দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন নয় এমন অবস্থানে অনড় থেকে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি। এতে একাধিক প্রস্তাবনা দেওয়া হবে, এর যে কোনো একটির অধীনে পরবর্তী নির্বাচন করার আহ্বান থাকবে দলটির।
রূপরেখা তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত বিএনপির কয়েক নেতা ও থিঙ্কট্যাংক ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংবিধানের ভেতরে যে বিধান আছে তা মেনে দুটি এবং সংবিধানের বাইরে একটি, মোট তিনটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হবে। এ জন্য সংবিধান পরিবর্তনের আহ্বান জানাতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপও চাইতে পারেন তিনি।
প্রস্তাবগুলো হলো- ১. সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নিয়ে সর্বদলীয় সরকার, ২. স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত যেসব রাজনৈতিক দল সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে তাদের মধ্যে থেকে সর্বদলীয় সরকার এবং ৩. দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য নিরপেক্ষ ও সজ্জন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি নির্দলীয় সরকার। তবে প্রস্তাবনা প্রকাশের আগে তা দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে তোলা হবে। সে সময় এর পরিবর্তনও আসতে পারে।
এদিকে, বিএনপির এই তিন প্রস্তাবকে পাগলের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সেক্ষেত্রে সংবিধান পুরোপুরি মেনে চলা হবে। এর বাইরে কোনো প্রস্তাব দেওয়া আর না দেওয়া একই কথা বলেও জানিয়েছেন তারা।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) ফারুক খান টেলিফোনে পূর্বপশ্চিমকে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসাবে বিএনপির প্রতি আমাদের যথেষ্ট সম্মান রয়েছে। দলটি আগামী নির্বাচনে বাধ্য হয়েই অংশগ্রহণ করবে। দলের নিবন্ধন বাঁচাতে বিএনপি নির্বাচনে যেকোনো মূল্যেই আসতে চায়। এর বাইরে তাদের কোনো উপায় নেই। এদিকে, তারা যে তিনটি প্রস্তাব সহায়ক সরকারের নামে দিতে চাচ্ছেন সেগুলোর কোনো গুরুত্ব বর্তমান সরকারের কাছে নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই সংবিধান মেনে আগামী একাদশ নির্বাচন হবে, সেটার কোনো বিকল্প নেই।
বিএনপির ৩টি প্রস্তাব নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ পূর্বপশ্চিমকে বলেন, দলটির সামনে কোনো রাস্তা খোলা নেই। তারা মুখে এক কথা বলে, অন্তরে অন্তরে ষড়যন্ত্র করে। এইসব ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই এমন সব প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে। অন্তঃসারশূন্য এসব প্রস্তাবের কোনো মূল্য নেই আমাদের কাছে। পাগলের প্রলাপ শোনারও সময় নেই আওয়ামী লীগের। দেশকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনার অধীনেই সংবিধান মেনে আগামী নির্বাচন হবে বলেও নিশ্চিত করেন হানিফ।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, বিএনপি সাংগঠনিক স্বার্থেই বর্তমান সংবিধানের আওতায় আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। আমরাও চাই দলটি নির্বাচনে আসুক। একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন হোক।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের জবাবে হানিফ বলেন, দর কষাকষির জন্য খালেদা জিয়া এ অনড় অবস্থান দেখাচ্ছেন। আসলে তিনি ও তার দল নির্বাচনে যাবে। তারা প্রস্তুতিও নিচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে দর কষাকষিতে আওয়ামী লীগ যাবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সংবিধান নিয়ে দর কষাকষির কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের উচিত সংবিধানকে সমুন্নত রেখে কাজ করা।
সূত্র- পূর্বপশ্চিম
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।