২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক

বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের কার্যালয় স্থাপনের প্রভাব

জাহিদুল করিম কচি:

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এর কার্যালয় স্থাপিত হলে ভবিষ্যতে নানাবিধ পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা সমূহ হলো:

১। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দাতা রাষ্ট্রসমূহের প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এর বিভিন্ন দেশে কার্যালয় স্থাপন করার ক্ষেত্রে দাতা রাষ্ট্রসমূহের এক ধরণের সংশ্লিষ্টতা থাকে এবং পরবর্তীতে সেই সব কার্যালয়ের কার্যক্রমেও দাতা রাষ্ট্রগুলো প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এই সব দাতা রাষ্ট্রগুলো অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। কোন দেশের সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত যদি দাতা রাষ্ট্রসমূহের স্বার্থের সাথে সংগতিপূর্ণ না হয়, সেক্ষেত্রে ঐ দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এর কার্যালয়ের মাধ্যমে মানবাধিকারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে দাতা রাষ্ট্রগুলো সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

২। বিতর্কিত ও সংবেদনশীল বিষয় প্রচার ও প্রসারের সম্ভাবনা: বিভিন্ন দেশে স্থাপিত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এর কার্যালয় থেকে কখনো কখনো সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত নয় এবং যা অনেক সময় সংশ্লিষ্ট দেশের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিবেচনায় সংবেদনশীল এমন কিছু বিতর্কিত মানবাধিকার এজেন্ডা সমাজে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এর কার্যালয় হতে সম্প্রতি World Program for Human Rights Education এর একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরী করা হয়েছে যার মাধ্যমে সমকামীতা কিংবা যৌন শিক্ষার মত বিষয়সমূহ প্রসার করা যাবে। এছাড়াও সমকামী বিবাহ, অভিন্ন পারিবারিক আইন (Uniform Family Code), এবং উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সমতার মত কিছু বিষয় নিয়মিত সামনে চলে আসতে পারে যা ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের সমাজে সংবেদনশীল।

৩। ভবিষ্যতে কূটনৈতিকভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা: এ দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এর কার্যালয় স্থাপিত হলে এবং পরবর্তীতে তাদের কর্মকাণ্ডে সরকারের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হলে, সরকারের তরফ থেকে দেশে পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তাবায়নে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এর কার্যালয় কাজ করছে মর্মে অভিযোগ আনা হতে পারে। চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এর কার্যালয় এর কর্মীদের দেশ থেকে বহিষ্কার করা কিংবা সংবেদনশীল এলাকায় তাদের চলাচল সীমিত করার মত সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যার প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের সাথে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর সম্পর্কে এবং বাংলাদেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তিতে।

৪। আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতিঃ বাংলাদেশের সংবিধানে কোন বিশেষ জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অধিকন্তু সরকারের উপর ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী কিংবা উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানে বিভিন্ন মহলের চাপ রয়েছে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এর কার্যালয় স্থাপিত হলে আদিবাসী হিসবে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়ে সরকারের উপর চাপ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

৫। সমকামীদের অধিকারঃ সমকামীদের অধিকারের মত বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন কিংবা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন মেকানিজম এর পরামর্শের বিপরীতে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মতামত, আকাঙ্ক্ষা, ধর্মীয় অনুভূতি এবং সংবেদনশীলতাকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এর কার্যালয় স্থাপিত হলে এ বিষয়ে সরকারের উপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করা হতে পারে।

৬। শ্রমিকদের অধিকারঃ শ্রম অধিকার সংক্রান্ত বিষয়সমূহের জন্য যদিও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (International Labor Organization) রয়েছে তবুও জাতিসংঘের মানাবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন মেকানিজম এর তরফ থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা সমূহে (Export Processing Zones) শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতার বিষয়টি নিয়মিত সরকারের নিকট উত্থাপন করা হয়।

৭। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সনদে দেওয়া আপত্তি (reservation) প্রত্যাহারে চাপঃ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এর কার্যালয় স্থাপিত হলে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশের দেওয়া বিভিন্ন আপত্তি (reservation) প্রত্যাহারের জন্য সরকারের উপর নিয়মিত ভিত্তিতে চাপ তৈরি করা হতে পারে।

৮। জাতিসংঘের কর্মীদের অবাধ প্রবেশাধিকারঃ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এর কার্যালয় বাংলাদেশে স্থাপিত হলে এতে কর্মরত কর্মীদের পূর্বানুমতি ছাড়াই গ্রেফতার, অন্তরীণ কিংবা জিজ্ঞাসাবাদের স্থানে প্রবেশাধিকার দিতে হতে পারে। এছাড়া পার্বত্য এলাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের চলাচল সীমিত করা সম্ভব নাও হতে পারে।

বর্তমানে বিশ্বের ১৯ টি দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এর কার্যালয় (Country Office) রয়েছে। দেশসমূহ হলঃ বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চাদ, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, গিনি, হন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মেক্সিকো, নাইজার, ফিলিস্তিন, সিরিয়া (বৈরুত ভিত্তিক), সুদান, তিউনেসিয়া, ইয়েমেন, উত্তর কোরিয়া (সিউল ভিত্তিক) এবং ইউক্রেন (মনিটরিং মিশন)।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।