‘আইজিপির নির্দেশ তোয়াক্কা না করে ঈদকে সামনে রেখে কক্সবাজার –চট্রগ্রাম মহাসড়ক ও টেকনাফে সড়কে পুলিশ বাড়াবাড়ি শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা হলেই এক প্রকার এই সব সড়কে হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশের বাড়িবাড়ির মাত্রা বেড়ে চলছে। এই সব সড়কের প্রায় ২০ টি স্পটে যানবাহন আটকিয়ে চাঁদাবাজি, যাত্রী হয়রানি চরমে পৌছেছে। এই সব অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মাত্রা অতিরিক্ত হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। গত শনিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে চকরিয়ার ফাসিয়াখালি এলাকায় ঢাকামুখী একটি যাত্রীবাহি থামিয়ে গণহারে তল্লাসীর নামে হয়রানির শুরু করে চকরিয়া থানার বহু বির্তকিত এসআই শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ।
এই সময় ওই গাড়ির যাত্রী কক্সবাজার অনলাইন প্রেসক্লাবের কার্য্যকরী সদস্য ও বাংলাদেশ অনলাইন জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসলাম মাহমুদ প্রতিবাদ করলে তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উল্টো তাকে নাজেহাল করে এবং সাংবাদিক ইসলামের ব্যবহৃত ব্যাগে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে মাদক মামলায় ফাসিয়ে দেয়ার হুমকিও দেন।
এই ভাবে কক্সবাজার- –চট্রগ্রাম মহাসড়ক ও টেকনাফ সড়কে যাত্রী হয়রাননি চলছে। ফেনীর লালপুর এলাকায় এসবির এ এস আই মাহফুজুর রহমান প্রায় ৭ লাখ ইয়াবাসহ আটকের পর কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির একটু বাড়া-বাড়ি কমলেও হাইওয়ে ও জেলা পুলিশের অপতৎরতা থেমে নেই।
সাংবাদিক ইসলাম মাহমুদ জানান, পেশাগত গুরুত্বপূর্ণ কাজে কক্সবাজার থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন তিনি। রাতে সাড়ে ১১টার সময় তাকে বহনকারী বাস ফাসিয়াখালী পৌঁছলে চকরিয়া থানার বহু বির্তকিত এসআই শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গাড়ী থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশীর নামে হয়রানি করতে শুরু করে। এসময় অন্যান্য যাত্রীদের সাথে উক্ত সাংবাদিক নেতা ইসলাম মাহমুদ সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রতিবাদ করেন। এতে পুলিশ সদস্যরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে তার উপর চড়াও হয়ে তাকে শারিরীক ভাবে নাজেহাল করে আহত করে।
এই বিষয়টি রাতেই জেলা শহরে কর্মরত সাংবাদিকদের মাধ্যমে কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদকে অবহিত করা হয়।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে কক্সবাজার চট্রগ্রাম ও টেকনাফ সড়কের ২০ টি স্পটে পুলিশের বাড়িবাড়ি শুরু হয়। মাহাসড়কে দায়িত্বপালনের নামে টহলরত পুলিশ পন্যবাহি গাড়ি থামিয়ে চাঁদবাজি, ঢাকা ও চট্রগ্রামগামি বিভিন্ন যাত্রীবাহি যানবাহন আটকি তল্লাসীর নামে হয়রানি করে আসছে।
বিশেষ করে টেকনাফ সড়কের টেকনাফ থানার টহলদল, হোয়াইক্ষ্যং হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির টহলদল, থাইংখালি হাইওয়ে টহলদল, উখিয়া থানার টহলদল, তুলাবাগান হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির টহলদল, খাটিমাথা এলাকায় রামু থানা পুলিশের টহলদল।
চট্রগ্রাম মহাসড়কে খরুলিয়া এলাকায় কক্সবাজার সদর মডেল থানার টহলদল, রামু থানার টহলদল, ঈদগাও পুলিশ ফাঁড়ির টহলদল, মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির টহলদল, চকরিয়া থানা পুলিশ ফাঁড়ির টহলদল, হারবাং হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির টহলদল।
এইসব টহলদল সুযোগ বুঝে ভালো একটি জায়গায় দাঁয়িয়ে উভয় দিকে থাকা আসা যানবাহন আটক করে চাঁদাবাজি করে থাকে। বিশেষ করে চকরিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন যেই রাতে ডিউটি পড়ে সেই রাতে সড়কে ব্যাপক হয়রানীর শিকার হতে হয় লোকজনকে।
তিনি ইয়াবা উদ্ধারের নামে প্রতিটি যাত্রীর দেহ তল্লাশীর নামে হয়রানি করে থাকে।
পরিবহন শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, হোয়াইক্ষ্যং হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা রাত ১০টার পর থেকে টেকনাফ- কক্সবাজার মহাসড়কে দূর পাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী ট্রাক থামিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে আদায় করছেন নগদ টাকা। মোঃ আলম নামে এক ট্রাক চালক জানান, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার সময় হোয়াইক্যং ফাঁড়ি এলাকায় আমার মালবাহী ট্রাকটি থামাতে ইশারা দেন হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা। প্রথমে আমার নিকট জানতে চান ট্রাকে কি মাল রয়েছে। কাঁচা মালের কথা শুনে পুলিশ অভিযোগ করে বলেন, ট্রাকে কাঁচা মালের ভেতর ফেনসিডিল ও হিরোইন রয়েছে। পুলিশের মুখে এমন কথা শুনে আমি আঁতকে ওঠি। এরপর আমার নিকট থেকে গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেন এবং মালের মালিকের সন্ধান করেন। আমি পুলিশের নিকট কাঁচা মালের মালিক টেকনাফ উপরের বাজারের ব্যবসায়ীর মোবাইল নাম্বার দিলে তিনি মালিকের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আমাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে আদায় করেন ২ হাজার টাকা । এভাবে ভোর পর্যন্ত চলে তাদের চাঁদাবাজি।
এছাড়াও টেকনাফে বাইরের ট্রাক, লরি, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা,গামী বাস এবং পিকআপ ভ্যান থেকে এই চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়োগ দেয়া ট্রাফিক পুলিশ কাজ বাদ রেখে চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রমযান শুরু হওয়ার পূর্বে পুলিশের মহা-পরির্দশক (আইজিপি) শহিদুল হক ঈদে নানা ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধের ঘোষনা দিলেও তার নির্দেশ তোয়াক্কা না করে এই সব চাঁদাবাজি করে আসছে খোদ পুলিশ বিভাগ।
ভুক্তভোগীরা জানান, চাঁদা না দিলে চলে নানা হয়রানি। পুলিশের এ হয়রানির শিকার হচ্ছেন পরিবহন মালিক, চালক, সাধারণ যাত্রী, এমনকি চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল যাত্রাপথের রোগীরাও। এসব হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে পুলিশের জেলা পর্যাযের কর্তাদের অনুরোধ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ জানান, শনিবার রাতে সংঘঠিত সাংবাদিক নাজেহালের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দেন তিনি।
গতকাল রাতে কুমিল্লা অঞ্জলের হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বরত পুলিশ সুপার রেজাউল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, হাইওয়েতে চাঁদাবাজি রোধে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। যদি কক্সবাজারের কোন স্থানে চাঁদাবাজির সু-নিষ্টিত অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।