শততম ম্যাচে লঙ্কানদের হারানোর পর ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের জয়টা প্রত্যাশিতই ছিল। ৯০ রানের বড় ব্যবধানে প্রথম ম্যাচটা জিতে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। টাইগারদের দেওয়া ৩২৫ রানের জবাবে ২৩৪ রানে শেষ হয় শ্রীলঙ্কার ইনিংস।
দাম্বুলায় বাংলাদেশের দেওয়া ৩২৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ওভারেই ওপেনার গুনাতিলককে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। গুনাতিলকে অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন তবে রক্ষা পাননি তিনি।
এরপর মাশরাফি ও মেহেদী হাসান মিরাজের বলে কোনোমতেই সুবিধা করতে পারছিল না স্বাগতিকরা। রানের জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেও থারাঙ্গা ও কুশল মেন্ডিসকে আটকে রাখেন এই দুজন।
রানের জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকা কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে দেন মিরাজ। এটি ওয়ানডেতে তাঁর প্রথম উইকেট। মিরাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শুভাগত হোমকে ক্যাচ দেন মেন্ডিস। শ্রীলঙ্কার রান তখন ১৫।
অধিনায়ক থারাঙ্গা উইকেটে থাকলেও কখনই সাবলীল ছিলেন না তিনি। শেষে অধৈর্য হয়ে তাসকিনের বলে মাশরাফিকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান লঙ্কান অধিনায়ক। ২৯ বলে ১৯ রান করেন তিনি। লঙ্কানদের রান তখন মাত্র ৩১!
এরপর গুনারত্নেকে নিয়ে এগোতে থাকেন চান্দিমাল। এই জুটির রানটা যখন ৫৬, সাকিবের বলে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে ক্যাচ দেন গুনারত্নে। আউট হওয়ার আগে ৪০ বলে ২৪ রান করেন গুনারত্নে।
গুনারত্নে ফিরলেও শ্রীলঙ্কাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন দীনেশ চান্দিমাল। বাংলাদেশের বোলারদের সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করে অর্ধশতক পূর্ণ করেন তিনি। তবে বেশিদূর যেতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৫৯ রানে মেহেদী হাসান মিরাজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি।
এরপর বেশ ভালোই খেলছিলেন সিরিবর্ধনে ও পাথিরানা। তবে স্বাগতিকদের ষষ্ঠ ধাক্কাটা দেন মুস্তাফিজুর রহমান। সিরিবর্ধনেকে শুভাগতের ক্যাচে পরিণত করেন কাটার মাস্টার। ২৫ বলে ২২ রান করেন সিরিবর্ধনে।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে আবার লঙ্কান ইনিংসে আঘাত করেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ফিরেই পাথিরানাকে প্যাভিলিয়নমুখী করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৩২ বলে ৩১ রান করেন পাথিরানা।
এরপর সুরঙ্গা লাকমলকে ফিরিয়ে দেন মিরাজ। অপর প্রান্তে একাই লড়াইটা চালিয়ে যান থিসারা পেরেরা। মাত্র ২৮ বলে চারটি চার ও দুটি ছয়ে অর্ধশতক পূর্ণ করেন এই অলরাউন্ডার। তবে ৫৫ রানের বেশি করতে পারেননি। মুস্তাফিজের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহর হাতে ধরা পড়ে শেষ হয় লঙ্কানদের ইনিংস। শেষ পর্যন্ত ৪৫.১ ওভারে ২৩৪ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা।
এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে তামিম ইকবালের ১২৭, সাকিব আল হাসানের ৭২ ও সাব্বির রহমানের ৫৪ রানে ভর করে ৩২৪ রানের বিশাল স্কোর দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি বাংলাদেশের। পঞ্চম ওভারেই বিদায় নেন সৌম্য সরকার। সুরঙ্গা লাকমলের বলে উইকেটরক্ষক দীনেশ চান্দিমালকে ক্যাচ দেন সৌম্য। দলের রান তখন ২৯। ১৩ বলে দুই চারে ১০ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সৌম্য।
সৌম্য আউট হওয়ার পর শ্রীলঙ্কান বোলারদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালান তামিম-সাব্বির। প্রথম ২৪ রান করতে ছয়টি চার হাঁকান সাব্বির। তামিমও খেলেন নিজের নামের প্রতি সুনাম রেখে। আক্রমণাত্মক খেলে ৪৮ বলেই অর্ধশতকে পৌঁছান সাব্বির। তবে এরপরই গুনারত্নের বলে থারাঙ্গাকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান হার্ডহিটার এই ব্যাটসম্যান। ৫৬ বলে ৫৪ রান করেন সাব্বির। তামিম-সাব্বির জুটিতে থেকে আসে ৯৫ রান। পরের ওভারে মুশফিকের উইকেটটি নিয়েছেন লক্ষ্মণ সান্দাকান।
সাব্বির আউট হওয়ার পর সাকিব আল হাসানকে নিয়ে স্কোরের চাকাটা সচল রাখার কাজ করেন তামিম ইকবাল। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৪৪ রান যোগ করেন তামিম-সাকিব। দলীয় ২৬৪ রানে আউট হন সাকিব। ৭১ বলে ৭২ রান করেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
৪৮তম ওভারের শেষ বলে আউট হন তামিম। ১৪২ বলে ১২৭ রান করেন তিনি। ১৫টি চার ও একটি ছক্কা মারেন তামিম।
শেষ পর্যন্ত মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩২৪ রানের বিশাল স্কোর দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।