শিক্ষক হলো জাতির বিবেক, মানুষ গড়ার কারিগর ও সমাজের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ। অন্যায়, অত্যাচার, অসুন্দর ও অসত্যকে বর্জন করে সুন্দর ও সত্যকে লালন করার স্বপ্ন কেবল শিক্ষকরাই দেখাতে পারেন, দেখে থাকেন। তেমনি এক নিবেদিত প্রাণ মানুষ গড়ার কারিগর উখিয়া উপজেলার মরিচ্যার স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক গৌরাঙ্গ শর্মা। ৬৮ বছর বয়সী এই গুণী মানুষ তার জীবনের সোনালী সময় অতিবাহিত করেছেন মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শনের প্রত্যয়ে। পাশাপাশি ছিলেন দক্ষ রাজনীতিবিদও। পালন করছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারন সম্পাদকের মত গুরুদায়িত্ব। বহু গুণে গুণান্বিত গৌরাঙ্গ শর্মা সেইসাথে একজন নামকরা হোমিও চিকিৎসক এবং গ্রাম ডাক্তার হিসেবে সেবা দিয়েছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব লোকদের মাঝে। তাদের কাছে তিনি ছিলেন চিকিৎসা দেবতা। দীর্ঘ সময় উখিয়া উপজেলার গ্রাম ডাক্তার সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেবা ও শিক্ষার সোনালী ধাপ পেরিয়ে অবশেষে ২০০৫ সালে অবসরে যাওয়া মানুষ গড়ার কারিগর গৌরাঙ্গ শর্মার দিন কাটে মরিচ্যা পাগলিরবিল সড়কস্থ নিজ বাসায় হোমিও চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে ।
বর্ণাঢ্য এই মানুষ গড়ার কারিগরের সংক্ষিপ্ত জীবনী
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গৌরাঙ্গ শর্মার জন্মগ্রহন : শিক্ষক গৌরাঙ্গ শর্মা ১৯৪৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজার সদর উপজেলার বৃহত্তম ইউনিয়ন ঝিলংজার পেতা সওদাগর (বর্তমান পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বর্তমান বয়স ৬৮ বছর।
সাংসারিক জীবন : সাংসারিক জীবনে স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে পলাশ শর্মা পেশায় সাংবাদিক, রাজনীতি ও ব্যবসার সাথে জড়িত। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কক্সবাজার অাইন কলেজ শাখার সিনিয়র যুগ্ন অাহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দ্বিতীয় ছেলে অাভাষ শর্মা বিশু তিনিও একজন সংবাদকর্মী, রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী। বর্তমানে উখিয়া প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষক গৌরাঙ্গ শর্মার দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে।
গৌরাঙ্গ শর্মার শিক্ষা জীবন : তিনি ১৯৬৫ সালে কক্সবাজার মডেল হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন এবং ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৬৮ সালে উখিয়ার চৌধুরী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তৎপূর্বে ম্যালেরিয়া ইন্সপেক্টর হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মজীবন অতিবাহিত করেছেন। শিক্ষকতার মধ্যখানে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ঢেঁকিবনিয়া সহ বিভিন্ন স্থানে অাত্নগোপনে থাকেন। এর মাঝে বিএ(পাস) কোর্স সম্পূর্ণ করার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কলেজে ভর্তি হন ১৯৭২ সালে। সেখান থেকে তিনি বিএ(পাস) ডিগ্রী লাভ করেন।
কেন মরিচ্যার বাসিন্দা হন এবং কোন কোন বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন : শিক্ষকতার মত মহান পেশায় নিয়োজিত হয়ে নিজ জন্মভূমি ত্যাগ করে ১৯৭৩ সালে উখিয়ার মরিচ্যায় স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে অাসেন এবং একই সালে নলবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ১৯৮৬ সালে হলদিয়া পালং এর উত্তর বড়বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। উত্তর বড়বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পদোন্নতি নিয়ে ১৯৯৬ সালে উপকূলীয় এলাকার রুপপতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেখান থেকে ইনানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৯৯ সালে যোগদান করে কিছুদিন সেখানে থাকার পর আবারও উত্তর বড়বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে অাসেন।
কখন অবসরে যান গৌরাঙ্গ শর্মা : দীর্ঘদিন শিক্ষকতার মহান ব্রত শেষে গৌরাঙ্গ শর্মা ২০০৫ সালে অবসরে যান। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গৌরাঙ্গ শর্মা বার্ধক্যের সাথে লড়াই করে নিজ পরিবার পরিজন নিয়ে নিজ বাড়ি মরিচ্যাস্থ মাষ্টার ম্যানশনে দিনাতিপাত করছেন। উক্ত মানুষ গড়ার কারিগরের হাতে গড়ে ওঠা অনেক ছাত্রছাত্রী বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন উচ্চ পদস্থে কর্মরত অাছেন বলে জানিয়েছেন।
স্ত্রীর অবস্থান : মানুষ গড়ার কারিগর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গৌরাঙ্গ শর্মার জীবনসঙ্গী প্রিয়ারানী শর্মা একজন সুপরিচিত পল্লী চিকিৎসক এবং উখিয়ার মরিচ্যা বাজারে তার মালিকানাধীন মোর্শেদ মেডিকেল হলে চেম্বার করেন।
উল্লেখযোগ্য কয়েকজন প্রয়াত সহকর্মীর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন গৌরাঙ্গ শর্মা : তিনি তার সহকর্মীদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- উখিয়া রাজাপালং এর উত্তর পুকুরিয়া গ্রামের মরহুম অাবুল ফজল মাস্টার, জালিয়াপালং এর মরহুম মোহাম্মদ অালম মাস্টার, হলদিয়ার পাতাবাড়ি গ্রামের মরহুম জাফর অালম, কোটবাজারের প্রয়াত খিরোধ চন্দ্র বড়ুয়া, ঘুমধুম বেতবোনিয়া এলাকার ফকির অাহাম্মদ মাস্টার, রাজাপালং চাকবৈটা গ্রামের মরহুম ফজলুল করিম মাস্টার, জালিয়াপালং এর মরহুম ঈমাম শরীফ মাস্টার ও রাজাপালং জাদিমুরার মৌলভী জাকির হোছেন মাস্টার সহ অারো অনেকে।
গৌরাঙ্গ শর্মা রাজনীতি জীবন ও কার অবদানঃ শিক্ষক গৌরাঙ্গ শর্মা রাজনৈতিক জীবনে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারন সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ জেলা সভাপতি ছিলেন মরহুম জমাদার ফজল করিম। সেই সময়ে তিনি তার ঘনিষ্ট বন্ধু এবং রাজনৈতিক সহযোদ্ধা মরহুম জননেতা একেএম মোজাম্মেল হক এর সান্নিধ্যে থেকে কক্সবাজার সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তার রাজনৈতিক গুরু হিসেবে যাদের সর্বদা স্মরণ করেন তাদের মধ্যে মরহুম এ.কে.এম মোজাম্মেল হক, টেকনাফের চেয়ারম্যান নজির অাহাম্মদ, এডভোকেট নুর অাহাম্মদ মিয়া, সাবেক রাষ্ট্রদূত রামুর মরহুম ওসমান সরওয়ার অালম চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মরহুম ফজলুল করিম, রামুর প্রফেসর মোস্তাক অাহাম্মদ, খুনিয়াপালং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাসান আলী মাস্টার, উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সাবেক সভাপতি ও হলদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া চৌধুরীসহ অারো অনেকে।
সামাজিক কার্যক্রমঃ উখিয়ার মরিচ্যা বাজার পরিচালণা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এই গুণীজন। ওই সময় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মরহুম আলহাজ্ব হাসান আলী মাষ্টার।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।