২৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি

বাংলাদেশ-হাঙ্গেরি নতুন সম্পর্কের যাত্রা শুরু

1480438478
দীর্ঘদিন পর ফের বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির মধ্যে নতুন সম্পর্কের যাত্রা শুরু হল। দেশটি ১৯৭২ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছিল। এরপর বাংলাদেশে হাঙ্গেরির দূতাবাসও ছিল। সে সময় দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিভিন্ন দ্বার উন্মোচিত হতে থাকলেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর এই সম্পর্ক থমকে যায়। অবশেষে মঙ্গলবার হাঙ্গেরির পার্লামেন্ট স্কয়ারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের মধ্যে প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে সম্পর্কের নতুন দ্বার উন্মোচন হলো। এরপর দুই নেতার উপস্থিতিতে রাজনৈতিক পরামর্শ, পানি ব্যবস্থাপনা ও কৃষি খাতে উভয় দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বুদাপেস্টে শত বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত পার্লামেন্ট স্কয়ারে পৌঁছালে তাকে দেয়া হয় গার্ড অব অনার। সেখানে যন্ত্রে দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। গার্ড রেজিমেন্টের চৌকস দল মার্চ পাস্ট করার সময় দুই প্রধানমন্ত্রী তাদের দেয়া সম্মান গ্রহণ করেন। পরে গার্ড পরিদর্শন করেন। আড়ম্বরপূর্ণ এই গার্ড অব অনার শেষে দুই নেতা কিছুক্ষন একান্ত বৈঠক করেন। এরপর দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে তারা অংশ নেন। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্কে নতুন নতুন দিক নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। আলোচনায় দুই প্রধানমন্ত্রী নতুন সহযোগিতার অন্তত ৫টি দিক নিয়ে কথা বলেন। এগুলো হচ্ছে- পানি ব্যবস্থাপনা, কৃষি উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জলবায়ূ পরিবর্তন ও এসডিজি অর্জনে পানি বিষয়ক তহবিল গঠন।
বৈঠক বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এমনটাই জানালেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, বৈঠকের শুরুতেই শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী। তিনি কেবল হাসিনারই নয়, তার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে তার পুরো পরিবারকেই সাহসী বলে উল্লেখ করেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নেন দুই প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন দুই নেতা। এ সময়ও শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের প্রসংশা করেন ভিক্টর ওরবান। তিনি জানান, বাংলাদেশর উন্নয়ন ও অগ্রগতি আজ বিশ্ব নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ৫ হাজার সেনা পাঠানোর প্রশংসা করেন তিনি। ওরাবান বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে যে সহযোগিতার সম্পর্ক আমরা স্থাপন করতে যাচ্ছি তা নতুন মাত্রা পাবে। জলবায়ূ পরিবর্তনকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসাবে উল্লেখ করে এর মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের ডিজিটাল ইকোনমির অগ্রগতির বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি। বিশেষ করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার যে অবস্থান ও অ্যাকশান তারও প্রশংসা করেন ভিক্টর ওরবান। তিনি বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে হাঙ্গেরি ও বাংলাদেশ উভয়ই একই অবস্থানে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় সম্পর্ক বৃহত্তর আঙ্গিক দেয়ায় ওরবানকে ধন্যবাদ জানান। দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলোর প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্য দিয়ে পানি ব্যবস্থাপনায় হাঙ্গেরির দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান ব্যবহারে বাংলাদেশ সক্ষম হবে। এসময় তিনি আবারও পানি বিষয়ে একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনের কথা বলেন এবং এ লক্ষ্যে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের সমর্থন চান। পানি বিষয়ে একটি বৈশ্বিক ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষেও উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। দুই পক্ষের বৈঠকে সন্ত্রাস, সহিংস মৌলবাদ, অভিবাসন ও শরণার্থী সঙ্কট, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সংক্রান্ত বৈশ্বিক বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে বলে প্রেস স্টেটমেন্টে জানান শেখ হাসিনা। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। হাঙ্গেরির সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে, দ্বি-পাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে দুই দেশের মানুষ উপকৃত হবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। এসময় বাংলাদেশ সফরে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা।
হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ
হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট হানোস আদেরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী চিন্তা বিনিময়ে জোর দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুদাপেস্টে আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনে বক্তব্য রাখার পর সোমবার বিকেলে স্যান্ডার প্যালেসে হাঙ্গেরির রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।
বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহায়তার ধরনের বিষয়ে জানতে চান ইউরোপের এই দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ কী করছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশ কীভাবে মোকাবেলা করছে তা জানতে চান আদেরে। বিভিন্ন গবেষণা ও সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি দুই থেকে আড়াই মিটার বৃদ্ধি পেলে দুই থেকে আড়াই কোটি নাগরিক বাস্তুহারা হবে। জলবায়ু-দুর্গতদের জন্য নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের কাছে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী জানান, আমাদের সমস্যা আমাদের নিজেদেরকে সমাধান করতে হবে। এখান থেকে আন্তর্জাতিক সংস্থা কে কতটুকু করবে, ওই আশায় বসে থাকলে হবে না। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী চিন্তা বিনিময়ে বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির মধ্যে সহযোগিতার কথা বলেছেন, ঋণ বা আর্থিক সহায়তার পরিবর্তে। বাংলাদেশের বন্যা প্রবণ এলাকায় পানি শোধনের বিষয়ে নিজ দেশের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট।
সম্মেলনের সাইডলাইনে মরিশাসের প্রেসিডেন্ট আমিনাহ্ গারিব-ফাকিমের অনুরোধে তার সঙ্গে শেখ হাসিনার পানি সম্মেলন কেন্দ্রে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ফাকিম তার দেশের বিভিন্ন শিল্পে বাংলাদেশি কর্মীদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানান। এছাড়াও দু’দেশে দু’দেশের বিনিয়োগ কীভাবে বাড়াানো যায়, তা নিয়ে দুজনে আলোচনা করেন।
সফরকালে হাঙ্গেরির প্রয়াত জাতীয় নেতা ও বীর শহীদদের প্রতি মঙ্গলবার শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুদাপেস্টের হিরোজ স্কোয়ারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী কসুথ স্কোয়ারে যান। সেখানে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান। সফর শেষে বুধবার দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।