জাতীয় নির্বাচনকে লক্ষ্য করে সারাদেশে ৩০ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্রে কর্মীবাহিনীর ব্যবস্থা করতে যুবলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সদস্য সচিব নুর-ই-আলম চৌধুরী লিটন এমপি।
রোববার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নুর-ই-আলম লিটন চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে নমিনেশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের নেতাকর্মীদের চেনেন। তিনি যাকে মনে করবেন বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে যোগ্য তাকেই হয়তো নমিনেশন দেবেন। তাদের নিয়েই আমরা আগামী নির্বাচনে আরেকবার প্রধানমন্ত্রীকে বিজয় উপহার দিতে পারব।
বিএনপির সরকারবিরোধী বিভিন্ন সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, তারা সমালোচনা করবে, অনেক অপবাদ দেবে। অনেকভাবে আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর চেষ্টা করবে। এগুলো তাদের কৌশল এবং অপপ্রচার। এগুলো হবেই। যা মোকাবেলা করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে।
যুবলীগ চেয়ারম্যানকে সংগঠন শক্তিশালী করার অনুরোধ জানিয়ে নুর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা যেন নৌকার ভোটকে রক্ষা এবং আরো বৃদ্ধি করতে পারি। এ লক্ষ্যে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই হয়তো আমরা বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার ঋণ শোধ করতে পারব। সরকারের এখনো ১৮ মাস আছে। প্রধানমন্ত্রী এই ১৮ মাসে বাংলাদেশকে আরো অনেক কিছু দেবেন। আমরা তার কাছ থেকে আরো অনেক কিছু পাব।
আওয়ামী লীগের যত কর্মীবাহিনী আছে তা যেকোনো নির্বাচনে জয়যুক্ত হওয়ার মতো দাবি করে তিনি বলেন, যুব নেতৃবৃন্দকে নির্বাচনের ট্রেনিং দিতে হবে। আগামী দিনে কীভাবে নির্বাচন হবে, কীভাবে নির্বাচন করব, সেটার একটা পরিকল্পনা করতে হবে। আমাদের যেসব ভোটকেন্দ্র আছে সেখানে আমাদের ভোট যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে। জনগণের ভোট যেন ভোটের বাক্সে পড়ে- এটাই হবে যুবলীগের দায়িত্ব। এটার দায়িত্ব আমাদের ভাগ করে নিতে হবে।
‘প্রায় ৩০ হাজারের ওপর সেন্টার আছে; এই ৩০ হাজার সেন্টারে কীভাবে আমরা সেখানে আমাদের কর্মীবাহিনী রাখব, যারা আমাদের ভোট রক্ষা করবে এবং ভোটারদের আনবে। সেটার ব্যবস্থা করতে হবে।’
তাই এই সময়ের মধ্যে যেসব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে কমিটি নেই, সে কমিটিগুলো করতে হবে। আমার নিজের জেলায় যুবলীগের কমিটি প্রায় ১৭/১৮ বছর হচ্ছে। তাহলে আমি যতই কথা বলি, যতই মিটিং করি কোনো লাভ হবে না। আমার পুপলারিটি গেইন করার জন্য শেখ হাসিনাই একশ। আমার দরকার নেই। কিন্তু আমি কী করলাম। আমি থানার কমিটি করতে পারছি না। আমি কোথাও জেলা কমিটি করতে পারছি না। তাহলে ১০ বছর পরে কোন যুবসমাজ নির্বাচন করবে। তারা তো নির্বাচন সম্পর্কেই জানবে না।
তাই যুবলীগের যেসব জেলা-উপজেলায়, থানা, ইউনিয়নে কমিটি নেই, সেখানে নতুন করে কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন করে আগামী নির্বাচনে একটা শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
যুবলীগ নেতাদের মনোনয়ন প্রত্যাশার ব্যাপারে তিনি বলেন, এখানে যুবলীগের মনোনয়নের (নমিনেশন) কথা বলা হয়েছে। যুবলীগ তো সবসময় নমিনেশন পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পর থেকে সবকটি নির্বাচনে। আজকে যারা সংসদে নেতৃত্ব দেয়, আজকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আছেন, তারা এক সময় কেউ যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন। আজকে মন্ত্রী পরিষদেও যারা আছেন, তারাও এক সময় যুবলীগের দায়িত্বে ছিলেন। আজকে সংসদে প্রায় ৩০/৪০ জন এমপি আছেন যারা একসময় যুবলীগের কর্মী ছিলেন।
মনোনয়নে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগ- এমন ভাগ করে লাভ নেই। যারা নির্বাচনে জয়যুক্ত হতে পারবে, শেখ হাসিনা তাদেরই মনোনয়ন দেবেন। তিনি সারাদেশের নেতাকর্মীকে চেনেন। এখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নাই। তিনি যাকে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে যোগ্য মনে করবেন, তাকেই হয়তো নমিনেশন দেবেন।
এর আগে যুবলীগ নেতারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে যুবলীগ থেকে মনোনয়নের জন্য যুবলীগ চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য দেন। এ প্রেক্ষিতে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা অনেকেই প্রার্থী। আপনাদের বক্তব্যে একথা এসেছে। আমাদের বলার কেউ নেই। এই বলার মানুষটিই আজকে আমাদের কাছে এসেছে। অনেকেই প্রার্থী, আমি জানি। আমাদের সাধারণ সম্পাদক সাহেবও প্রার্থী। আমার ডান-বামদিকে অনেকেই প্রার্থী আছেন। সম্রাট ভাইও আছে। এটা স্বাভাবিক। যেহেতু আপনারা রাজনীতি ও দল করেন, এ কারণেই প্রার্থী। কিন্তু মূল বিষয়টি আপনারাই বলেছেন। নেত্রী যাকে যাকে প্রার্থী করবে তার পক্ষেই যুবলীগ কাজ করবে।
যুবলীগ চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সভাপতিত্বে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সহিদ সেরনিয়াবাত, মজিবুর রহমান চৌধুরী, ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরন, আব্দুস সাত্তার মাসুদ, আতাউর রহমান, আনোয়ারুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হক আসাদ, কার্যনির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মাইনউদ্দিন রানা ও রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।