১৫ এপ্রিল, ২০২৫ | ২ বৈশাখ, ১৪৩২ | ১৬ শাওয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  সিবিআইইউ’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে।   ●  গভীর রাতে পাহাড়ের মাটিভর্তি একটি ড্রাম ট্রাক( ডাম্পার) জব্দ করেছে কক্সবাজার বনবিভাগ   ●  অস্ত্র উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিলে জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন এসআই খোকন কান্তি রুদ্র   ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন   ●  প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার   ●  পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি’১৮ ব্যাচের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন   ●  উখিয়া সমাজসেবা কর্মচারীর নামে বিধবা ভাতা’র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ   ●  ‘পটভূমি পরিবর্তনের জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য’ – সরওয়ার জাহান চৌধুরী

মুফতি হান্নানের ফাঁসি সময়ের ব্যাপার

সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তিন ব্যক্তি হত্যার দায়ে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ তিন জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করা এখন সময়ের ব্যাপার। ওই হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ড রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে মুফতি আব্দুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুলের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ গতকাল রবিবার এ বিষয়ে আদেশ দেন। এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিভিউ আবেদন না করায় তাঁর সাজা কার্যকর করার প্রক্রিয়াও একই সঙ্গে সম্পন্ন হবে। আপিল বিভাগের রায়ের পর ওই তিন জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করতে আর কোনো আইনি বাধা নেই। তবে সংবিধান অনুযায়ী ওই তিন আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। মুফতি হান্নানের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার সাহা।

আপিল বিভাগের আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও তাঁর সফরসঙ্গীদের হত্যা করার জন্যই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই হামলা চালানো হয়েছিল। হামলায় তিন ব্যক্তি মারা যান। তাঁদের একজন ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন, বাকি দুজন হাসপাতালে। ফলে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটনের অপরাধ মার্জনা করার কোনো সুযোগ নেই।

আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর তাঁরা যদি প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন তাহলে রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাঁর ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাবিধি অনুযায়ী কত দিনের মধ্যে দণ্ড কার্যকর করতে হবে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাত দিনের আগে নয়, তবে ২১ দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। তিনি বলেন, রিভিউ আবেদন খারিজের রায় অবগত হওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ আসামিদের জিজ্ঞেস করবেন রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁরা প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন কি না। যদি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চায় তাহলে সে আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। আর যদি না চায় তাহলে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় দণ্ড কার্যকর করবে। কারাবিধি মেনেই সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আসামিদের দণ্ড কার্যকর করার ব্যাপারে কারা কর্তৃপক্ষ ও রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নেবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, জঙ্গি হামলায় মুফতি হান্নানের নেতৃত্ব ও ইন্ধন ছিল—এটা খুবই পরিষ্কার। সম্প্রতি প্রিজন ভ্যানে এবং গত কয়েক দিনে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলাচেষ্টা মুফতি হান্নানকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্যই। আর এ ব্যাপারে রাষ্ট্র এরই মধ্যে সতর্কতা অবলম্বন করেছে।

ঢাকার ডিআইজি প্রিজন মো. তৌহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, রিভিউ আবেদন খারিজের আদেশ পাওয়ার পর আসামির কাছে জানতে চাওয়া হবে তিনি বা তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করবেন কি না। এ জন্য তাঁদের সাত দিন সময় দেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন না করলে কারাবিধি অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকর করা হবে। আর যদি আবেদন করে সে ক্ষেত্রে তাঁদের আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গতকাল আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানিকালে তাঁদের আইনজীবী নিখিল কুমার সাহা বলেন, ‘কনডেম সেলে দীর্ঘদিন ধরে মৃত্যুর প্রহর গুনছে আসামিরা। নিম্ন আদালতেও বিচার শেষ হতে অনেক সময় লেগেছে। এই বিবেচনায় তাদের সাজা কমানো হোক। তাদের মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হোক। ’

ওই পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এখন কারাগারগুলোতে সেই আগের মতো কনডেম সেল নেই। এখনকার কনডেম সেলে আসামিরা আরাম-আয়েশেই থাকে। তাই সাজা কমানোর জন্য কোনো আইনি যুক্তি হতে পারে না। এ ছাড়া রায়ের কোনো আইনগত ত্রুটিও খুঁজে বের করতে পারেনি। ’ পরে আদালত মুফতি হান্নান ও বিপুলের রিভিউ আবেদন দুটি খারিজ করে আদেশ দেন।

আসামিপক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। এতে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখা হয়। ওই বছরের ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ১৪ জুন রায় হাতে পাওয়ার পর ১৪ জুলাই আপিল করে আসামিপক্ষ। শুনানি শেষে গত বছর ৭ ডিসেম্বর রায় দেন আপিল বিভাগ। রায়ে মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। গত ১৭ জানুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর কারাগারে মৃত্যুপরোয়ানা পাঠানো হয়। কাশিমপুর কারাগারে মুফতি হান্নানকে তা পড়ে শোনানো হয়। এ অবস্থায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মুফতি হান্নানের পক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড নাহিদ সুলতানা রিভিউ আবেদন দাখিল করেন।

প্রায় ১৩ বছর আগে ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে গ্রেনেড হামলায় আনোয়ার চৌধুরীসহ অনেকে আহত হন। নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন। পরে পুলিশ বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় বেনামি আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই মুফতি হান্নানসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। পরে সম্পূরক চার্জশিটে আরেক জঙ্গি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ও মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন মুফতি হান্নানসহ কারাবন্দি আসামিরা। এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য নিম্ন আদালত থেকে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।