নতুন ভ্যাট আইনের কারণে জনগণের ওপর যাতে বাড়তি চাপ না পড়ে, দ্রুত তার উপায় খুঁজে বের করতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে তাড়াতাড়ি ভ্যাট আইনের সমস্যা দূর করুন। ’ এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগামী বাজেট হতে হবে কল্যাণকর। জনগণ ভোগান্তিতে পড়বে, এমন কোনো ব্যবস্থা রাখা যাবে না।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে অর্থ বিভাগের সিনিয়র কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে এসব নির্দেশনা দেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজেটের আকার ও বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ নিয়ে আলোচনার জন্য সভাটি হলেও সেখানে নতুন ভ্যাট আইন বেশি গুরুত্ব পায়। ভ্যাটের হার কত হবে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রীর কেউই সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি। তবে প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘ভ্যাটের কারণে জনগণের যাতে কোনো ভোগান্তি না হয়, সে জন্য দ্রুত পথ খুঁজে বের করুন। সামনে নির্বাচন রয়েছে। এ সময় জনগণকে চাপে ফেলার মতো কোনো কাজ করা যাবে না। ’ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে যত শিগগির সম্ভব নতুন ভ্যাট আইনের জটিলতাগুলো নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দেন তিনি।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আগামীকাল ১৪ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে বাজেট নিয়ে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিনই ভ্যাটের হার কমিয়ে ১৩ শতাংশ করার প্রস্তাব নিয়ে যাবে এনবিআর। কর্মকর্তাদের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সেটা ১২ শতাংশ নির্ধারণ করে দিতে পারেন। ওই দিন করমুক্ত আয়সীমা বিদ্যমান আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়ানো হবে কি না, হলে কত হতে পারে এবং করপোরেট করহার কতটা কমানো হবে সেসবও চূড়ান্ত হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠক প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের সিনিয়র একজন কর্মকর্তা বলেন, আগামী বাজেটে নতুন নতুন প্রকল্প নেওয়ার বদলে পুরনো যেসব প্রকল্প এখনো বাস্তবায়ন হয়নি, সেগুলোতে বরাদ্দ বাড়িয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে বড় প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে চলমান রাস্তা নির্মাণ, গ্রামীণ রাস্তা পাকাকরণ, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের মতো ছোট প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখার কথা বলেছেন তিনি।
বৈঠকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার চার লাখ ২৫০ কোটি টাকা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এত দিন অর্থ মন্ত্রণালয় চার লাখ ২১৮ কোটি টাকা ধরে বাজেট চূড়ান্ত করছিল। তখন এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় দুই লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের আকার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রাও ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে দুই লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি নির্ধারণ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ফর্মুলা অনুযায়ী বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারলে ভালো। কয়েক বছর ধরে ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখছে বাংলাদেশও। তবে সংশোধিত বাজেটের সময় ঘাটতি আরো কমে যায়। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের ধারণা, নতুন বাজেটে ঘাটতি ৫ শতাংশের বেশি নির্ধারণ করা হলেও অর্থবছরের শেষ দিকে বাজেট সংশোধনকালে তা ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।
আগামী অর্থবছর মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ নির্ধারণ করার কথা প্রাক-বাজেট বৈঠকগুলোতে বলে আসছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তা বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি অর্থবছর জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার ধারণা, এ বছর ৬ দশমিক ৯ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দারিদ্র্য দূর করতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানো হবে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হবে ৫২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৪৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশে নামিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। বাজেটে সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ থাকবে শিক্ষা খাতে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বরাদ্দ পাবে মানবসম্পদ উন্নয়ন খাত। তবে হাওরে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, কৃষি খাতে সহায়তা দেওয়াসহ হাওরবাসীর উন্নয়নে আগামী বাজেটে ৪০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে।
চলতি অর্থবছর গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের সামান্য বেশি। ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কারণে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বাড়ার আশঙ্কা থেকে নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।