যৌথ ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গা ক্যম্পগুলো বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিউল হাসান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগের দিন অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গারা যাতে কোনও অজুহাতে ক্যাম্পের বাইরে যেতে বা অবস্থান করতে না পারে সে বিষয়ে ক্যাম্পে বিশেষ নজারদারি রাখা হয়েছে। একাদশ নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে যাতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য এ উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনি সরঞ্জাম পৌঁছেছে, সেগুলো কেন্দ্র পৌঁছানোর প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ যেন বজায় থাকে, কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা যাতে সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সব আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। তবে অন্য কেন্দ্রের চেয়ে সেন্টমাটিন ও শাহপরীর দ্বীপ কেন্দ্রে নজরদারি বেশি।’
নির্বাচন কার্যালয় সূত্রমতে, একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসন। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় নৌকা ও ধানের শীর্ষের প্রার্থীরা ভোটারদের ধারে ধারে ছুটলেও দেখা যাচ্ছে আরও চার প্রার্থীদের। ইতোমধ্যে এই আসনে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে টেকনাফ উপজেলায় মাঠে কাজ করে যাচ্ছে, তিন প্লাটুন নৌ-বাহিনী, পাচঁ প্লাটুন বিজিবি, ১৬৫ জন পুলিশ, র্যাবের তিনটি টিম, কোস্টগার্ড ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। পাশপাশি নির্বাচনের দিন মাঠে থাকবেন ৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া থাকবে ৬টি ইউনিয়ে ৬ মোবইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স।
এ আসনে ছয়জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের সাংসদ আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার (নৌকা), বিএনপির সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী (ধানের শীষ), জাতীয় পাটির (এরশাদ) আবুল মনজুর (লাঙ্গল), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সাইফুদ্দিন খালেদ (হারিকেন), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ শোয়াইব (হাতপাখা) ও ইসলামী ঐক্যজোটের রবিউল হোসাইন (মিনার)।
এ আসনে ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৬ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার ১ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৫ জন। এ আসনের ১০০টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এসব ভোটাররা ১০০ ভোট কেন্দ্রে ভোট প্রদান করবেন। তার মধ্যে উখিয়ায় ৫টি ইউনিয়নে ৪৫টি এবং টেকনাফে একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নে ৫৫টি কেন্দ্রে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যেন কালো টাকার বিনিময়ে নির্বাচনে কারও পক্ষাবলম্বন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বানচাল করার অপচেষ্টা চালাতে না পারে সেজন্য বৃহস্পতিবার সকাল পুলিশ রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। ক্যাম্প থেকে কোনও রোহিঙ্গাদের বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।’
এদিকে এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, গত দুই দিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কাউকে বের হতে দিচ্ছে না। প্রতিদিন মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের জানানো হচ্ছে নির্বাচনের সময় যাতে কোন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বের না হয়।
র্যাব-৭ টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তি নির্বাচনের লক্ষ্যে র্যাব তিনটি মাঠে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে। কোনওভাবেই নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে পারে এমন শঙ্কায় থেকে র্যা বসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশেষ নজরদারি রেখেছে।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।