২৮ নভেম্বর, ২০২৪ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  যারা ক্লাসে ৭০% উপস্থিত থাকবে না তাদের পরিক্ষায় অংশগ্রহন করতে দেওয়া হবে না- শাহাজাহান চৌধুরী   ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান

আটক ডিবির সাত পুলিশ কারাগারে

ব্যবসায়ীকে জিম্মিকরে ১৭ লাখ টাকা আদায়ের ঘটনায় মামলা: তদন্ত কমিটি গঠন

বিশেষ প্রতিবেদকঃ ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে ১৭ লাখ টাকা আদায়ের ঘটনায় টেকনাফ মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় কক্সবাজার ডিবি পুলিশের সাত সদস্যকে বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। বুধবার রাতেই পুলিশের এই সাত সদস্যের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা করেন ঘটনার শিকার ব্যবসায়ী আবদুল গফুর। মামলা দায়েরের পর ডিবির সাত সদস্যকে বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের অতিরিক্ত চীফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। তারা নিজেদের নির্দেষ দাবি করে জামিনের আবেদন জানান। অতিরিক্ত চীফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এরপরই বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের কক্সবাজার জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা দেড়টার দিকে তাদের বহনকরা গাড়িটি কারাগারে পৌছে বলে জানান জেলা কারাগারের জেলার শাহাদত হোসেন।
ডেপুটি জেলার অর্পন জানান, অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে আনা পুলিশের সদস্যরা হলেন, বি-বাড়িয়ার কসবা এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে এসআই মনিরুজ্জামান (৩৫), কুমিল্লার বুড়িচং এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে এসআই আবুল কালাম আজাদ (৩৯), বি-বাড়িয়ার কসবা এলাকার আবদুল মালেকের ছেলে এএসআই গোলাম মোস্তফা (৩৬), লক্ষিপুরের রামগতি এলাকার আবুল খায়েরের ছেলে এএসআই ফিরোজ আহমদ (৩৪), কুমিল্লার বুড়িচং এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে এএসআই আলা উদ্দিন (৩২) এবং বি-বাড়িয়ার কসবা সিমড়া এলাকার কফিল উদ্দিনের ছেলে কনস্টেবল (কনং-১৪৪৫) মোস্তফা আজল (৫২) ও চাঁদপুরের মতলব মান্দারতলীর আশরাফ সরকারের ছেলে কনস্টেবল (কনং-৯০২) মো. আল আমিন (২৬)।
বুধবার ভোররাতে টেকনাফের কম্বল ব্যবসায়ী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের করা ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকাভূক্ত আবদুল গফুরকে জিম্মি থেকে মুক্তি দেয়ার বিনিময়ে পাওয়া ১৭ লাখ টাকাসহ ফেরার পথে সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন ডিবির এই সাত সদস্য। টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়ক থেকে মাইক্রোবাসসহ তাদেরকে ধরা হয়।
সেনাবাহিনীর তল্লাশির সময় জিম্মি করে টাকা আদায়কারিদের মাঝে এসআই মনিরুজ্জামান গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে পালিয়ে যান। সেনা সদস্যরা গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মুক্তিপণের ১৭ লাখ টাকাসহ বাকিদের আটক করেন। সবাই সাময়িক বরখাস্ত করার পর পলাতক মনিরুজ্জামান রাতে পুলিশ অফিসে হাজির হন।
এদিকে, এঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুলকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উখিয়া-টেকনাফ সার্কেল’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা, এএসপি (ডিএসবি) আবদুস সহিদ, চকরিয়া-পেকুয়া সার্কেলের এএসপি কাজী মো. মতিউল ইসলাম ও ওসি টেকনাফ মাইন উদ্দিন খান।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গুটি কয়েক পুলিশ সদস্যের অপকর্মের জন্য পুরো বাহিনীর বদনাম হচ্ছে। টেকনাফে সেনাবাহিনীর হাতে আটকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়ায় তাদের কক্সবাজারে কারাগারে পাঠানো হয়। গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার বিস্তারিত তুলে আনতে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, টেকনাফে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় স্থাপিত সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের প্রধান মেজর নাজিম আহমদ ডিবির সাত সদস্যকে আটকের বর্ণনা দিয়ে বলেন, টেকনাফের মধ্যজালিয়া পাড়ার মৃত হোসেন আহমদের ছেলে আবদুল গফুরেরর স্বজনরা অভিযোগ করেছিলেন- মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার শহর থেকে কিছু লোক গফুরকে ধরে নিয়ে কোটি টাকা দাবি করেছে। পরে দেন দরবারে ১৭ লাখ টাকায় এসে তাকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে তারা। বুধবার ভোরে ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে গফুরকে একটি মাইক্রবাসে করে টেকনাফে নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। মাইক্রোবাসটি মেরিনড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারে চলে যাচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভের সেনা চেকপোস্টে মাইক্রোবাসটি থামানো হয়। সেনাবাহিনী মাইক্রোবাসটি তল্লাশি করতে চাইলে যাত্রীরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়। এসময় সেনা সদস্যরা গাড়ি তল্লাশি করতে চাইলে এক ব্যক্তি গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে পালিয়ে যায়। পরে গাড়ি তল্লাশি করে হলুদ রংয়ের কাপড়ের প্যাকেট থেকে ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরো জানান, খবর দেয়ার পর কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল ক্যাম্পে এসে আটকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের নিয়ে যান।
আবদুল গফুরের ভাই টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা সমাজকর্মী ও ভোটের রাজনীতি করি বলে সব ভাইদের নাম ইয়াবার তালিকায় রয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই। কারণ, কেউ আমার নাম ইয়াবার তালিকায় দিলেই আমি ইয়াবা ব্যবসায়ী হয়ে যাব এমনটি হতে পারে না। আমার এবং অন্যান্য ভাইদের ব্যাপারে প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে। আমার ভাই গফুরকে যখন পুলিশ ধরে ফোন করে তখন আমি তাদের বলেছিলাম তার বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ থাকলে থানায় চালান দিয়ে কারাগারে পাঠানো হউক। কিন্তু তারা সেটা না করে তাকে ক্রস ফায়ারের হুমকি দিয়ে আমাদের শুনিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করেছে। সেনাবাহিনী এগিয়ে না আসলে হয়তো ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে আজকে জানাজার মাঠে থাকতে হতো।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।