২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক   ●  সড়ক দখল করে নৈরাজ্য সৃষ্টি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারে আ.লীগের ৯১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা   ●  রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক চোরা চালানের গডফাদার ফরিদ ফের সক্রিয়

পিএমখালী রেঞ্জ কর্মকর্তার সহযোগিতায় পাহাড় কাটা, গাছ কাটা, বালি উত্তোলন, বনভূমি দখল, বিক্রি, পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি নির্মাণের হিড়িক

এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
নির্বিচারে পাহাড় কাটা, গাছ কাটা, বালি উত্তোলন, বনভূমি দখল, বিক্রি, পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি নির্মাণ, বনের গাছ পাচার সহ বিভিন্ন অপরাধ আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। গত এক বছরে আনুমানিক ১০০ একর বনভূমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। কেটে শেষ করা হয়েছে অন্তত ৪০ টি পাহাড়। কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের পিএমখালী রেঞ্জের আওতাধীন ৪টি বন বিটের বনজ সম্পদের উপর এমন অপরাধ চলছে। খোদ পিএমখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল জব্বারের সাথে অপরাধীদের যোগসাজশে এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকি আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ জমা পড়লেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অভিযোগ রয়েছে, আবদুল জব্বার টাকা দিয়ে সব জায়গায় ম্যানেজ করে রাখেন।
কক্সবাজার সচেতন নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব মোরশেদ আলম অভিযোগ করে জানিয়েছেন, পিএমখালী রেঞ্জে পাহাড় কাটা, বনভূমি বিক্রি, দখল, গাছ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগ মৌখিকভাবে রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল জব্বারকে একাধিকবার অবহিত করা হয়। কিন্তু অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে তিনি তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা ও অপরাধী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়। অভিযোগের দুই মাসেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
অভিযোগে জানা যায়, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের পিএমখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে আবদুল জব্বার যোগদানের এক মাস পর থেকেই শুরু হয় বেপরোয়া গতিতে পাহাড় কাটা। একই সাথে বন উজাড়, বনভূমি বিক্রি, দখল, অবৈধ বসতি তৈরি, সামাজিক বনায়নের প্লট দেয়ার নামে টাকা আদায়, অবৈধ করাতকল স্থাপন সহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। যোগদানের এক মাসের মধ্যেই তাঁর সাথে বিশেষ সখ্যতা গড়ে উঠে শীর্ষ পাহাড়খেকো ১৩ মামলার আসামি ওবায়দুল করিমের। নতুন করে আর কোন মামলা না হওয়ার বিশেষ গোপন চুক্তিতে পাহাড় কাটার ‘লাইন’ দেন ওবায়দুল করিম সিন্ডিকেটকে। এরপর থেকে প্রায় এক বছরে পিএমখালী ইউনিয়নে ওবায়দুল করিমের হাতে কাটা পড়ে অন্তত ১০ পাহাড়। দিঘীরঘোনা বন বিটের ছনখোলা ঘোনারপাড়ার এক এলাকাতেই কেটে শেষ করা হয়েছে আনুমানিক ১০ একরের ৫/৬ টি পাহাড়। যার পরিমাণ আনুমানিক দুই কোটি ঘনফুট। এছাড়া সেখানে কেটে ফেলা হয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি গাছ। পিএমখালী বন বিটের পরানিয়াপাড়া ও তোতকখালী বন বিট এলাকায় একাধিক পাহাড় কাটা হয়েছে। এছাড়া খুরুশকুল ইউনিয়নে খুরুশকুল বন বিটের অবস্থা আরও ভয়াবহ। হামজারডেইল, আদর্শগ্রাম, ঘোনারপাড়া, তেতৈয়া সহ বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ আকারে পাহাড় কাটা হয়। এসব এলাকায় পাহাড় কাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে অর্ধশতাধিক ডাম্প ট্রাক। পরিবেশ অধিদপ্তরের তদন্ত চলাকালে আবদুল জব্বার নিজেই পাহাড়খেকো ওবায়দুল করিমকে রক্ষায় ভূমিকা রাখেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
শুধু পাহাড় কাটায় নয়, পুরো রেঞ্জ জুড়ে বনভূমি দখল,  বিক্রি, অবৈধ বসতি তৈরি, গাছ পাচার, বন উজাড় সহ বনজ সম্পদের উপর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ নেমে এসেছে। যা অতীতে দেখা যায় নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল জব্বার মিথ্যা তথ্য দিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করেন। এছাড়া পাহাড় কাটা, গাছ কাটা, জবরদখল সহ নানা অপরাধে মামলা না করে একদিকে অপরাধ ধামাচাপা দেন, অপরদিকে অপরাধীদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ আদায় করেন। এভাবে তিনি তাঁর রেঞ্জে অপরাধের পরিসংখ্যান কম দেখান। অথচ বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন, যা সরেজমিন তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ হওয়ার পর থেকে তিনি পাহাড় কাটার স্থানে গাছ রোপন, নতুন বসতিকে পুরাতন বানানোর কৌশল তৈরী সহ বিভিন্ন ভাবে অপরাধের আলামত নষ্টের চেষ্টা করেন। শীর্ষ পাহাড়খেকো ১৩ মামলার আসামি ওবায়দুল করিমের সাথে আবদুল জব্বারের নিয়মিত বিলাসবহুল হোটেলে আড্ডা দেয়াসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। সিরাজুল ইসলাম জানান, তাঁর দেয়া অভিযোগের তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। রেঞ্জ কর্মকর্তা টাকা দিয়ে সব ধামাচাপা দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া সামাজিক বনায়নের প্লট দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ দিয়েছেন আরেক ভুক্তভোগী। কিন্তু আবদুল জব্বারের টাকার কাছে সব অভিযোগ ধামাচাপা পড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’ এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘বন বিভাগের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে বনজ সম্পদ রক্ষার চেয়ে বনজ সম্পদ লুটপাটকারীদের রক্ষায় তারা বেশি ব্যস্ত। বন বিভাগের স্বার্থ রক্ষায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পিএমখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল জব্বার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সব অপরাধের বিরুদ্ধে মামলা ও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, এই রকম হওয়ার কথা নয়। তবুও অভিযোগ গুলোর বিষয়ে তদন্ত করা হবে।
তিনি দাবি করেন, রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল জব্বার যোগদানের পর বনভূমি রক্ষার স্বার্থে কাজ করছেন।
গতকাল বিকালে এই প্রসঙ্গে অভিযুক্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল জব্বারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজী হননি। তিনি এলাকায় খোঁজ নিয়ে নিউজ করতে পরামর্শ দেন প্রতিবেদককে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।