ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২২০ রানে অল আউট। ইংল্যান্ড ৩ উইকেটে ৫০। ইংলিশরা ৭ উইকেট হাতে রেখে পিছিয়ে ১৭০ রানে। এই টুকু পড়ে যদি ভেবে থাকেন ভালোই তো, তাহলে নিশ্চিত ভাবেই শুক্রবার মিরপুরের খেলায় একবারের জন্যও চোখ রাখা হয়নি আপনার! ১ উইকেটে ১৭১ রান থেকে যে ২২০ রানে অল আউট স্বাগতিকরা!
৪৯ রানে ৯ উইকেট! বিষম ধাক্কা খাওয়ার মতো ব্যাপার। ওখানে আবার ইংল্যান্ডের যম তামিম ইকবালের ১০৪। মুমিনুল হকের ৬৬। বাকিরা কি করলেন! যাওয়া আসার মিছিল ছাড়া আর কি। তাও ভালো দিনের শেষে ১২.৩ ওভারে দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ চেপে ধরলেন প্রতিপক্ষকে। মেহদীর ২ উইকেট। সাকিবের ১টি। বেন ডাকেট (৭), অ্যালিস্টার কুক (১৪), গ্যারি ব্যালান্স (৯) নেই। চাপে ইংলিশরাও। দ্বিতীয় দিন শুরু হবে জো রুট (১৫) ও মঈন আলির (২) ব্যাটিংয়ে।
ক্যারিয়ার মাইলস্টোন ৫০তম টেস্টে দারুণ এক টস জিতলেন মুশফিকুর রহিম। যদিও তৃতীয় ওভারে বাজে ভাবে ইমরুল কায়েস উইকেট বিলিয়ে আসলেন। ইমরুল ও বাংলাদেশের রান তখন ১। কিন্তু এরপর তামিম আর মুমিনুলের ব্যাটে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের সকালটা হেসে ওঠে। কি চমৎকার ব্যাটিং! কি দারুণ জুটি। শুরুতে মিরপুরের উইকেট ব্যাটসম্যানদের তা স্পষ্ট ফুটে ওঠে তাদের ব্যাটিংয়ে।
১ উইকেটে ১ রান থেকে ১ উইকেটেই ১১৮ রান। লাঞ্চে গিয়ে খাবারটা নিশ্চয়ই খুব উপভোগ করেছেন তামিম ও মুমিনুল। ইংলিশদের মাঝে অস্বস্তি। এই জুটি আর কতোটা ভোগাবে? সিরিজে বাংলাদেশের প্রথম শত রানের জুটি থামে না। লাঞ্চে তামিমের ছিল ৬৮। মুমিনুলের ৪৪। বিরতির পর তাদের জুটি আরো জমাট বাধে।
ওই লাঞ্চের মিনিট পনের আগেই আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা তামিমকে তার ৪৭ রানের সময় আউট দিয়ে দিয়েছিলেন। রিভিউতে আবার লজ্জা পেলেন ধর্মসেনা। মুমিনুলের ফিফটি হয়। চট্টগ্রামের ৭৮ রানকে পেরিয়ে ৯০ এ পা রাখেন তামিম। স্পিনার-পেসারদের সমান শাসন করা তামিম নার্ভাস নাইন্টিজকে সময় দেন না। ৭ বলের মধ্যে ৯০ থেকে তিন অংকে। মঈন আলিকে টানা দুই বাউন্ডারি মেরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় সেঞ্চুরিটা তুলে নেন। ১৩৯ বলে ১২ বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি। যেটি তার ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি।
দুই বাঁ হাতির জুটিটা ৩৮.৫ ওভারে ৪.৩৭ গড়ে ১৭০ রানের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। মঈন আগের ওভারে দুই বাউন্ডারির শিকার হওয়ার পরের ওভারে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তামিমকে। তামিম রিভিউ নেন। ধর্মসেনার এবার সিদ্ধান্ত বদলাতে হয় না। ১০৪ রানে ফেরেন তামিম।
বাংলাদেশ বড় একটি সংগ্রহ পাচ্ছে এমনটা খুব কল্পনা করা যায় তখনো। কিন্তু যা কল্পনা করা যায়নি তাই ঘটে এরপর। তামিম যেন সাথে করে ড্রেসিং রুমে বাংলাদেশের ভাগ্যটাকেও নিয়ে গেলেন। তাকেই একের পর এক অনুসরণ করে চলেন পরের ব্যাটসম্যানরা। যাকে বলে নিদারুণ পতন। তাসের ঘরের মতো ধুলোয় লুটোয় বাংলাদেশ। ৫ উইকেট নেওয়া মঈন সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। ক্রিস ওকস ৩ ও বেন স্টোস ২ উইকেট নিয়ে হাত লাগান।
তামিমের বিদায়ের পর কি ইংলিশদের বোলিং হঠাৎই বিষ ছড়াতে শুরু করলো? তাদের বল কি খেলার অযোগ্য হয়ে উঠলো? হেলমেটে স্টোকসের বাউন্সারে আঘাত নিয়ে লুটিয়ে পড়ার পরও উঠে দাঁড়িয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু এক বল পরই ব্যক্তিগত ৪ রানে আউট। তিনি হয়তো কুকের নেওয়া দুর্দান্ত ক্যাচের জন্য দোষের ভাগিদার হবেন না। কিন্তু মাহমুদ উল্লাহ (১৩), শুভাগত হোম (৬), সাকিব আল হাসানরা (১০) ভুল সময়ে ভুল বলে ভুল খেলার অভিযোগ এড়াতে পারবেন না।
তামিমকে নিয়ে ৩১ রানে পড়ে ৫ উইকেট। চা বিরতির সময় ৬ উইকেটে ২০৫। সাকিব ডুবন্ত জাহাজকে আরো খানিকটা ভাসিয়ে রাখার দায়িত্ব নিতে পারেননি। অভিজ্ঞদের এমন ভারাডুবির সময় সাব্বির রহমান (০), মেহেদীদের (১) ব্যর্থতাকে দুষবেন কে? বিরতির পর ৭.৫ ওভারে আর ১৫ রানে বাকি ৪ উইকেটের পতন। এমন পতন কল্পনাকেও ছাড়ায়। কেবল হতবাকই হতে হয়।
তবু ভালো নতুন বলের স্পিন জুটি সাকিব ও মেহেদী একের পর এক আঘাত করতে থাকলেন। ম্যাচে সাকিবের পঞ্চম বলে ডাকেটের উইকেট দিয়ে শুরু। পঞ্চম ও একাদশ ওভারে মেহেদী গুড়িয়ে দেন ইংলিশদের ব্যাটিংয়ের আরো দুই স্তম্ভ। সাকিব-মেহেদী যখন চেপে ধরেন প্রতিপক্ষকে তখনই নামে বৃষ্টি। বাংলাদেশের জন্য ছন্দ পতন ঘটানোর মতোই ব্যাপার।
প্রথম দিনেই পড়ল ১৩ উইকেট! এর মধ্যে আছে ৪৯ রানে বাংলাদেশের ৯টি! চট্টগ্রামের রোমাঞ্চকর ম্যাচের পর ঢাকার দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট কি নিয়ে অপেক্ষায়? তা জানতে মিরপুরে চোখ রাখতেই হচ্ছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।