মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সহিংস পরিস্থিতির পর বাংলাদেশের উখিয়া ও টেকনাফের দুটি অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বস্তিতে অন্তত ৩ হাজার ৫শ’ রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তবে এসব পরিবারের মোট কত সদস্য রয়েছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এই সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। দুই অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বস্তির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এই তথ্য জানিয়েছে।
উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ে অবস্থিত রোহিঙ্গা বস্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু সিদ্দিক দাবি করেছেন, গত ১০ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত এই বস্তিতে অনুপ্রবেশকারী দুই হাজার তিনশ’ রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
অপরদিকে টেকনাফ উপজেলার লেদা রোহিঙ্গা বস্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন জানিয়েছেন, এই বস্তিতে গত ২৬ দিনে ১২শ’ রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তিনি জানান, নতুনভাবে যুক্ত হওয়া রোহিঙ্গা পরিবারের তথ্য-উপাত্ত তারা প্রতিদিন সংগ্রহ করে-তা চাহিদা মোতাবেক সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাকে সরবরাহ করছে।
কুতুপালং এলাকার একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, যদি কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে ২৩শ’ রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় নিয়ে থাকে তাহলে ওই পরিবারগুলোর সদস্য সংখ্যা দাঁড়াবে ন্যূনতম
১২ হাজার। এই হিসেবে গত ২৬ দিনে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। একটি সরকারি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে দাবি করা হচ্ছে, বিগত ১০ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা হবে ১০ থেকে ১২ হাজার।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ও উখিয়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে ঠিক। তবে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার প্রকৃত সংখ্যা কত হবে, তা এই মুহূর্তে সঠিকভাবে বলা কঠিন। কারণ সরকারি পর্যায়ে নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোনো জরিপ এখনও শুরু হয়নি। তবে তিনি জানান, যে হারে প্রতিদিন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে তা সম্মিলিতভাবে রোধ করা না গেলে এর নেতিবাচক প্রভাব গোটা দেশের ওপর পড়বে।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান সরকারি কোনো সংস্থা ও প্রশাসনের কাছে নেই। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কক্সবাজারের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সানজুক্তা সাহানি বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে সহিংসতার ঘটনায় সম্প্রতি ২১ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন প্রশ্ন তুলেছে। আইওএম এই বক্তব্যের বিষয়ে গতকাল বিকেলে কক্সবাজার জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি উল্টো প্রশ্ন তোলেন—আইওএম কীসের ভিত্তিতে, কীভাবে ২১ হাজার রোহিঙ্গা নতুনভাবে অনুপ্রবেশ করেছে বলে দাবি করছে? তিনি বলেন, এই রকম বক্তব্য প্রদানের আগে আইওএম প্রতিনিধি প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেনি। আগামীকাল (আজ বুধবার) এনজিওগুলোর সঙ্গে জেলা প্রশাসন বৈঠকে বসবে।
যোগাযোগ করা হলে সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এসএম রেজোয়ান হোসাইন বলেন, অতি সম্প্রতি কী পরিমাণ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে সে পরিসংখ্যান তার সংস্থার কাছে নেই। তার সংস্থা মূলত নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করে। নতুনভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থিত দুটি সরকার নিয়ন্ত্রিত নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজরদারি ও তদারকি বাড়ানো হয়েছে। এ দুটি ক্যাম্পে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী একজন রোহিঙ্গাকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ২১ হাজার রোহিঙ্গা নতুনভাবে অনুপ্রবেশ করেছে এই বক্তব্য যারা দিয়েছে তারা বলতে পারবে তারা কীসের ভিত্তিতে কীভাবে এই পরিসংখ্যানটি প্রকাশ করেছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈকত বিশ্বাস বলেন, এ পর্যন্ত কত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পরিসংখ্যান আইওএম করেনি। তবে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা বলছে, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ থেকে ১১ হাজার। জাতিসংঘের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বয় করে এই পরিসংখ্যানটি তৈরি করেছে। আইওএম কক্সবাজার অফিস প্রধান সানযুক্তা সাহানি ২১ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটির ব্যাখ্যা তিনিই দিতে পারবেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে এ বিষয়ে জানা যাবে।
সানযুক্তা সাহানির বক্তব্য জানার জন্য তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হয়। সংযোগ স্থাপিত হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য জানা যায়নি।
নাফ নদী থেকে রোহিঙ্গা নারীর মৃতদেহ উদ্ধার :
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকার স্থলবন্দর সংলগ্ন নাফ নদী হতে এক রোহিঙ্গা নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা এই নারীর মৃতদেহ পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মঙ্গলবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। টেকনাফ থানার উপ-পরিদর্শক মুফিজুর রহমান এ কথা জানান।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।