২৭ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

বিদেশি ত্রাণ কক্সবাজার পৌঁছে দিচ্ছে সেনাবাহিনী, বণ্টনে থাকছে না জনপ্রতিনিধি

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে আরাকান থেকে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরাতে চায় সরকার। তাই দেশের বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ত্রাণ সামগ্রী সুষ্ঠুভাবে গ্রহণ এবং তা ঠিকমতো জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী কাজ শুরু করেছে বলেও জানা গেছে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল রাশিদুল হাসান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ত্রাণ সামগ্রী সেনাবাহিনী গ্রহণ করবে এবং তা যথাযথভাবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ভাণ্ডারে পৌঁছে দেবে। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী সে কাজ শুরু করেছে।’

এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদকে বিষয়টি অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গা শিবিরে আগে থেকে ৪০ হাজার রোহিঙ্গার মাঝে যে পদ্ধতিতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে এখনও সেই পদ্ধতিতেই ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে এর পরিধি বেড়েছে মাত্র। এ ক্ষেত্রে ইউএসএইচসিআর, আইএনওসহ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো যৌথভাবে জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করছে, বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়ে তৎপর রয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বণ্টনের সঙ্গে স্থানীয় কোনও জনপ্রতিনিধিদের অন্তর্ভূক্ত না করার সিদ্ধান্তও রয়েছে সরকারের।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বলছে, ত্রাণ বিতরণে কোনও জটিলতা নেই। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো শুরু থেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে সব ধরণের ত্রাণ বিতরণ করছে। তবে প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা যুক্ত হচ্ছে ক্যাম্পে। সেই ক্ষেত্রে যে জটিলতা সৃষ্টি আগে হয়েছিলো এখন তা আর হচ্ছে না। তবে যখনই কোনও ব্যাক্তি, সংগঠন বা সংস্থা জেলা প্রশাসনকে অবহিত না করে সেখানে ত্রাণ বিতরণ করতে গেছে সেখানেই সমস্যা হচ্ছে। সেখানেই জটিলতা বাড়ছে। আর এতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ।
নির্ধারিত ক্যাম্পের বাইরে কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফসহ আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নির্দিষ্ট ক্যাম্পে একত্রিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। ক্যাম্পের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে পুনর্বাসন ও ত্রাণ বিতরণ উভয় কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি হয়। আর সে কারণেই রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরাতে তৎপর রয়েছে সরকার।

জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ইতিমধ্যেই দেশি-বিদেশি সংস্থা ছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের কাছে ত্রাণ পাঠিয়েছে ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, ভারত, মালয়েশিয়া, আজারবাইজান। এসব ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে খাবার, শিশুখাদ্য, ওষুধ, তাবু, কাপড় ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের বিষয়টি পুরোপুরি তদারকি করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এছাড়া ক্যাম্পের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গা পরিবারদের জন্য অস্থায়ী ঘর তৈরি করছে নৌবাহিনী।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সব নাগরিক, সংগঠন, ও সংস্থার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, কেউ যেনও বিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ বিতরণ না করে। সবাইকে জেলা প্রশাসকের ত্রাণ ভাণ্ডারে ত্রাণ সামগ্রী জমা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ত্রাণ বিতরণ করা হলে তা সমানভাবে সবাই তা পাবেন। অন্যথায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। এতে কেউ পাবেন আবার কেউ পাবেন না।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণের স্বার্থে জেলা ত্রাণ বিতরণ মনিটরিং করার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। সেখানেই আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হয় কোন কোন এলাকায় ত্রাণ পাঠানো হয়েছে, কি হয় হয়নি। আর সেভাবই কাজ করছে সবাই।’

জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল জানান, সুষ্ঠুভাবে ত্রণ বিতরণে সমন্বয় খুব জরুরি। এ জন্যই আমরা সক কাজ জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে করার কথা বলেছি। যদিও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য এখন পর্যন্ত বেসরকারি ত্রাণের তেমন প্রয়োজন নাই। সব কিছুই সরকার ব্যবস্থা করছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো সহায়তা করছে। তারপরও বাঙালি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ জাতি। তাই তারা মানুষের এই দুঃখ-কষ্টের সময় এগিয়ে আসতে চায় যার যা আছে তাই নিয়ে। আমরাও সাধারণ মানুষের আবেগকে শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু তা যদি সুশৃঙ্খল না হয় তাহলে সরকারের এই বিশাল মানবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হবে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।