বিশেষ প্রতিবেদকঃ হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অ্যাঞ্জিলিনা জোলি বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত জাতিগোষ্টির মধ্যে রোহিঙ্গারা অন্যতম। তাই তাদের নাগরিকত্বসহ সব অধিকার দিয়ে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া উচিত। এজন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।
মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ৫নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় অ্যাঞ্জিলিনা জোলি এসব কথা বলেন।
জোলি বলেছেন, ‘আমি দুইদিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গা ঘুরেছি। রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে আমি উপলব্দি করতে পেরেছি যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের উপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে। আমি এক রোহিঙ্গা নারীকে প্রশ্ন করেছিলাম, তাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবে কিনা? উত্তরে তিনি আমাকে জানিয়েছেন- তাকে গুলি করে মেরে ফেললেও মিয়ানমারে ফিরে যাবে না। কাজেই বুঝা যায় মিয়ানমারের রাখাইনে এখনও নিরাপদ পরিবেশ তৈরী হয়নি। তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়ানো উচিত’।
তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দিকে হাত দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘দেখুন আমরা সবাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থান করছি। এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এবং তাদের সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এজন্য আমি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি’।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুতুপালং এক্সটেনশন-৪ ক্যাম্পে পৌছেন অ্যাঞ্জিলিনা জোলি। সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য গড়ে উঠা শিক্ষা কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেন এবং রোহিঙ্গা শিশুদের করমর্দন করেন। এছাড়াও উপস্থিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে উখিয়ার কুতুপালং ৩নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রিলিফ ইন্টান্যাশনাল পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। একই ক্যাম্পে নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারীদের সাথে কথা বলেন এবং দুর্দশার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন। পরে দুপুরে কুতুপালং ৪নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হোপ ফাউন্ডেশন পরিচালিত হাসপাতাল পরিদর্শন করে চিকিৎসাধীন রোহিঙ্গা নারীদের সাথে কথা বলেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরগুলোতে এখন দিন কাটছে তাদের। এসব রোহিঙ্গা নারীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার বর্ণনা শুনে ঢাকায় আসার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জিলিনা জোলি। সে সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, জোলি যৌন নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের দেখতে বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু সে সময়ে দেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন কারণে এর আগে অন্তত চারবার অ্যাঞ্জেলিনা জোলির বাংলাদেশ সফর বাতিল করা হয়।
গত বছরের ২১ মে জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন বলিউড অভিনেত্রী, সাবেক বিশ্বসুন্দরী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। তিনি টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর মনখালী ব্রিজের পাশে অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরের শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ‘ইউএনএইচসিআর’র বিশেষ দূত হিসেবে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করছেন। পাঁচ দিনের বাংলাদেশ সফরে তার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।