২৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি

আটকে যাচ্ছে বোরোর 'কাইচ থোড়'

ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে দিশেহারা মানুষ

# শেষ মুহুর্তে কৃষকরা হতাশ
# বোরো উৎপাদনে ব্যহত হওয়ার আংশকা
# দুটি কেন্দ্র থেকে দৈনিক সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট শক্তি যোগ হয় জাতীয় গ্রিডে। তবুও কক্সবাজারে ভয়াবহ লোডশেডিং।
# হ্যাচারি, বরফকল বন্ধের পথে, পর্যটন ব্যবসায় ধ্বস
#গড়ে প্রতিদিন ছয় ঘণ্টার মতো লোডশেডিং হয় শহর এলাকায়। গ্রামের পরিস্থিতি আরও শোচনীয়, বিদ্যুৎ থাকে না সাত ঘণ্টার ওপরে।
নিজস্ব প্রতিবেদক:

বোরোর উৎপাদনের শেষ মুহুর্তে কক্সবাজারে ভয়াবহ লোডশেডিং এর কারনে ‘আটকে যাচ্ছে বোরোর কাইচ থোড়’। যার ফলে কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। পাশাপাশি বোরো উৎপাদনে ব্যাহত হওয়ার আংশকা দেখা দিয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দৈনিক সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট শক্তি যোগ হয় জাতীয় গ্রিডে। তবুও ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। লোডশেডিংয়ের কারনে বোরোর পাশাপাশি  কক্সবাজারে হ্যাচারি, বরফকল বন্ধের পথে, পর্যটন ব্যবসায় ধ্বস উপক্রম দেখা দিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, কক্সবাজারে চলতি মৌসুমে ৫৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো’র আবাদ হয়েছে। অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এবার ১৩৭ হেক্টর অতিরিক্ত জমিতে বোরো’র আবাদ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বোরোর কাইচ থোড়ের’ সময় লোডশেডিং এর কারনে উৎপাদনে অনেকটা ব্যাহত হওয়ার আংশকা রয়েছে।
তাঁর দেয়া তথ্য মতে, চলতি বোরো মৌসুমে (২০২৩-২৪ অর্থবছরে) কক্সবাজারে ২ লাখ ২৭ হাজার ২৬৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব জমি চাষা-বাদের জন্য ২ হাজার ৭৬৫ হেক্টরে বীজতলা করা হয়েছিল। বোরো মৌসুমে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় তিন জাতের ফলনের আবাদ হয়েছে। চকরিয়া ৮৭২ হেক্টর, পেকুয়া ৩৫৭ হেক্টর, রামু ৩৩৪ হেক্টর, সদর উপজেলা ৩৪২ হেক্টর, উখিয়া ৩২৭ হেক্টর, টেকনাফ ৮৫ দশমিক ৬৭ হেক্টর, মহেশখালী ৩৫৭ হেক্টর,  এবং কুতুবদিয়া ৮৮ হেক্টর।
বিভিন্ন এলাকায় ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বোরে ধানের ক্ষেত প্রকৃতির খেয়ালে অধিকাংশ চাষে কাইচ থোড়, সবুজ রঙ ধারণ করেছে। সবুজে ঘেরা মাঠে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। ধানগাছ ভাল রাখতে ও ধানের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকরা ক্ষেতের ঘাস পরিষ্কার, সার ও বালাইনাশক ঔষধ প্রয়োগ ও পার্চিংসহ সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছেন। বোরো আবাদের জন্য আবহাওয়া রয়েছে। তবে হঠাৎ লোডশেডিংয়ের কারনে কৃষকের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।
উখিয়ার কৃষক মো. আলী হোসেন ‘মনে খুবই হতাশা নিয়ে বলেন, ভালো ফলন হয়েছে। তবে শেষ মুহুর্তে চাষে পানি দরকার। কিন্তু ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারনে চাহিদা মতো পানি সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে চাহিদা মতো ফলন ঘরে তুলতে না পারার আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এ সময়ে কোনো সারের প্রয়োজন নেই। শামা ও ফুল্কা ঘাসে এসময় ফুল বের হয়। তাই শামা ও ফুল্কা ঘাস থাকলে পরিষ্কার করতে হবে। ফুল ফোটার আগ পর্যন্ত এসময় জমিতে ৫ সেন্টিমিটার দাঁড়ানো পানি রাখতে হবে। পানির ঘাটতি হলে ধানের ফলন কমে যেতে পারে বলে আশংকা করেন গবেষণা প্রতিষ্টানটি।
অন্যদিকে ভয়াবহ লোডশেডিং এর কারনে অধিকাংশ সময় অন্ধকারে থাকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। গড়ে প্রতিদিন ছয় ঘণ্টার মতো লোডশেডিং হয় শহর এলাকায়। আর গ্রামের পরিস্থিতি আরও শোচনীয়, বিদ্যুৎ থাকে না সাত ঘণ্টার ওপরে। তীব্র গরমে হোটেল-মোটেলে টিকতে পারছেন না পর্যটকরা। ঈদ ঘিরে ভ্রমণপিপাসুদের ঢল নামার কথা থাকলেও আশঙ্কাজনক হারে কমছে বুকিং। ধস নেমেছে বহু কলকারখানায়। বেড়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রস্তুত করা পণ্যগুলোর উৎপাদন খরচ। যার প্রভাব পড়বে সারাদেশের ভোক্তার ওপর।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বলছে, মহেশখালীর মাতারবাড়ীর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দৈনিক ৪০০ থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। এ ছাড়া সদর উপজেলার খুরুশকুলে বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যোগ হচ্ছে আরও ৫০ মেগাওয়াট করে।
উৎপাদনের শহরে বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষের বিলাসি স্বপ্নতো দূরের কথা, খোদ পবিত্র রমজানে ইফতার ও সেহরির সময়ও পাওয়া যায় না সরবরাহ। তারাবি পড়তে গিয়ে শরীর ঘামে ভিজে জবজব। রাতে শান্তির ঘুম না হওয়ায় দিনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে কর্মস্থলে। লোডশেডিংয়ের কারণে অলস সময় পার করতে হচ্ছে অনেক ছোট কলকারখানার শ্রমিকদের। বরফ কলে উৎপাদন বন্ধ থাকায় মালিকদের লোকসানের পাশাপাশি ফ্রিজিং করতে না পারায় পচে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার মাছ। তাপপ্রবাহ শুরু হওয়ায় সপ্তাহখানেক ধরে চলছে এই দুর্বিষহ অবস্থা।
কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী জোসনা আকতার বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে শীতকালে কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছে। দিন ও রাতের অধিকাংশ সময় থাকতে হচ্ছে বিদ্যুৎবিহীন। তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎনির্ভর যন্ত্র।
#চার শতাধিক হোটেল ব্যবসায় ধস
অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে সাগরপাড়ের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ব্যবসায় ধস নেমেছে। দৈনিক চার মেগাওয়াট বিদ্যুতের পরিবর্তে সরবরাহ করা হচ্ছে দুই মেগাওয়াট। বিদ্যুতের এই আসা-যাওয়ার খেলায় অতিষ্ঠ পর্যটকরা হোটেলে থাকতে পারছেন না। অনেকে বেশি দিন অবস্থানের পরিকল্পনা করেও তাড়াতাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে পর্যটকের আগমনও। এতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি রাজস্ব হারিয়ে লোকসানে পড়ছে সরকারও।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারে ডুবে যায় সৈকতের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস। জেনারেটর চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সামর্থ্য সবার নেই। আবার খরচও বেশি। এর সঙ্গে রয়েছে বিরক্তিকর উচ্চ শব্দ, যা পর্যটকদের রীতিমতো অতিষ্ঠ করে তুলছে।
#৫০ বরফকল বন্ধের পথে
কক্সবাজার বরফকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আবেদীন নান্নু বলেন, সদর উপজেলাসহ জেলায় ৫০টি আইস মিল রয়েছে। এসব কল থেকে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার বরফ তৈরি হয়। কিন্তু সম্প্রতি লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানা অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকছে, অলস সময় পার করছেন শ্রমিকরা। এতে কল শ্রমিক ও মালিকদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ টাকার মাছ। টানা তিন ঘণ্টাও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া হয় না।
#৫৪ হ্যাচারি বন্ধের উপক্রম
হ্যাচারি মালিকদের সংগঠন শ্রিম্প হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নজিবুল ইসলাম জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে জেলার ৫০টি হ্যাচারিতে দৈনিক কমপক্ষে ১৫ হাজার লিটারের বেশি জ্বালানি খরচ হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে দৈনিক ১১ লাখ টাকার বেশি। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে মাছ ব্যবসায়।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের গণি বলেন, এই জেলায় দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ৪০ মেগাওয়াট। বর্তমানে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ মেগাওয়াট।
কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী গোলাম আহম্মদ বলেন, দৈনিক ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে ৫১ মেগাওয়াট। উৎপাদন না বাড়লে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের মূখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও এই জেলার মানুষ থাকেন অন্ধকারে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? পর্যটন নগরী ও হাজার হাজার ক্ষুদ্রশিল্পের কথা বিবেচনায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা উচিত।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।