আজ বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস। প্রতিবছর ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছেই। শিশুদের সাধারণত ব্লাড ক্যান্সার বেশি হচ্ছে। তবে নসিকাগ্রন্থি, কিডনি এবং চোখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া শিশুর সংখ্যাও কম নয়। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বেশির ভাগ শিশুর ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য। শনাক্ত করা গেলে ও উন্নত চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ রোগী সেরে ওঠেন। কিন্তু মাত্র ২০ শতাংশ রোগী উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পান।
ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যান্সারের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর ২ লাখ শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর এর মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেই আক্রান্ত হয় শতকরা ৮০ ভাগ। এখানে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের বেঁচে থাকার হার মাত্র ৫ ভাগ। অন্যদিকে, উন্নত দেশগুলোয় এই হার শতকরা ৮০ ভাগ।
সংস্থাটির তথ্য মতে, বর্তমানে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৩ থেকে ১৫ লাখ ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু রয়েছে। ২০০৫ সালেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর সচেতন না হলে ২০৩০ সালে এ হার দাঁড়াবে ১৩ শতাংশে।
ক্যান্সার আক্রান্ত দেড় বছরের শিশুকন্যা হাফছাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু অনকোলজি বিভাগের রেড ইউনিটে রয়েছেন নোয়াখালীর আকলিমা আক্তার। গত ১২ দিন ধরে তিনি মেয়েকে নিয়ে এখানে রয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাফছার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। প্রথমে কুমিল্লাতে চিকিৎসা করায় ডিসেম্বরে সুস্থ হয়ে ওঠে হাফছা। তবে গত জানুয়ারিতে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ে হাফছা।
আড়াই বছরের শুক্লাকে নিয়ে বাবা মজিদ আলী এবং মা মনোয়ার পারভীন একই বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। মনোয়ারা পারভীন তিনতলায় অবস্থিত অনকোলজি বিভাগের সামনে ফ্লোরে মেয়েকে কোলে বসিয়ে চোখের পানি মুছছিলেন। আবার বাবা মজিদ আলী বলেন, ‘চিকিৎসকরা বলছে মেয়ের পেটে টিউমারে ক্যান্সার হয়েছে। আজ এখানে এলাম, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ না থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জেনিটিক্যাল কারণ, ভাইরাস, খাবারে টক্সিনের উপস্থিতি, ক্যামিকেলস, পরিবেশগত সমস্যায় শিশুদের ক্যান্সার হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে প্রাথমিকভাবে এ রোগ শনাক্ত করা গেলে বেশিরভাগ শিশুরই ভালো হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। শিশুদের ক্যান্সার মোকাবিলায় সবার আগে সচেতনতা বাড়াতে হবে।’
জানতে চাইলে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ও অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. মমতাজ বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিবছরই ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। তাই শিশুদের সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার যেমন পালং শাক, ব্রুকলি, ডিমের কুসুম, মটরশুটি, কলিজা, মুরগীর মাংস, কচুশাক, কলা, মিষ্টিআলু, কমলা, শালগম, দুধ, বাঁধাকপি, বরবটি, কাঠবাদাম মতো ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।’
একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাশেদ জাহাঙ্গীর কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মূলত জেনেটিক কারণেই শিশুরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। মায়ের পেটে ভ্রুন অবস্থায় শিশুরা ক্যান্সার হবে এ ধরণের জিন নিয়ে তৈরি হয়। পরবর্তীকালে সেটা প্রকট আকার ধারণ করে। তবে আশার কথা হচ্ছে, শিশুদের বেশিরভাগ ক্যান্সারই নিরাময় হয় যদি সময়মতো, সঠিক উপায় বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা হয়, তাহলে তারা সুস্থ হয়ে ওঠে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানে নসিকাগ্রন্থি নামের যে ক্যান্সার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে সেটিও ভালো হয়। তারপরই রয়েছে চোখের ক্যান্সার। যদি প্রাথমিক অবস্থায় এটা ধরা পরে এবং চিকিৎসা করানো যায় তাহলে চোখ ফেলে দিতে হলেও তিনি সুস্থ হয়ে যান। কেবলমাত্র যদি হাড়ের ক্যান্সারে কোনও শিশু আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রে তার সুস্থ হবার সম্ভাবনা একটু কম থাকে, কারণ হাড়ের ক্যান্সার ছড়িয়ে যায় খুব দ্রুত।’
বড়দের যেসব ক্যান্সার হয় সেসব ক্যান্সার শিশুদের হয়না বলে জানিয়ে রাশেদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন ক্যান্সারের চিকিৎসা পর্যাপ্ত রয়েছে। তাই শিশুদের ক্যান্সার হলে পরিবারকে ভেঙ্গে না পরে দ্রুত তার চিকিৎসা করাতে হবে সঠিক উপায়ে, তাহলেই তাকে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।