কক্সবাজারের ৭০ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন শুরু হলেও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন জেলার লবণ চাষিরা। মিল মালিকদের লবণ ক্রয়ে গড়িমসি, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধ, শ্রমিক, পলিথিনসহ লবণ উৎপাদনে ব্যবহৃত জিনিষ-পত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে শঙ্কা চাষিদের।
কক্সবাজার বিসিক সূত্র জানায়, দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলা (আংশিক)। বিশেষ করে কক্সবাজার সদর, রামু, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলায় প্রায় ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে লবণ চাষ হয়। কিন্তু এ বছর ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে লবণ চাষ হয়েছে। বাকি জমিতে বেড়িবাঁধ ধ্বংস ও নানা সমস্যার কারণে চাষাবাদ হচ্ছে না। এ পেশায় জড়িত রয়েছে অন্তত দেড় লাখ কৃষক ও ব্যবসায়ী। জেলার ৮টি উপজেলায় উৎপাদিত লবণ দিয়েই সারাদেশের লবণের চাহিদা মেটানো হয়।
জানা যায়, এই লবণ পরিশোধন করে বাজারজাত করার জন্য কক্সবাজার সদরের বিসিক শিল্প নগরী ইসলামপুর কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে ছোট বড় ৪৫/৫০টি লবণ কারখানা। এগুলোর মধ্যে দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্রুপ এসিআই লিমিটেড, মোল্লা গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, নিরিবিলি গ্রুপ, হিরা গ্রুপ, কৃষিবিদ গ্রুপ, সিনসিয়ার গ্রুপ, বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড ও এনজিও সংস্থা ব্র্যাকের লবণ কারখানা স্থাপন করা হয়েছে ইসলামপুর শিল্প এলাকায়। পরিপূর্ণ উৎপাদনশীল এসব কারখানায় উৎপাদিত আয়োডিনযুক্ত লবণ সারাদেশে সরবরাহ হয়ে আসছে।
মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের পশ্চিম ফকিরা ঘোনার লবণ চাষী আজিজুল হক জানান, তিনি লবণ চাষের পাশাপাশি স্থানীয় লবণ চাষীদের মাঝে টাকা দাদন দিয়ে লবণ ব্যবসা করে আসছেন দীর্ঘ এক যুগ ধরে। তিনি প্রতি একর জমিতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে লবণ শ্রমিকদের দাদন হিসাবে দিয়েছেন। কিন্তু সে তুলনায় লবণ বিক্রি করে পুঁজিও ওঠাতে পারবেন কি না শঙ্কায় অাছেন।
একই ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকার লবণ ব্যবসায়ী আনছারুল করিম ও আবুল কাসেম জানান, মাঠ পর্যায়ে যে টাকা খরচ করা হয়েছে তা পুষিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়েছে।
একই এলাকার আমতলী ও ছড়াঘোনা লবণ মাঠের লবণ শ্রমিক শফিউল্লাহ, কালাম ও রফিকসহ অনেকে জানান, প্রতি ৪০ শতক লবণ মাঠে গড়ে ২০০ মণ যেখানে কালো লবণ উৎপাদন হয়, সেখানে পলিথিন পদ্ধতিতে গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মণ সাদা লবণ উৎপাদন করা হচ্ছে। আর পলিথিন লবণের দামও মণ প্রতি ৪৫/৫০ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে।
মহেশখালী উপজেলার লবণ উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নেছার উদ্দিন বলেন, ‘বিরোধী জোটের ডাকা চলমান হরতাল-অবরোধে পরিবহন সংকটের কারণ দেখিয়ে কয়েকটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণ নামে বিদেশ থেকে অন্যান্য বছরের মতো লবণ আমদানির পাঁয়তারা শুরু করেছে। আর উৎপাদিত লবণ থেকে যাচ্ছে মাঠেই।
মহেশখালী নতুন বাজার লবণ উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে যানবাহন সংকটের কারণে সড়ক পথে লবণ পরিবহন করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় লবণ ক্রয়ের জন্য দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের অন্যতম আমদানি বাজার চাঁদপুর, ঝালকাঠি ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানের বড় আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা কক্সবাজার অঞ্চলে আসতে পারছে না। ফলে মাঠে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ লবণ এখনও বিক্রির অভাবে মাঠেই পড়ে রয়েছে।
কক্সবাজার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) উপ-মহা ব্যবস্থাপক আবদুল লতিফ জানান, চলতি বছর লবণ মাঠে এখনও জরিপ কাজ চলছে। ২০১৩-২০১৪ সালে ৬৪ হাজার ১৫১ একর জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৭ লাখ টন। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় ওই বছর লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। তবে এই মৌসুমে চাষের পরিধি কমে যাওয়ায় বিসিক চলতি বছর ২০১৫ সালে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৮ লাখ টন। যা গত বছরের তুলনায় ১লাখ টন বেশি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।