প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার খেলাধুলার মানোন্নয়নে পদ্মার চরে একটি ক্রীড়াপল্লী ও অলিম্পিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পদ্মা সেতু তৈরি হচ্ছে। সেই পদ্মার চরেই আমরা একটি উন্নতমানের ক্রীড়াপল্লী গড়ে তুলব যেখানে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা আয়োজন এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এমনকি একটি অলিম্পিক কমপ্লেক্সও আমরা ওখানে তৈরি করতে চাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার চতুর্থ রোল বল বিশ্বকাপের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের পাশে শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে হয় এই অনুষ্ঠান। খবর বাসসের
বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশন আন্তর্জাতিক রোল বল ফেডারেশনের (আইআরবিএফ) সহযোগিতায় ঢাকায় ১৭ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘চতুর্থ রোল বল ওয়ার্ল্ড কাপ-২০১৭’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মনে করি, আমাদের যুব সমাজকে যেকোন ধরনের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বা মাদকাশক্তি থেকে দুরে রাখতে হবে। আর সেটা করতে গেলে খেলাধুলা ও সংস্কৃতির চর্চা একান্তভাবে জরুরি। সেই পদক্ষেপই আমরা নিতে চাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ রোল বল বিশ্বকাপের পুরুষ ও নারী বিভাগে চ্যাম্পিয়ন ভারত ও রানার আপ ইরানের হাতে প্রতিযোগিতার ট্রফি তুলে দেন। তিনি খেলোয়াড়, আয়োজক এবং কর্মকর্তাদের মাঝে ব্যক্তিগত ট্রফি বিতরণ করেন।
ভারত পুরুষ বিভাগে ৮-৭ গোলে ও নারী বিভাগে ৬-৪ গোলে ইরানকে হারিয়ে উভয় বিভাগেই শিরোপা জয় করে। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ১৩ বছর বয়েসী হৃদয় সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার লাভ করে।
বাংলাদেশ পুরুষ দল প্রতিযাগিতায় চতুর্থ স্থান অধিকার করে। গতবার বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সপ্তম।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মো. জাহিদ আহসান রাসেল, আন্তর্জাতিক রোল বল ফেডারেশনের সভাপতি পেনিয়া কাবিঙ্গে এবং সাধারণ সম্পাদক রাজু ডাবাদে এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এবারই প্রথমবারের মতো এই খেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩৯টি দেশ ও সর্বোচ্চ ৬২৫ জন ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করে।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক এবং চতুর্থ রোল বল বিশ্বকাপের আয়োজন কমিটির প্রধান মো. আবুল কালাম আজাদ বক্তৃতা করেন।
তার সরকার খেলাধুলার উন্নয়নে প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্রীড়া ক্ষেত্রে আমরা প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিচ্ছি। ক্রীড়া শিক্ষা প্রশিক্ষণ, বিশেষায়িত ক্রীড়া শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নয়নের সামগ্রিক পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি এবং ধীরে ধীরে এটার ওপর আরও জোর দেব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকাল খেলা মাঠে গড়ালে তা খেলোয়াড়দের মধ্যে কেবল বন্ধুত্ব কিংবা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ট্রাক থ্রি ডিপলোমেসির এই সময়ে খেলাও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, আঞ্চলিক সম্পর্ককেও মজবুত করতে পারে।”পদ্মার চরে হবে আধুনিক ক্রীড়াপল্লী ও অলিম্পিক কমপ্লেক্স’
তার সরকার খেলাধুলার প্রতি যথেষ্ট নজর দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা আরও বেশি করে খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত হবে। সে কারণে আমরা প্রাইমারি স্কুল থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত স্কুলে ফুটবল খেলার প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে প্রতিযোগিতার একটি পরিবেশ গড়ে তুলেছি। সেখান থেকেই পারদর্শিতা অর্জন করে আমাদের আগামী দিনের খেলোয়াড়রা বের হয়ে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘এর ফলে আমরা মনে করি, আমাদের ছেলেমেয়েরা আরও শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও সবল হবে এবং তাদের মেধা-মনন বিকাশের সুযোগ লাভ করবে।’
রোলার স্কেট পায়ে জড়িয়ে গোল করে বিপক্ষকে পরাভূত করার এই গতিময় ও উত্তেজনাপূর্ণ অপেক্ষাকৃত নতুন ধরনের এই খেলা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোল বল খেলাটি বাংলাদেশে খুব পরিচিত খেলা নয়। তবে সময়ের ব্যাপ্তি বিবেচনায় খেলাটির পরিধি অনেক প্রসারিত হয়েছে। আমি আশা করছি, আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খেলাটি দেশের আনাচে-কানাচে আরও প্রসার লাভ করবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে সকল ক্ষেত্রে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ শুধু অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নয়, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও বিশ্বের কাছে অনুস্বরণীয় একটি মডেল। ইতোপূর্বে আমরা আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ, এশিয়ান কাপ, সাফ গেমস, আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিস ও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ফুটবলকাপসহ অনেকগুলো আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি; যা দেশ-বিদেশে প্রশংসা অর্জন করেছে।’
খেলাধুলার উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার সারাদেশে সকল উপজেলায় স্টেডিয়াম স্থাপনসহ জেলা পর্যায়ে স্টেডিয়াম উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ করছে। তাছাড়া বড় বড় শহরে সুইমিংপুল নির্মাণসহ বিশেষায়িত ও আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স তৈরির মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।’
ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের সাফল্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খেলাধুলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন একটি অতি পরিচিত নাম। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবলে বাংলাদেশের সফলতা এবং নারী ক্রিকেট দলের সাফল্যে আমরা গর্বিত। আর ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ এখন একটি শক্তিশালী দল।’
তিনি বলেন, ‘হকি, শ্যুটিং, হ্যান্ডবল, বাস্কেটবল, আরচ্যারি, জিমন্যাস্টিক্স ও বিচ ফুটবলসহ বিভিন্ন ইভেন্টে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ অলিম্পিকেও বাংলাদেশের প্রতিযোগীদের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে।
বিভিন্ন গেমসের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন রেফারি, আম্পায়ার, প্রশিক্ষক, চিকিৎসক, পুষ্টিবিদসহ অনেকে। তাদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও পেশাগত মানোন্নয়নে আমরা আরও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করব,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোল বল স্কেটিং’ প্রতিযোগিতায় পুরুষ ক্রীড়াবিদদের পাশাপাশি নারী ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণ নারী-পুরুষের সমতা ও সমঅধিকার অর্জনের উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। আমাদের সরকার নারীবান্ধব নীতি অবলম্বন করে সমাজের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি নারী ক্রীড়াবিদদের উত্তরোত্তর সাফল্য ও কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র ও ক্রীড়াবিদদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এবারের আয়োজনে অংশ নেওয়া ৬২৫ জন ক্রীড়াবিদ বাংলাদেশ দেখে গেলেন। আপনারা নিজের দেশে গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাম্বাসেডরের ভূমিকা পালন করবেন।’
বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতাসহ অমর একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদ এবং মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রমহারানো দুই লাখ মা-বোনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সের নামফলক উন্মোচন করেন ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী সমাপনী অনুষ্ঠানে মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।