মায়ানমারের জলসীমায় সেদেশের নৌবাহিনী কর্তৃক আটক ৭২৭ জনের মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ১২জনের নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। আটকৃতদের গতকাল বুধবার মংডুতে নিয়া আসা হয়। এর আগে গত শুক্রবার তাদের মায়ানমারের দক্ষিণ উপকূল থেকে আটক করা হয়েছিল।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত শুক্রবার সাগরে একটি নৌকা ভাসমান অবস্থায় ৭২৭জনকে আটক করে মায়ানমার নৌ বাহিনী। এ বিষয়ে মায়ানমারের তথ্য মন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র আটকৃতদের বাংলাদেশ জলসীমায় পাঠানোর কথা একটি সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছিলেন। পরে খোজ নিয়ে জানা গেছে, আটকৃত আরোহীদের মধ্যে প্রাথমিক ভাবে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১২ জনের নাগরিকতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশের এসআই আজম খান ও এসআই মো: ফরিদুল আলম এবং এসআই এমরানের নেতৃত্বে পৃথক দুটি টিম উপজেলার আশারতলী, প্রধানঝিরি, মেহেরপুর, কালুকাটা ও সোনাইছড়ি গ্রামে সরেজমিন তদন্তে তাদের নাম পরিচয় নিশ্চিত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
আটকৃতদের মধ্যে রয়েছে- নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের আশারতলী গ্রামের মো: জামাল, পিতা- মো: হোসেন, নুরুল ইসলাম, পিতা- আবু শামা, প্রধানঝিরি গ্রামের জালাল আহাম্মদ, পিতা- গোলাম হোসেন, আশারতলী এলাকার মনসুর আলী, পিতা- মৃত আলী আহাম্মদ বলী, প্রধানঝিরি গ্রামের ফারুক আহমদ, পিতা- মৃত শফিকুর রহমান, মেহেরপুর এলাকার রহিম উল্লাহ, পিতা- নুরুল হক, আমিনুল্লাহ, পিতা- পিতা-আবুল হোসেন, কালুকাটা গ্রামের শামসুল আলম, পিতা- বেলায়েত আলী, মেহেরপুর এলাকার আবদুচ্ছবি, পিতা- মনির আহাম্মদ, আশারতলীর মো: ফরিদুল আলম, পিতা- মোহাম্মদ শফি, সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বটতলী গ্রামের মুজিব, পিতা- নুরুল আলম।
আশারতী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য নুর হোসেন, সোনাইছড়ি ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম, প্রধানঝিরি গ্রামের গ্রাম পুলিশ মো: কামাল মায়ানমারে আটকৃতদের মধ্যে তাদের এলাকার ১২ জনের নাম থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
নাগরিকতা নিশ্চিত করার কথা স্বীকার করে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ মো: আবুল খায়ের জানিয়েছেন, থানার এসআই আজম খান ও এসআই মো: ফরিদুল আলমের মাধ্যমে সরেজমিনে ও পরিবারের তথ্যাদি যাচাই করা হয়েছে।
এদিকে গত কয়েক বৎসর যাবত নাইক্ষ্যংছড়িতে মানবপাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করে এখানকার বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ মালেশিয়ায় পাড়ি দিচ্ছে। অনেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আটক হয়ে সাজাভোগসহ কেউ কেউ পালিয়ে ফেরত আসতে সক্ষম হয়। তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ির চিহ্নিত কিছু মানবপাচারকারী ও বিদেশ ফেরত ব্যক্তি বহিরাগত প্রভাবশালী মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রলোভন দেখিয়ে বিশেষ করে মালেশিয়ায় যেতে বাধ্য করছে। সম্প্রতি মানবপাচারের বিরুদ্ধে প্রশাসন সক্রিয় হলে পাচারকারীদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে অন্তত ৪৭ জন মানবপাচারকারী সন্দেহে নামের তালিকা পৌছেছে। যার মধ্যে রয়েছে উপজেলার আদর্শগ্রাম, আশারতলী, জামছড়ি, চাকঢালা, ব্যবসায়ীপাড়া, ঠান্ডাঝিরি, প্রধানঝিরি, দক্ষিণ ছালামীপাড়া, চেরারমাঠ, কালুকাটা, চাকঢালা বাজারপাড়া, কম্বনিয়া, রূপনগর, বাগানঘোনা, তুমব্রু, ঘুমধুম সোনাইছড়ি বটতলী গ্রামের অনেকের নাম। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছেনা সংশ্লিষ্টরা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।