প্রধানমন্ত্রীকে মনের তীব্র আকাঙ্ক্ষার কথাটাই বলা হলো না তাকে বহনকারী কিশোর ভ্যানচালক ইমাম শেখের। তার বয়স ১৭ বছর। গত দেড় বছর থেকে সে ভ্যান চালায়। ইমামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ার পাটগাছী সরদার পাড়ায়। পঞ্চম শ্রেণিতে আটকে যাওয়া ইমামের এখন জীবনযুদ্ধ চলে ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরে।
বাবা আব্দুল লতিফ মানসিক রোগী, মা গৃহিণী। ইমাম শেখরা দুই ভাই, তিনবোন। এক ভাই ঢাকায় নতুন চাকরি শুরু করেছেন। এখনও বেতন পাওয়া শুরু হয়নি। ইমাম এলাকাতেই ভ্যান চালায়। তার উপার্জনেই চলে সংসার।
শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে বঙ্গবন্ধুর সমাধি এলাকার ১ নম্বর গেট থেকে প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নিজের ভ্যানে বহন করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যায় ইমাম শেখ। প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা দুরু-দুরু বুকে ভীষণ সাবধানতার সঙ্গে ভ্যান চালায় সে।
এ সময়ের মধ্যে বার-বার একটি কথাই বলতে চেয়েছিলো ইমাম। কিন্তু চক্ষু-লজ্জার কারণে ইমান সে কথা বলতেই পারেনি। কী সেই কথা..!
ভ্যান থেকে নেমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিশোর ভ্যানচালক ইমামকে ৫০০ টাকা বের করে দেন। ইমাম টাকা নিতে রাজি হয়নি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভ্যানে চড়েছেন- এতেই সে মহাখুশি, আনন্দে আত্মহারা।
কিসের টাকা, কিসের কী? এমন স্মরণীয় মুহূর্তে তার জীবনে আর কোনো দিন আসেনি। তাই দুর্লভ এমন মুহূর্ত টাকার ফ্রেমে বন্দি করতে রাজি হয়নি ইমাম শেখ। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইমামের পকেটে টাকা গুজে দেন। তখন আর না বলে পার পায়নি ইমাম। ঢাকা নেওয়ার সময়ও ভ্যানচালক ইমাম শেখ প্রধানমন্ত্রীকে মনের আকুতিটি জানাতে চেয়েছিলো। কিন্তু কথাটি মুখ ফুটে বলা হয়নি।
শনিবার রাতে মোবাইল ফোনে যখন ইমাম শেখের সঙ্গে বাংলানিউজের কথা হয়, তখন কেবল সে তার এই স্মরণীয় দিনটি উচ্ছ্বাস আর আনন্দের সঙ্গে বর্ণনা করছিলো।
ইমাম জানায়, দেশের প্রধানমন্ত্রী তার ভ্যানে চড়ে ঘুরবেন। আর সে হবে সেই ভ্যানের চালক। এমনটা সে কোনো দিনও কল্পনা করতে পারেনি।
তবে তার মনে আফসোস একটি রয়ে গেছে। কী সেই আফসোস- এমন প্রশ্নের জবাবে ইমাম বলে, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটা চাকরির কতা (কথা) কতি চাইছিলাম, এ কতাডাই কতি পারিনি।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।