কারাবন্দি কক্সবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির মুক্তির আন্দোলন জমাতে টাকা ঢালার পাশাপাশি এবার চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে তার স্বজন ও পোষ্যদের বিরুদ্ধে। বদি মুক্তি আন্দোলনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও জেলা নেতাদের সমর্থন আছে বলে প্রচার করে তারা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে কোটি টাকা চাঁদা তোলে। তারা হুমকি দিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আন্দোলনে যেতে বাধ্য করছে। এদিকে বদির সাজার প্রতিবাদে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে মঙ্গলবার আয়োজিত সমাবেশে জেলা নেতাদের উপস্থিতির কথা ফলাও করে প্রচার করা হলেও তারা সেখানে যাননি।
টেকনাফ উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, বদি মুক্তির আন্দোলনে কেন্দ্র ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সমর্থন রয়েছে- এমন প্রচার করে সোমবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় কোটি টাকা চাঁদা তুলে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আলম বাহাদুরের নেতৃত্বে একটি চক্র। সেই সঙ্গে টেকনাফের ইউনিয়নগুলোয় প্রতি ওয়ার্ড থেকে ১০০ জন লোক আনার জন্য স্থানীয় মেম্বারকে ২০ হাজার টাকা ও প্রতিজন নারীর জন্য মাথাপিছু ২০০ টাকা করে বরাদ্দ দেয় তারা। টাকার বিনিময়ে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ খেটে খাওয়া লোকদের মঙ্গলবারের সমাবেশে আনা হয়। চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে আলম বাহাদুর বলেন, এমপি বদির পরিবারে টাকার কমতি নেই। তার অনুসারীরাও বিত্তবান। আর আমি নিজেও ব্যবসায়ী। কারও কাছ থোকে চাঁদা নিয়ে টাকা খরচ করতে হবে কেন? যারা টাকা দিয়েছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবেই দিচ্ছেন।
এদিকে বদির স্বজন ও সমর্থকদের টাকা ঢেলে বদির মুক্তির আন্দোলন চাঙ্গা করার বিষয়ে মঙ্গলবার যুগান্তরে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে বিভিন্ন সময়ে বদির কাছ থেকে সুবিধাভোগী ও অর্থলোভী চক্রটি। আইনশৃংখলা বাহিনীর গোপন নজরদারি এড়াতে অনেকে সমাবেশে আসা থেকে বিরত থাকেন। তাই টেকনাফ স্টেশনে আয়োজিত সমাবেশ স্থলে বিকাল ৩টা পর্যন্ত দলীয় কোনো লোকজনের উপস্থিতি না দেখে বিকল্প পথ বেছে নেয় বদির স্বজন ও পোষ্যরা। টেকনাফ স্টেশন, লামারবাজার, উপরের বাজার, বার্মিজ মার্কেটসহ আশপাশের মার্কেট এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ করিয়ে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সমাবেশে আসতে বাধ্য করে বদির ভাই মুহাম্মদ ফয়সালের নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর, নুরুল ইসলাম, রফিক, মুহাম্মদ করিমসহ একদল যুবক। ভবিষ্যৎ ভোগান্তির কথা চিন্তা করে বিকাল ৩টা থেকে পুরো এলাকার দোকানপাট বন্ধ করে সমাবেশে আসতে বাধ্য হন ব্যবসায়ীরা। যারা সমাবেশে আসেননি তারা দোকান খোলার সাহস পাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, এলাকায় ব্যবসা করতে হলে তাদের (এমপি বদির লোকজনের) কথা শুনতে হবে। এমপি বদি আজ কারাগারে রয়েছেন। কয়েকদিন পর আইনের ফাঁক গলে ঠিকই তিনি ফিরে আসবেন এবং এলাকার রাজত্ব তাদের পরিবার ও স্বজনদের হাতেই থাকবে। তাই ব্যবসায়ীরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও দোকান বন্ধ রেখেছেন। জানা গেছে, পরিবহন শ্রমিক ও রিকশাচালকদেরও নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে সমাবেশে উপস্থিতি নিশ্চিত করে বদির স্বজন ও পোষ্যরা।
জেলা আওয়ামী লীগের কেউ মঙ্গলবারের সমাবেশে না এলেও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এমপি বদির শ্যালক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী তার অনুসারীদের নিয়ে এতে যোগ দেন। বিকাল সাড়ে ৪টায় উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শফিক মিয়া, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইউনুছ বাঙ্গালী, জাফর আলম চৌধুরী প্রমুখ। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা বলেন, আমাদের নাম ব্যবহার করে প্রচারণা চালানো একটি প্রতারণা। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সমাবেশ করা কখনও আইনসিদ্ধ নয়। দলের নাম ভাঙিয়ে স্থানীয়ভাবে কেউ চাঁদাবাজি করে থাকলে তাদের আইনের কাছে সোপর্দ করার আহ্বান জানান তিনি।
সুত্র : যুগান্তর
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।