কক্সবাজারসময় ডেস্কঃ ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলির’ প্রভাবে গত তিন দিন ধরে কক্সবাজারের টেকনাফে বৃষ্টি হচ্ছে। শনিবারও (১৩ অক্টোবর) দিনভর টানা বৃষ্টি হয়েছে। এতে করে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে পাহাড়, বন ও জঙ্গল কেটে বসতি গড়া রোহিঙ্গা সদস্যরা রয়েছেন ভূমিধসের শঙ্কায়।
শনিবার টেকনাফের কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টির কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা সদস্যরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। ভারি বর্ষণে পাহাড়ের পাদদেশে আশ্রিত হাজারও রোহিঙ্গা ভূমিধসের শঙ্কায় রাত কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি কক্সবাজারে দুটি পৃথক পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা তাদের শঙ্কা ও উদ্বেগকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
পাহাড়ের পাদদেশে টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন মোহাম্মদ একরাম। তিনি বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে ক্যাম্পে বাসিন্দারা পাহাড় ধসের ভয়ে রয়েছে। এখনও পর্যন্ত কিছু হয়নি, তবে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে চরম ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরানো খুবই দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘দিনের চেয়ে রাতে ভয়টা বেশি, ভারি বর্ষণ হলে রাতে অনেকে না ঘুমিয়ে বসে থাকে। কেন না রোহিঙ্গারা যেসব ঘরে আশ্রয় নিয়েছে সেগুলো খুবই দুর্বল। বাতাস হলে নড়াচড়া করে। এ সময় ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়। এমনকি সামান্য বৃষ্টিতেও আশ্রয় শিবিরে ভয়াবহ দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।’
টেকনাফে পাহাড় কেটে বানানো রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির
টেকনাফে পাহাড় কেটে বানানো রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির
অন্য এক শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মোহাম্মদ রশিদ বলেন, ‘আট মাস আগে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে এ পারে পাহাড়ের পাদদেশে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু বৃষ্টি হলে খুব বেশি ভয় কাজ করে। এতে রাতে ঘুম হয় না। ভারি বৃষ্টি হলে মনে হয় ঘর বাতাসে উড়ে চলে যাবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান আবদুর মতলব বলেন, ‘বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ঘরগুলো খুবই দুর্বল। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভয়টা বেড়ে যায়। এনজিও সংস্থাগুলোর মাধ্যমে দুর্বল ঘরগুলো শক্ত করে বানিয়ে দেওয়া হলে ভয়টা কেটে যাবে বলে মনে হয়।’ ।
ভারী বৃষ্টিতে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা শিবিরের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল হাসান। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে ভূমিধস হতে পারে এমন জায়গায়গুলো চিহ্নিত করে তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে নিরাপদে রাখার প্রক্রিয়া চলছে।’
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি মাসে দুটি ‘ঘুর্ণিঝড়’ হওয়ার আশঙ্কা ছিল, এর মধ্যে একটির প্রভাব কেটে গেছে। অপরটি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তবে আরও দুই দিন বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।