মিয়ানমার উপকূলে উদ্ধার ২০৮ জনের মধ্যে দেড়শজনকে বাংলাদেশি হিসাবে শনাক্ত করে দেশে ফেরানোর পর তাদের মধ্যেও দুজন রোহিঙ্গা পাওয়া গেছে।
এদের মধ্যে এক রোহিঙ্গাসহ দুইজনকে মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখিয়ে এবং আরও দুই দণ্ডিত অপরাধীকে কক্সবাজার সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাকি ১৪৬ জনের বিষয়ে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ জানান।
কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি দেওয়ান আবুল হোসেন জানান, মিয়ানমার থেকে সোমবার দেশে ফিরিয়ে আনা ১৫০ জনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার পর রাতে তাদের কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রেখে ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
“পরে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত পুলিশ তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় দুইজনকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা হিসাবে শনাক্ত করা হয়।”
এরা হলেন উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের এফ-ব্লকের ১৫ নম্বর শেডের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা হামিদ হোসেন (২৬) ও একই এলাকার অনিবন্ধিত ক্যাম্পের মোহাম্মদ ইদ্রিস (১৯)।এদের মধ্যে হামিদ হোসেন সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারে জড়িত বলে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে। যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার মাঝি আলী এলাকার উজ্জ্বল হোসেন (২৩) নামের আরেকজনকে মানবপাচার মামলার আসামি হিসাবে শনাক্ত করা হয়।
এছাড়া রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার হাবাশপুর এলাকার শফিকুল ইসলাম (৩৬) ও কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার ধুরুং ইউনিয়নের উত্তর নাথ পাড়ার সাদ্দাম হোসেন (২৫) দুটি মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানতে পারেন।
এই চারজনকে মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার সদর থানায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় বলে উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ আহমদ জানান।
গত ২১ মে সাগরে ভাসমান পাচারকারীদের একটি নৌকা থেকে ২০৮ জনকে উদ্ধার করে মিয়ানমারের নৌবাহিনী। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে তাদের মধ্যে ১৫০ জনকে বাংলাদেশি হিসাবে শনাক্ত করার পর সোমবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে বিজিবি তাদের দেশে ফিরিয়ে আনে।
দেশে আনার পর বিজিবি ওই ১৫০ জনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নিয়ে ইমিগ্রেশন ও জিজ্ঞাসাবাদের পর সেখানেই ১৪৬ জনকে রাখা হলেও তাদের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে তাদের মানবিক সাহায্য দিচ্ছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।
সংস্থার ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার আসিফ মুনীর জানান, ফেরত আনাদের খাদ্য, চিকিৎসাসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সরকার তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো পর্যন্ত এই সহায়তা দেওয়া হবে।
সোমবার তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দীর্ঘদিন তারা সমুদ্রে ছিল। আমাদের ধারণা, প্রায় দুই মাস। স্বজনদের কাছে ফিরতে তারা উদগ্রীব।”
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ জানান, বুধবার জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই ১৪৬ জনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এই ১৪৬ জনের মধ্যে কক্সবাজারসহ ১৭টি জেলার বাসিন্দা রয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ৫৬ জন নরসিংদীর বাসিন্দা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।