২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক   ●  সড়ক দখল করে নৈরাজ্য সৃষ্টি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারে আ.লীগের ৯১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

‘পুলকের বাবার নিশানে’ কলঙ্ক!

সায়ীদ আলমগীর : কক্সবাজার সদরের বৃহত্তর বাণিজ্যিক এলাকা ঈদগাঁও বাজার। বাজারের প্রাচীন ও পরিচিত খাবারের দোকান ‘পুবানি’ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট। প্রায় ৩০ বছর আগে হোটেলটির যাত্রা হয় পূর্বাণী হিসেবে। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে হোটেলটির নাম পরিবর্তন হয়ে সাইনবোর্ড উঠে পুবানি হোটেল এন্ড রেস্তোরা। হোটেলটির বর্তমান মালিক বাজার পরিচালনা কমিটির নেতা উত্তম রায় পুলক। বাবা বাদল রায়ের শুরু করা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি তাঁর প্রয়াণের পর একটি নিশানা হিসেবে রয়ে গেছে। তাই বাবার দেয়া পুরোনো নামটি মুচে দেয়া হয় ‘পুলকের বাবার নিশান’-এর সংক্ষেপ পুবানি। এটি প্রচার পাবার পর বাবার প্রতি ছেলের ভক্তি ও ভালবাসা দেখে ছোট-বড় সবার মনে পুলকের জন্য একটি অন্যরকম শ্রদ্ধাবোধ জাগে। এটি ধরে রাখতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে গভীর নজর দেন পুলক। ফলে বাজারে পরিচ্ছন্ন রেস্তোরার প্রশ্ন আসলে সবধর্ম ও পেশার মানুষ পুবানির কথায় আগে বলে। সেকারণে বাবার আমল ছাড়াও বিগত দেড়যুগ ধরে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি জমজমাট বিক্রয় সেবা চলে আসছে হোটেলটিতে। সেই সুনামে কলঙ্ক লাগাল খাদ্যে বিষক্রিয়া। পুবানির তেহেরি খেয়ে ২০-২৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হওয়ার অভিযোগে রেস্তোরাটি সিলগালা করে দিয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রশাসন। কক্সবাজার সদরের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন প্রিন্স এর নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট এ সিদ্ধান্ত দেয়। মঙ্গলবার বিকেলের এ ঘটনাটি প্রচার পাবার পর তা ‘টক অব দ্যা উপজেলা’য় পরিণত হয়। তবে, রেস্তোরার খাবারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন হোটেল মালিক উত্তম রায় পুলক।
ইউএনও মো. নোমান হোসেন প্রিন্স জানান, পুবানি হোটেলের খাবার খেয়ে প্রায় ২৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। এর উপর ভিত্তি করে হোটেলটি সীলগালা করে দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত হোটেল বন্ধ থাকবে। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, উত্তম রায় পুলক মুঠোফোনে জানান, ৩১ তারিখ রাতে ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের হোস্টেলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা ৬৫ প্যাকেট তেহেরি পার্সেল নেয়। রাত ১০টার দিকে গরম গরম তেহেরি গুলো সরবরাহ করা হয়। শুনেছি শিক্ষার্থীরা থার্টিফার্স্ট নাইট পালন করে তেহেরি, কোলড্রিংসহ আরো অনেক কিছু খেয়ে মজা করেছে। কিন্তু সেদিন রাতে বা পরেরদিন সোমবার তারা অসুস্থ্য হয়নি। মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী বমি ও পায়খানা করে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার সকালে তারা পুবানি হোটেল থেকে কো ন খাবার না খেলেও পুবানি হোটেলের খাবারে বিষক্রিয়ার কারণে তারা অসুস্থ হয়েছে এমন প্রচারণা চালানো হয়েছে। বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষও অবগত রয়েছেন। ৩১ তারিখ নেয়া পার্সেলের প্যাকেট বর্তমান থাকায় আমি বলেছিলাম মঙ্গলবার তারা পুবানিতে কিছু না খেলেও অসুস্থ সব শিক্ষার্থীর চিকিৎসা ব্যয় পুবানি কর্তৃপক্ষ বহন করবে। এরপরও স্বার্থন্বেষী মহলের ইন্ধনে তাঁর রেস্তোরাটি সিলগালা করে দিয়ে দীর্ঘদিনের সুনামে কলঙ্ক লাগানো হয়েছে।
ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কেভিনেট সভাপতি অভ্র ইমাদ জানান, কেন জানিনা হঠাৎ ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী পেট খারাপ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মনে হলো পুবানির তেহেরিটা বাসিছিল তাই বিষক্রিয়া হয়েছে। কিন্তু খাবারের দুদিন পরে কেন এমনটি হবে এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি ইমাদ।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জান্নাত বলেন, কোথাকার খাবারে এমনটি হয়েছে জানিনা তবে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় এমনটি হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক ব্যবসায়ী বলেন, পরিচ্ছন্নতার বিশ্বাস নিয়ে সবাই পুবানিতেই যাওয়ায় তাদের অহমিকা চলে এসেছিল। বর্তমানে সেবার মান কমেছে। রোহিঙ্গা ও শিশু কর্মচারীর সংখ্যা বেশি। বর্ধিত সংরক্ষিত কক্ষে নারী ও অবাঞ্চিত লোকদের আড্ডা থাকে সারাদিন ও মধ্যরাত অবধি। এমপি ও প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক এবং বাজার কমিটি ও হিন্দু কমিউনিটির নেতা হওয়ায় পুলকের ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারত না। এমন একটি ঘটনা পুবানির জন্য দরকার ছিল।
ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক (তদন্ত) মিনহাজ মাহমুদ ভুইয়া বলেন, কেন কিভাবে এমনটি হয়েছে সেটি উপজেলা প্রশাসন তদন্ত করছে। আমরা সীলগালাটি যেন না খুলে সেটা তদারকি করছি।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।