২৭ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

নির্বাচনের পথে হাঁটছে সবাই

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দলটির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এবং সংসদের বিরোধী দল এইচএম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি নির্বাচনি তৎপরতা শুরু করেছে। এর বাইরে থাকা ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নানা তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে। এমনকি নির্বাচন কমিশনও একাদশ সংসদ নির্বাচনের পথেই হাঁটছে। সব মিলিয়ে সবাই এখন নির্বাচনমুখী। নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের পর ২৯ জানুয়ারি সংসদের অধিবেশন প্রথম বসে ২৯ জানুয়ারি। এই হিসেবে ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের ১২৩(৩) ধারা অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতার কথা বলা রয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনের তারিখ ও নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনাই বেশি। বিগত নবম সংসদের প্রথম বৈঠক বসেছিল ২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি। ওই সংসদের মেয়াদ শেষের ১৪দিন আগে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা মূলত আগে থেকেই নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছে। নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়নের কাজেও হাত দিয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত দলের ২১তম সম্মেলনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতাসীন দলটি একাদশ সংসদ নির্বাচনের পথে হাঁটছে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের কাউন্সিল অধিবেশনে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হতে মানুষের দোরগোড়ায় যাওয়ার নির্দেশ দেন। ওই সম্মেলনের পর থেকে গত ৬ মাসে ক্ষমতাসীন এ দলটির প্রতিটি কর্মতৎপরতা চলছে নির্বাচনকে ঘিরে। কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক বিগত ২/৩টি বৈঠকে এবং গত ৭ মে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশ দেন। এসব সভায় তিনি অভ্যন্তরীণ বিভেদ মিটিয়ে দলকে চাঙ্গা করার কথা বলেন। প্রত্যেক সংসদ সদস্যদের জনগণের দোরগোড়ায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রার্থী মনোনয়নের জন্য তিনি একাধিক সংস্থার মাধ্যমে জরিপ চালানোর কথাও জানিয়েছেন এমপিদের।

দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘টানা তৃতীয় দফায় জয়ী হতে জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে তাদের কল্যাণে আমরা কী করেছি, তা তুলে ধরতে হবে। ব্যাপকভাবে তা প্রচার করতে হবে। উন্নয়নের কথা পৌঁছে দিতে হবে জনগণের কাছে, মানুষকে বোঝাতে হবে, তাদের জন্য আমরা কী করেছি। উন্নয়ন ও পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগকেই আবার ক্ষমতায় আনতে হবে।’

এছাড়া নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা পর্যায়ে সফর শুরু করেছেন। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন করতে গিয়ে বিভিন্ন জেলায় তিনি দলীয় উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দিয়ে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে শুরু করেছেন। আগামী বছরের অক্টোবর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের সফর অব্যাহত থাকবে বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

নির্বাচনী তৎপরতার অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ তৃণমূলের বিভেদ মেটাতে শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কয়েকটি জেলার নেতাদের ঢাকায় ডেকে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়া আগামী ২০ মে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সব জেলার নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময় করবেন। ওই সভায় নির্বাচনের জন্য কাজ করতে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। নির্বাচনি কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগ দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির কার্যালয়ের পাশে একটি আলাদা অফিসও ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। ওই অফিসে দলের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজও শুরু করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী  বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের সব সময়ই থাকে। আমরা যেদিন ক্ষমতা গ্রহণ করি, সেদিন থেকেই পরবর্তী নির্বাচনের তৎপরতা শুরু করি।’

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিন বছরের বেশি সময় চলে গেছে। আর এক বছর কয়েক মাস বাকি আছে। আমরা দল গোছাতে শুরু করেছি।’

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় না থাকলেও ভেতরে ভেতরে দল গোছাতে শুরু করেছে। শুরু করেছে নির্বাচনী তৎপরতাও। দলটির ‘মধ্যবর্তী নির্বাচনে’র’ দাবি থাকলেও সরকারের মেয়াদ শেষে নির্বাচন হবে, এমনটি ধরে নিয়েই এগুচ্ছে টানা ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা এ দলটি।

নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুতের অংশ হিসেবে দ্বন্দ্ব-সংঘাত মিটিয়ে দলটি তার তৃণমূলকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা মহানগরসহ জেলা সংগঠনকে ঢেলে সাজাচ্ছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতারা সারাদেশে সফর শুরু করেছেন। দ্বন্দ্ব-কোন্দল মেটানো ও প্রার্থী বাছাইয়ে জেলায় জেলায় করা হচ্ছে কর্মী সভা। গত ৭ ও ৮ মে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বুধবার (১০ মে) এক সংবাদ সম্মেলন করে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছেন। অবশ্য বিএনপি এটাকে নির্বাচনী তৎপরতা বলতে না চাইলেও ‘ভিশন ২০৩০’ এর বড় অংশে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ও ক্ষমতায় গেলে ভিশন বাস্তবায়নে কী কী করবেন তার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

ররিবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। বিএনপি জনগণের ভোটে বিশ্বাস করে। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার এবং নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হলে বিএনপি যে কোনও পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত। আর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ কাকে ভোট দেয়, সেটি তখন প্রমান হবে।’

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা একটা নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। আমাদের তিনশ আসনের বিপরীতে নয়শ প্রার্থী প্রস্তুত আছেন।’

নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী তৎপরতা সব সময়ই রয়েছে। আন্দোলন সংগ্রাম সবই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।’

বিএনপি যেকোনও সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের প্রার্থী আমরা চূড়ান্ত করে রেখেছি। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যখনই নির্বাচন হবে তখনই বিএনপি অংশ নেবে।’

‘ভিশন ২০৩০’ নির্বাচনী তৎপরতার অংশ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দুদু বলেন, ‘নির্বাচনী তৎপরতা ও ‘ভিশন ২০৩০’ এক নয়। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে কী কী করতে চাই সেটা এই ভিশনে উল্লেখ করা হয়েছে। আর নির্বাচনের জন্য আমরা একটি ইশতেহার দেব। বিজয়ী হলে ওই পাঁচ বছরের কী করব তার রূপরেখা থাকবে ওই ইশতেহারে। তবে, ‘ভিশন ২০৩০’ এর মধ্যে আগামী সরকারের মেয়াদও পড়বে এজন্য এর একটি বড় অংশ ইশতেহারে যুক্ত হবে।’

একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিও এখন নির্বাচনমুখী। গত রবিবার দলটি ৫৮টি দল নিয়ে নতুন জোট ঘোষণা করেছে। সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যজোট নামে আত্মপ্রকাশ করা জোটটি আগামী নির্বাচনে এককভাবে তিনশ আসনে নির্বাচন করবে বলে জোট গঠনের সময় এরশাদ ঘোষণা দেন। নির্বাচনের অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টি সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকা তার দলের তিন সদস্যকে পদত্যাগ করানোর কথাও বলছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও জোট মুখপাত্র এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার  বলেন, ‘জোট গঠনের প্রধান উদ্যোগই হচ্ছে নির্বাচন। আমরা নির্বাচনকে সামনে রেখেই এটা করেছি। আগামীতে জাতীয় পার্টি এই জোটের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। দেখতে দেখতে সময় শেষ হবে। তাই আমরা আগেভাগেই নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করেছি।’

রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নির্বাচন নির্বাচন কমিশনও একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ‍শুরু করেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিশন একটি রোডম্যাপের খসড়া ইতোমধ্যে প্রস্তুত করেছে। আগামী সপ্তাহে এই রোডম্যাপ চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান কমিশনের পাঁচ বছরের মেয়াদকে কেন্দ্র করে এই রোডম্যাপ হলেও এর মুল ফোকাস থাকবে সংসদ নির্বাচন। রোডম্যাপে রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, নির্বাচন সংক্রান্ত আইনের সংস্কার, সীমানা পুনঃনির্ধারণ ইত্যাদি বিষয় থাকছে। কখন, কোন সময় ইসি এসব কাজ শেষ করবে তারও একটি টাইমফ্রেম বেঁধে দেওয়া থাকবে এই রোডম্যাপে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা একটি রোডম্যাপের খসড়া করেছি। আগামী সপ্তাহে কমিশন বৈঠকে এটা তোলা হবে। তারপর এটা আলোচনা পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘কমিশন সবাইকে আস্থায় নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেবে। এজন্য যা করণীয় তার সবই করা হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেবল সংসদ নির্বাচন নয়, কমিশন তার মেয়াদে কী কী করতে চায়, সেটার জন্য এই কর্মপরিকল্পনা। তবে সংসদ নির্বাচন কমিশনের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সেই হিসেবে রোডম্যাপে এটাকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।