একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দুই দফা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর প্রথমটি হবে আইন সংস্কার বিষয়ে আর দ্বিতীয়টি হবে তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন বিষয়ে সার্বিক ধারণা নেওয়ার জন্য। শেষ ওই বৈঠকের আগে নতুন কিছু রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়া হবে। এ ছাড়া উদ্যোগ নেওয়া হবে নতুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন তৈরির। এ লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার ইসিতে ইভিএম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এসব বিষয়ে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে আজ রবিবার বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ইসি।
ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে খসড়া রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে তাতে প্রাথমিকভাবে ২৩টি এজেন্ডা অন্তর্ভুক্ত করেছে ইসি।
এ বিষয়ে ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুলাহ গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, রবিবার (আজ) ইসির বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। এ বৈঠকেই যে সব কিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে জুনের মধ্যে তো হবেই।
সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ কে এম নুরুল হুদাও বলেছেন, জুলাই মাস থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে যাবে।
ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সংবিধান অনুসারে আগামী বছর ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য আগামী বছর নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময় ধরে খসড়া কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। এর অন্তত তিন মাস আগে (২০১৮ সালের আগস্টের মধ্যে) সব কাজ শেষ করার রূপরেখা রয়েছে কর্মপরিকল্পনায়।
ইসির খসড়া কর্মপরিকল্পনায় যা রয়েছে : কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী জুলাই মাসে নির্বাচন সম্পর্কিত আইন-বিধির সংশোধনী আনতে হবে। এরপর আগস্টে প্রস্তাবিত খসড়া প্রণয়ন, আগস্টে নির্বাচনী আইন সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, সুধীসমাজের সঙ্গে আলোচনার সময়সূচি নির্ধারণ, সেপ্টেম্বরে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সুধীসমাজ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা, নভেম্বরে আইন-বিধি সংশোধন করে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ এবং ডিসেম্বরে তা চূড়ান্ত করতে হবে।
এরপর আগস্টে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা, সেপ্টেম্বরে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানাসংক্রান্ত খসড়া তালিকা প্রণয়ন, অক্টোবরে ওই তালিকা অনুমোদন, খসড়া তালিকা প্রকাশ, দাবি-আপত্তি-সুপারিশ আহ্বান, নভেম্বরে দাবি-আপত্তি ও সুপারিশের ওপর শুনানি গ্রহণপূর্বক নিষ্পত্তি এবং ডিসেম্বরে সংসদীয় আসন এলাকার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন চাওয়া হবে অক্টোবরে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন দলগুলোর আবেদন নিষ্পত্তি করে নিবন্ধনপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও খসড়া প্রকাশ করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে ৩০০ নির্বাচনী এলাকার ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ছবি ছাড়া সিডি প্রস্তুত, জুনে মাঠপর্যায়ে যাচাইয়ের পর ভোটার তালিকা মুদ্রণ এবং আগস্টে প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ভোটার তালিকা ও সিডি তৈরি করে মাঠপর্যায়ে তা পাঠানো হবে। আগামী বছরের মে মাসের আগে বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের খাতভিত্তিক হার নির্ধারণ ও দফাওয়ারি বিভাজন তালিকা প্রস্তুত করে সময়সূচি ঘোষণার ১০ দিন আগে নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দপত্র জারি করা হবে। জানুয়ারির মধ্যে মুদ্রণ অধিদপ্তরের সঙ্গে সভা করে বিভিন্ন প্রকার ফরম, প্যাকেট, লিফলেট ইত্যাদি পর্যায়ক্রমে মুদ্রণের জন্য অনুরোধ জানানো হবে। জুলাইয়ে মুদ্রণ শেষ করে অক্টোবরের মধ্যে সব কিছু মাঠপর্যায়ে পাঠানো হবে। এ ছাড়া জানুয়ারির মধ্যে পরিপত্রের মাধ্যমে ক্রয় প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে ভোটগ্রহণের কমপক্ষে ৩০ দিন আগে সব ব্যালট বাক্স ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হবে। ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতের জন্য ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট স্থাপনা-প্রতিষ্ঠানের মেরামত ও সংস্কারের লক্ষ্যে নির্দেশনা দেওয়া এবং সময়সূচি ঘোষণার ২৫ দিন আগে ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করা হবে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে ভোটিং মেশিন ব্যবহার উপযোগী করা, সময়সূচি ঘোষণার ৩০ দিন আগে ইভিএম ব্যবহারের উপযোগিতা-সংক্রান্ত প্রচারণা চালানো হবে। ইসির খসড়া পরিকল্পনায় নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার অন্তত ২৫ দিন আগে ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ ও নির্বাচনের বিষয়ে সার্বিক ধারণা নেওয়ার জন্য প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সভা করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার ৩৫ দিন আগে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, সাংবাদিক ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবে ইসি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।