২০ এপ্রিল, ২০২৫ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩২ | ২১ শাওয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  সিবিআইইউ’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে।   ●  গভীর রাতে পাহাড়ের মাটিভর্তি একটি ড্রাম ট্রাক( ডাম্পার) জব্দ করেছে কক্সবাজার বনবিভাগ   ●  অস্ত্র উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিলে জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন এসআই খোকন কান্তি রুদ্র   ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন   ●  প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার   ●  পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি’১৮ ব্যাচের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন   ●  উখিয়া সমাজসেবা কর্মচারীর নামে বিধবা ভাতা’র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ   ●  ‘পটভূমি পরিবর্তনের জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য’ – সরওয়ার জাহান চৌধুরী

প্রবাসীর ঈদ

ঈদের কথা, ঈদের আনন্দের কথা মনে হলে ভীষণ খারাপ লাগে।ত্রিশরোজার শেষে ঈদ।এ ঈদ কতই না আনন্দের ছিলো।সারা বছরই অপেক্ষায় থাকতাম যে ঈদের জন্য, সে ঈদ-ই কেমনজানি নিরানন্দে চলে যায়।প্রবাসে ঈদে আনন্দ যে নেই, তা নয়।দেশে পালন করে আসা ঈদের তুলনায় প্রবাসে ঈদের আনন্দ সামান্যই।আসলে পরিবার-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশি,আত্মীয়স্বজন, পুরানো বন্ধুবান্ধব ছাড়া ঈদআনন্দ জমে না, ঈদ আনন্দময়ী হয়ে উঠেনা।
বলতে গেলে গ্রামের তুলনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম শহরেও তো ঈদ আনন্দ একটু কম।তাই তো যানবাহনের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও মানুষ এত কষ্টে শহর থেকে গ্রামে শেকড়ের দিকে ছুটে।
এই কুয়ালালামপুর শহরও ঢাকা-চট্টগ্রাম শহরের মতো।আর কিছুতে মিল থাকুক না-থাকুক, ঈদে গ্রামে ফেরার দিক দিয়ে কুয়ালালামপুরের সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম শহরের মিল আছে।ঈদের দুতিনদিন আগে থেকে মালয়েশিয়ানরা গ্রামে ছুটে যায়।ঈদে ফাঁকা কুয়ালালামপুর শহর।বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের দখলে থাকে কুয়ালালামপুর শহর।
ইট-পাথরের ইমারতের এ শহরে দেশের মত ঈদআনন্দ খুঁজেও পাওয়া যায় না।বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনের সাথে দেখাসাক্ষাৎ, আড্ডা শেষে বিষণ্ণ মনে ফেলে আসাদিন গুলোর কথা,শৈশবের ঈদ, কৈশোরের ঈদের কথা ভাবতে ভাবতে কোনসময় যে নিজের অজান্তে চোখের কোণে জল ছলছল করে ওঠে।আর কী করার থাকে?
বাড়িতে ফোন করে পরিবার-পরিজনদের সাথে কথা বলে ওদের আনন্দের কথা জেনে নিজেও কিছুটা আনন্দ অনুভব করার চেষ্টা করা।
কোনোকোনো প্রবাসীর তো আবার ঈদের দিনও ডিউটি থাকে।বিশেষ করে যারা শপিংমলে কাজ করে।কুয়ালালামপুর শহরের বড় কোনো শপিংমল ঈদে বন্ধ থাকে না।অনেক প্রবাসী শুধু কোনো মতে ঈদের নামায পড়ে বাসায় এসে ভালোমন্দ কিছু খেয়েই ডিউটিতে যায়।ডিউটির ফাঁকে কোনো এক সময় দেশে ফোন দিয়ে পরিবারের সাথে কথা বলে।”হ্যাঁ, আজ আমাদের ঈদ।দেশে তো ঈদ আগামীকালকে। ঈদের নামায পড়েছি, বাসায় সেমাই রান্না করে খেয়েছি, এখন ডিউটিতে আসছি, দোকান খোলা অন্য লোক নেই, তাই আমার আসতে হলো। তো তোমাদের সবকিছু কেনাকাটা ঠিক মতো হয়ছে তো? দেখো, কোনো কিছু বাদ থাকলে কিনে নাও।” পরিবারের সাথে
এ রকম কথাই বলে প্রবাসীরা।নিজের জন্য কিছু কিনল কী কিনল না, তাতে কিছু আসে যায় না।তবে, দেশে পরিবারের সবাই শপিং করেছে কিনা তারই খবর নেয় বারবার ফোন করে।অধিকাংশ প্রবাসীর ঈদে কেনাকাটার প্রতি আগ্রহই থাকে না।শুধু নামমাত্র কেনাকাটা করা।হাজার হোক ঈদ বলে কথা।
কুয়ালালামপুরে প্রায় ছয় বছর ধরে দেখে আসছি, যারা কন্সট্রাকশনে বা ফ্যাক্টরিতে কাজ করে তারা ঈদের কেনাকাটার চেয়েও ঈদের ছুটিরদিন গুলো উপভোগ করতেই বেশি পছন্দ করে।কুয়ালালামপুর কোতারায়া বাংলামার্কেটে এসে আত্মীয়স্বজন বা পরিচিত বন্ধুদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ, বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে বিরিয়ানি অথবা গরুর মাংস দিয়ে পেটভরে ভাত খাওয়া আর গল্পগুজব করে সময় কাটায়।কেউকেউ দল বেঁধে কোথাও বেড়াতে যায়।আর এখন তো নতুন করে যুক্ত হলো অনলাইন আসক্ত।ছুটিতে যতক্ষণ খুশি অনলাইলে সময় কাটানো যাবে।দেশে ফেলে আসা বন্ধুদের সাথে হায়-হ্যালো যত ইচ্ছে করা যাবে।সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে যাওয়ার তাড়া তো নেই।যেভাবে পারি একটু উপভোগ তো করতেই হয়। ব্যস্ততার প্রবাসজীবনে, কষ্টের প্রবাসজীবনে ‘ছুটি’ বলে কথা।
প্রবাসীরা ঈদে বিশেষ খাবার হিসেবে বাসায়ও বিরিয়ানি, খিছুড়ি, গরুর মাংস রান্না করে।প্রবাসীবন্ধুদের দাওয়াত করে খাওনো, প্রবাসে থাকা আত্মীয়স্বজনদের বাসায়, পরিচিতজনের বাসায় যাওয়া এ সবও আছে প্রবাসীর ঈদে।
প্রবাসীরা চেষ্টা করেন ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে।কিন্তু, প্রবাসের ঈদ কি আর দেশের ঈদের সাথে মিলে? প্রবাসের ঈদের চেয়ে দেশের ঈদআনন্দ
অনেক-অনেক বেশি।তাই-তো প্রবাসীরা বারবার দেশে ফেলে আসা ঈদআনন্দের কথা ভেবে-ভেবে কষ্টবোধ করে মনের গহীনে; আর অশ্রুসিক্ত হয় দু’চোখ।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।