অর্থ আয়ের জন্য মানবপাচারের কাজে জড়িয়ে পড়েছেন পুলিশ সদস্যরাও। কক্সবাজার জেলায় কাজ করেছেন বা করছেন এমন অন্তত ২৪ জনের নাম পাওয়া গেছে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন- কক্সবাজার থানার এসআই (উপপরিদর্শক) মোস্তফা কামাল, এসআই সুনিল, টিএসআই (টাউন সাব-ইন্সপেক্টর) দেলোয়ার, সৈকত পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই এমদাদ, টেকনাফ থানায় বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালনকারী ওসি (অফিসার ইনচার্জ) ফরহাদ, ওসি মুক্তার আহম্মদ, ওসি রঞ্জিত দাশ, শাপলাপুর পুলিশ ফাঁড়িতে বিভিন্ন সময় ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করা এসআই আনিসুর রহমান, এসআই মজিবুর রহমান, এসআই বাবুল আজাদ, রামু থানার অপারেশন অফিসার এসআই শাহ আলম, এএসআই নয়ন, এএসআই কানু, কুতুবদিয়া থানার ওসি অং সাই থোয়াই, উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম, একই থানার এসআই রাজেস ও প্রভর দাশ; হিমছড়ি ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করা এসআই আবদুর রহমান ও এসআই বদরুল আলম; ইনানী ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আলাউদ্দিন, একই ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ এসআই হাবিবুর রহমান, এসআই সাঈদ মিয়া ও এসআই মাশরুর হক এবং বর্তমানে ঢাকার শিল্পাঞ্চলের এসআই নজরুল।
এদিকে এই তালিকা থেকে উখিয়া থানার সাবেক ওসি জাহেদুল কবিরের নাম বাদ পড়ায় জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তিনি উখিয়া থানায় কর্মকালিন সময়ে টাকার বিনিময়ে ব্যাপক হারে মানবপাচার হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
শনিবার কক্সবাজারে মানবপাচার নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হক, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, র্যাব-৭-এর অধিনায়ক কর্নেল মিসতাউদ্দিন আহমেদ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কক্সবাজার কমান্ডার কর্নেল খালেকুজ্জামান, কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন শহীদুল ইসলাম, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ।
সভায় আইজিপি বলেন, পুলিশের কোনো সদস্য মানবপাচারে জড়িত থাকলে বা এতে সহযোগিতা দিচ্ছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত দুই বছরে সমুদ্রপথে মানবপাচার বহুগুণ বেড়ে গেছে। আর এ ক্ষেত্রে টেকনাফ উপকূলকে ব্যবহার করা হয়। এই অবৈধ কাজে কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও কুতুবদিয়া থানার বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা যুক্ত হয়ে পড়েন। জনপ্রতি তাঁরা দুই হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গত দুই বছরে উখিয়া থানায় রেজু খালের মোহনা দিয়ে সবচেয়ে বেশি পাচারের ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ সদস্যরা দালালচক্রের প্রতিটি সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মাসে এক লাখ টাকা করে আদায় করেছেন।
তবে মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছেন তালিকাভুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে কালের কণ্ঠ’র পক্ষ থেকে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে অভিযানের পর মানবপাচারকারীরা সব পালিয়ে আছে। আমাদের লোক জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না।’ কুতুবদিয়া থানার ওসি অং সাই থোয়াই বলেন, ‘এই দ্বীপাঞ্চলে কোনো মানবপাচারকারীই নেই। আর এর সঙ্গে জড়িত থাকার সুযোগই বা কোথায়!’ জানতে চাইলে এসআই মোস্তফা কামাল বলেন, ‘চার-পাঁচ মাস আগে আমি কক্সবাজার থানা থেকে রামু থানায় বদলি হয়ে এসেছি। এ ধরনের কোনো বিষয়ে আমি জড়িত নই।’ টেকনাফের শাপলাপুর পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ এসআই আনিসুর রহমান বলেন, ‘এক মাস আগে আমি মহেশখালী বদলি হয়ে এসেছি। আপনারা খোঁজ নেন, কেউ আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের প্রমাণ দিতে পারবে না।’ গতকাল রাতে রামু থানার অপারেশন অফিসার এসআই শাহ আলমের কাছে মানবপাচার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি একটা প্রোগ্রামে আছি। এখন কথা বলতে পারব না।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।