১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর দিনটি ছিল শুক্রবার। সেই ৬ সেপ্টেম্বরের শুক্রবার ফিরে আসতে লাগলো ২৩ বছর।
ঠিক আজকের মতোই এমনই এক শুক্রবার বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনই নয়, সাধারণ মানুষের মনকেও আকস্মিক এক খবরে হতবাক করে দেয়।
আজকের মতো সেদিনের শুক্রবার সেদিন সকাল সাতটায় বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ছেলে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমনের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। কিন্তু ছেলের দেখা না পেয়ে তিনি ফিরে আসেন।
শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ঢাকার তৎকালীন সিনেমা জগতের সুপারস্টার সালমান শাহ। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী বলেন, বাসার নিচে দারোয়ান সালমান শাহ’র বাবাকে তাঁর ছেলের বাসায় যেতে দিচ্ছিল না।
নীলা চৌধুরীর বর্ণনা ছিল এ রকম, বলেছে স্যার এখনতো উপরে যেতে পারবেন না। কিছু প্রবলেম আছে। আগে ম্যাডামকে (সালমান শাহ’র স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করতে হবে। এক পর্যায়ে উনি (সালমান শাহ’র বাবা) জোর করে উপরে গেছেন।
কলিং বেল দেবার পর দরজা খুললো সামিরা (সালমান শাহ’র স্ত্রী)।
উনি (সালমান শাহ’র বাবা ) সামিরাকে বললেন ইমনের (সালমান শাহ’র ডাক নাম) সাথে কাজ আছে, ইনকাম ট্যাক্সের সই করাতে হবে। ওকে ডাকো। তখন সামিরা বললো, আব্বা ওতো ঘুমে। তখন উনি বললেন, ঠিক আছে আমি বেডরুমে গিয়ে সই করিয়ে আনি। কিন্তু যেতে দেয় নাই। আমার হাজব্যান্ড প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বসে ছিল ওখানে।
বেলা এগারোটার দিকে একটি ফোন আসে সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরীর বাসায়। ঐ টেলিফোনে বলা হলো, সালমান শাহকে দেখতে হলে তখনই যেতে হবে।
টেলিফোন পেয়ে নীলা চৌধুরী দ্রুত ছেলে সালমান শাহ’র বাসার দিকে রওনা হয়েছিলেন। তবে সালমানের ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে ছেলে সালমান শাহকে বিছানার ওপর দেখতে পান নীলা চৌধুরী। ‘খাটের মধ্যে যেদিকে মাথা দেবার কথা সেদিকে পা। আর যেদিকে পা দেবার কথা সেদিকে মাথা। পাশেই সামিরার (সালমান শাহ’র স্ত্রী) এক আত্মীয়ের একটি পার্লার ছিল। সে পার্লারের কিছু মেয়ে ইমনের হাতে-পায়ে সর্ষের তেল দিচ্ছে। আমি তো ভাবছি ফিট হয়ে গেছে। ‘
‘আমি দেখলাম আমার ছেলের হাতে পায়ের নখগুলো নীল। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, আমার ছেলে তো মরে যাচ্ছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন নীলা চৌধুরী। ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে। এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বলা হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে।
সালমান শাহ’র চলে যাওয়ার ২৩ বছর হয়ে গেলে। এই এতো বছর পরেও ভক্তরা ভুলতে পারেন না তাঁকে। আর তার চলে যাওয়ার দিন্টি যেহেতু শুক্রবার সেহেতু মৃত স্মৃতিগুলো আরো বেশিভাবেই উপচে পড়ছে ভক্তদের।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।