সদ্য ঘোষিত বিএনপির রূপকল্প ভিশন ২০৩০ নিয়ে প্রচারণায় থাকবে বিএনপি। দলের সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াতে সারাদেশে ৫১টি কমিটি এই ভিশন নিয়ে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে যাবেন। তাদেরকে এর সফল দিকগুলো তুলে ধরবেন। দলের হাইকমান্ড এমন নির্দেশনা দিয়ে টিম প্রধানকে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এই রুপকল্প ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেন।তার এই ভিশন ২০৩০ তে তিনি একটি সুখী, সমৃদ্ধ, আধুনিক ও আত্মমর্যাদশীল রাষ্ট্র গঠনে নিজ দলের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।ঘোষিত ওই ভিশনে দেশ পরিচালনার জন্য ৩৭টি বিষয়ের উপর মোট ২৫৬টি টকিং পয়েন্টস দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেছেন।
গণতন্ত্র, জাতি গঠন, সুশাসন, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি, নৈতিকতার শক্তি পুনরুদ্ধার, পরিষেবা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা, সন্ত্রাসবাদ, অর্থনীতি, গবেষণা ও উন্নয়ন , জনমিতিক লভ্যাংশ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ক্রীড়া, সংষ্কৃতি, বিদেশে কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ, মিডিয়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, কৃষি ও কৃষক, শ্রমিক কল্যাণ, নগরায়ণ ও আবাসন, নিরাপদ খাদ্য ও ঔষধ, স্বাস্থ্যসেবা, যুব-শিশু ও নারী, জলবায়ু পরিবর্তন, পানি সম্পদ, নীল অর্থনীতি , ও পরিবেশ সংরক্ষণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিল্প, যোগাযোগ, পর্যটন, সম্পদ সংরক্ষণ, সামাজিক ব্যাধির সমস্যা, ভূমিকম্প, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অনগ্রসর অঞ্চলের জন্য পদক্ষেপ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি এই ৩৭টি বিষয়ের ওপর ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনার কথা জানান বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপির নেতৃবৃন্দ জানান, দলের ঘোষিত ভিশন ২০৩০ কোনো নির্বাচনী ইশতেহার নয়। তবে এর আলোকেই আগামী নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হবে। এবং আগামীতে দলটি সরকার গঠন করলে এই ভিশনের উপর আলোকপাত করেই দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ অন্যান্য বিষয়গুলোকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।এবং দল সরকার গঠনের পর প্রতিবছরই তাদের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা করবে। দলটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করে এমন বক্তব্য পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে দলের চেয়ারপার্সনের আসস্থাভাজন উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী জানান, এতদিন বিএনপিকে সকলে প্রশ্ন করতো -বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কি করবে। তাদের লক্ষ্য কি। দলের নেতাকর্মী সমর্থক শ্রেণি ছাড়াও দেশের সুধী সমাজ, বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে এমন জিজ্ঞাসার একটি উত্তর বিএনপি দিয়েছে। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তার এই ভিশন ২০৩০ উপস্থাপনের মাধ্যমে সকলে আগামীর বিএনপিকে বুঝতে পারছেন। তিনি জানান, ভিশন ২০৩০ আমাদের পরিকল্পনা, ইশতেহার নয়।
বিএনপি দরীয় সূত্র জানায়, দলকে সু সংগঠিত করতে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের ৫১টি টিম গঠন করা হয়েছে। এসকল টিম দেশের সকল জেলা, মহানগরে কর্মীসভা করে দলের সাংগঠনিক অবস্থানের উপর একটি প্রতিবেদন করে পরবর্তী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর আলেলাকে অনেক টিম বিভিন্ন জেলা সফর শেষ করেছেন অনেকে জেলা সফরে রয়েছেন আবার অনেক যাবেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপস্থাপিত রূপকল্পকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে এবং নেতাকর্মীদের মাঝে সম্যক ধারণা তৈরি করতে এসকল টিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দলের পরিকল্পনা অনুযায়ি-দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এই ভিশনকে নেতাকর্মীদের মাঝে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে তারা সাধারণ জনগণের মাঝে আরও বৃহৎ আকারে উপস্থাপন করতে পারবেন।
এর পরবর্তী পরিকল্পনায় দলের আরও টিমকে অন্তর্ভুক্ত করে সারাদেশে সাংগঠনিক সফরকে বাড়িয়ে তোলা হবে।এজন্য ওই ৫১টি টিমকেই আবার রেরাটেশন অনুযায়ী বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে।তারা তৃণমূলকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও ধারনা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন।
বিএনপির একজন নেতা জানান, আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে দলের পক্ষ থেকে সুবিধামতো সময়ে সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেওয়া হবে। এর আগ পর্যন্ত তারা বিএনপির আগামী সরকার গঠনে তাদের পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে থাকতে চায়।
পাশাপাশি দলকে শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক তৎপরতাও বজায় রাখবে। সহায়ক সরকারের রূপরেখা উপস্থাপনের পর বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামার আগে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করার জন্য এই ভিশন ২০৩০ নিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করবে।এরপর আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
অপর একজন নেতা জানান, আগামী নির্বাচনের আগে পর্যন্ত সময় বিএনপি মাঠে থাকার জন্য এখন এই ভিশন ২০৩০ পরিকল্পনা।এটা আমাদের হোমওয়ার্ক রাজনীতির অংশ। আগামীতে আমাদের সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা পর আমরা রাজপথের রাজনীতি শুরু করবো।
এসব বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্ষিয়ান রাজনীতিবীদ আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ভিশন ২০৩০ একটি দিকনির্দেশনা।আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে কিভাবে দেশ পরিচালনা করবে তার একটি পরিকল্পনা হচ্ছে এই রূপকল্প। এখন সারাদেশে আমাদের এই ভিশন নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে।
তারা জানার চেষ্টা করছে। আমাদের কর্মীরাও আশান্বিত।আমাদের কাছে তারা আসেন।আমরাও তাদেরকে ভিশন ২০৩০ নিয়ে ধারণা দেই।এটা আমার ব্যাক্তিগত। অপরদিকে দরীয় কার্যক্রমের মধ্য দিয়েও এই রূপকল্পকে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর বলেন, বিএনপি বরাবর ভিশনারি দল।জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ভিশনারি নেতৃত্ব। বিএনপি যা বলে তা বাস্তবায়ন করে।অতীতে তা প্রমাণিত হয়েছে।ভবিষ্যতেও হবে ইন শাআল্লাহ্। সারাদেশ এখন বিএনপির ভিশন নিয়ে উচ্ছ্বসিত বলেও তিনি জানান।
সূত্র- পূর্বপশ্চিম
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।