সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিতে ভাঙ্গন সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির ভাঙ্গা অংশের সমর্থিত প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচনও করতে চায় সরকার।
কামরুল হাসান নাসিম নামের এক ব্যক্তির ‘আসল’ বিএনপি কিংবা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিএনএ’র পর নতুন করে আবারও বিএনপিতে ভাঙ্গন সৃষ্টিতে সরকারের বিরুদ্ধে ইন্ধন দেওয়ার এ অভিযোগ উঠেছে।
আর এ অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার লালবাগে এক জনসভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘খালেদা জিয়া আপনি যদি এইভাবে চলেন, তাহলে আপনি আপনার দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন। আপনার নেতাকর্মীরা আর বিএনপিতে থাকবে না। তারা বিকল্প রাস্তা খুঁজবে। খুঁজতে শুরু করেছে। আপনি আপনার পতনধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন কি না জানি না। আপনার দলে ভাঙ্গন অতি শীঘ্রই শুরু হবে। সেটা শোনার জন্য কান পেতে থাকুন।’
শুধু ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপিতে ভাঙ্গন সৃষ্টির অভিযোগ নয়, সরকারে থাকা জাতীয় পার্টিকে দিয়েও বিএনপির নেতাদের জাতীয় পার্টিতে ভেড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের দাবি, বিএনপি নেতারাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
জাতীয় পার্টির একজন শীর্ষনেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘স্যারের (এরশাদ) সঙ্গে তো অনেকেরই কথা হয়। এগুলো আবার স্যার আমাদের বলেন। দেখা যাক সামনে কি হয়। যদি নতুন আরেকটি নির্বাচন হয় তাহলে মনে হয় না খালেদা জিয়া সেই নির্বাচনে অংশ নিবেন। সেক্ষেত্রে অনেক কিছুই হতে পারে। একটু অপেক্ষা করুন। এতো তাড়াহুড়ো করার কি আছে।’
এদিকে মঙ্গলবার কলাবাগান থানার শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর হাতে ফুল দিয়ে দলটিতে যোগ দিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টিই হচ্ছে এদেশের জাতীয়তাবাদী দলের একমাত্র ঠিকানা। বিএনপির প্রতি অনেকেই ক্ষুব্ধ। কেউ যদি আমাদের দলে আসে সেক্ষেত্রে আমাদের দরজা খোলা আছে।’
তবে সরকারের সহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেন জাতীয় পার্টির এ মহাসচিব।
বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সম্প্রতি ২৯টি সংগঠনের সমন্বয়ে জাতীয় জোট— বিএনএ গঠন করে নিজেদের জিয়াউর রহমানের অনুসারী দাবি করেছেন। এমনকি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার চলমান কর্মসূচির কঠোর সমালোচনা করে সারাদেশে ব্যাপক পোস্টার সাঁটিয়েছে বিএনএ।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সরকারের সহায়তাতেই এমন জোট গঠন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ‘আসল বিএনপি’ নামের একটি সংগঠনের নেতা কামরুল হাসান নাসিমও সম্প্রতি নিজেকে জিয়াউর রহমানের অনুসারী দাবি করেছেন।
তাহলে কি আবারও ভাঙছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলমের বক্তব্যের পর সারা দেশের মানুষের মধ্যে এমন আলোচনা এখন মুখে মুখে।
সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপির সাবেক কিছু সংস্কারপন্থী নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অনেক নেতা আবার নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন। এদের দিয়েই মূলত সরকার আরেকটি বিএনপি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
সূত্রের দাবি, সরকার নানামুখী কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকার কোনো কিছুতেই তাড়াহুড়ো করতে চাচ্ছে না। বিএনপি দলীয় সাবেক দুই সংসদ সদস্য শহীদুল হক জামাল ও আবু হেনাকে সামনে রেখে সরকার নতুন করে বিএনপির ভাঙ্গন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চায়। একই সঙ্গে আলোচিত এ দুই নেতাকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিয়ে নির্বাচনের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতাও প্রমাণ করাতে চায়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রভাবশালী মহল ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকেও কাজে লাগাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণ থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করার বিষয়ে কামরুল হাসান নাসিমের ‘আসল বিএনপি’র পক্ষ থেকে মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আব্দুস সালামকে প্রার্থী ভাবা হচ্ছে। যদিও সালাম এ ধরনের চিন্তা-ভাবনাকে ‘পাগলের প্রলাপ ও একজন টোকাইয়ের সঙ্গে’ কোনো প্রকার যোগাযোগ হয়নি বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব আব্দুস সালাম দ্য রিপোর্টকে বলেন,‘ কামরুল ইসলাম নাসিম পাগল। তার মতো টোকাইয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের প্রশ্নই আসে না।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘গাছে যখন ফুল ধরবে তখন সবাই দেখবে। এখন তো মুকুল। মুকুল নিয়ে গবেষণা করার কি দরকার। বিএনপিতে কি হবে না হবে সেটা তো আর আমাদের দেখার বিষয় না। তবে ফুল ধরলে আপনারা জানতে পারবেন।’
বিএনপি ভাঙ্গার সরকারি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে.(অব.) মাহবুবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘অতীতেও বিএনপিকে ভাঙ্গার ও ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য অনেকেই অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু তারা সফল হয়নি। বর্তমানেও হয়তো এ ধরনের ষড়যন্ত্র হতে পারে, কিন্তু বিএনপি ভাঙ্গার কোনো উদ্যোগ আগের মতোই সফল হবে না।’
‘সরকারি প্রযোজনায় বিএনপি ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র’ কোনো দিনই সফল হবে না দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ জিয়ার নিজ হাতে গড়া দল। বিএনপি ভাঙ্গার চেষ্টা ষড়যন্ত্রকারীরা অতীতেও করেছে। এবারও বর্তমান অবৈধ সরকার নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নতুন ষড়যন্ত্র করতে পারে। তবে বিএনপি ভাঙ্গার কোনো ষড়যন্ত্রই কোনোদিন সফল হবে না।’
সূত্র-দ্য রিপোর্ট
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।