বাংলাদেশ সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর ‘বিশেষ গুরুত্ব’ দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘বিতর্কিত’ নির্বাচন থেকে শুরু করে বিএনপির প্রতি সরকারের আচরণ, দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা, গুম, খুন, হয়রানি এবং ওই নির্বাচনে ভারতের অবস্থান নিয়ে কথা বলবেন তিনি। মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ের সারসংক্ষেপ ইতিমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে একটি লিখিত বক্তব্যও মোদির হাতে তুলে দেওয়া হবে। দলীয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, রোববার বিকেল ৪টায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে মোদি-খালেদার এই বৈঠক হবে। প্রায় আধা ঘণ্টা তারা বৈঠক করবেন। এতে যোগ দিতে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তিনি তার বাসভবন থেকে রওনা দেবেন। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, তরিকুল ইসলাম, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের প্রতিনিধি দল অংশ নিতে পারে।
গুলশান কার্যালয় সূত্র জানায়, মোদি-খালেদা বৈঠকের বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি যাতে দ্রুত সমাধান হয় সেই অনুরোধ করবেন তিনি। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত চুক্তিসহ অন্য যেসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেজন্য মোদি সরকারকে ধন্যবাদ জানাবেন বিএনপি প্রধান। বৈঠকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি, দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, খুন-গুম ও গ্রেফতার-হয়রানির বিষয়গুলো ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবেন তিনি। ভারতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকা দলের যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রসঙ্গটিও মোদি-খালেদা বৈঠকে উঠে আসতে পারে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে, এমন অবস্থান নিতে মোদি সরকারকে অনুরোধ করবেন বিএনপি নেত্রী।
এদিকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল কোনো পদে বা বিরোধী দলে না থাকায় মোদির সফরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সময় থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিলে শেষ পর্যন্ত বৈঠকের সময়সূচি ঠিক হওয়ায় খুশি দলটির নেতা-কর্মীরা। তাদের মতে, এই বৈঠক বিএনপির রাজনৈতিক টার্নিংপয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে। ২০১৩ সালের ৪ মার্চ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকটি হরতালের অজুহাতে বাতিল করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে ভুল করেছেন তা শুধরিয়ে নিতে চান তিনি। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি করতে সব ধরনের প্রতিশ্রুতি দেবেন বিএনপি প্রধান।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে নরেন্দ্র মোদির জন্য বেশ কিছু উপহার নিয়ে যাবেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে রয়েছে মোদির জন্য পায়জামা-পাঞ্জাবি, তার মায়ের জন্য জামদানি শাড়ি। এ ছাড়া দেশীয় বেশ কিছু উপহারসামগ্রী দেবেন।
বিএনপির নেতারা আশা করছেন, সমমর্যাদার ভিত্তিতে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, অমীমাংসিত ইস্যু এবং বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারে’ জনগণের পশে থাকবে মোদি সরকার। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে সময় অনুযায়ী ভারতের নতুন সরকার ‘চাপ প্রয়োগ’ করবে, সে আশাও পোষণ করেন তারা। দুই দেশের জনগণের মতামতের ভিত্তিতে ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।
যেমনটি বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ। তিনি বলেছেন, একটি বড় গণতান্ত্রিক দেশের প্রধান হিসেবে ভারতের প্রধানমন্দ্রী নরেন্দ্র মোদি তার বাংলাদেশ সফরে ‘গণতান্ত্রিক সরকার’ প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেবেন।
হান্নান শাহ বলেন, ‘ভারত দাবি করে, তাদের দেশে সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম আছে। তাদের সংবিধানেও আছে, প্রয়োজনে অন্য দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুসংহত করতে কাজ করবে তারা। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে তারা (ভারত) এদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাননি। উল্টো ভোটারবিহীন নির্বাচনে পক্ষে ছিলেন, যেখানে অর্ধেকের বেশি সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি গণতন্ত্রের একজন প্রবক্তা। গণতন্ত্রের স্বার্থে এদেশে যাতে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, সেজন্য রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারের মধ্যে থেকে তিনি তার সফরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।