বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, আসন্ন রমজানে চাহিদার চেয়েও বেশি নিত্যপণ্য সরবরাহ ও মজুদ রয়েছে।
তিনি বলেন, গতবারের মতো এবারও কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না। শুধু রোজা নয়, সারাবছরই বাজার স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল থাকবে। সরকার যে কোনো মূল্যে বাজার জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখবে।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের আগে তিনি এ কথা বলেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, বিপণন, মূল্য স্থিতিশীল ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের এই সভায় আহবান করে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু রমজান নয়, সারাবছরের জন্যই যৌক্তিক মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া সরকারের অঙ্গিকার। গতবার রমজানের আগে ব্যবসায়িরা অঙ্গিকার করেছিলেন, দাম বাড়বে না, তারা কথা রেখেছেন। এই জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। ব্যবসায়ীদের ওপর আমার আস্থা রয়েছে। এবারও তারা সেই ব্যবস্থাই নেবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসমুহের সরবরাহ দেশজ উৎপাদন এবং আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ব্যবসায়িদের সহযোগিতায় এবার চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য চাহিদার বেশি পরিমাণ মজুদ রয়েছে।
মন্ত্রী জানান, দেশে বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দেশি উৎপাদন প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন ও অপরিশোধিত পাম তেল আমদানি করে পরিশোধন করার পর দেশি চাহিদা পুরণ করা হয়।
প্রতিমাসে গড়ে একলাখ দশ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন ও পাম তেলের দেশীয় চাহিদা ছাড়াও পবিত্র রমজানে ও ঈদুল ফিতরে বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জুলাই ১৪ থেকে এপ্রিল ১৫ পর্যন্ত ১১ লাখ ৬৭ মেট্রিকটন ভোজ্যতেল (পরিশোধিত-অপরিশোধিত) আমদানি হয়েছে। এনবিআর তথ্যমতে, দেশে ১৬ লাখ ৫৯ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল প্রবেশ করেছে।
মন্ত্রী বলেন, খোলা সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য প্রতি লিটার ৮০ থেকে ৮২ টাকা। বোতলজাত এর মূল্য ৯৩ থেকে একশ টাকা এবং পামতেলের মূল্য ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। গতবারের তুলনায় ১৮ শতাংশ ও ৩০ শতাংশ কম বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চিনির সরবরাহ উল্লেখ করে তোফায়েল বলেন, দেশে ১৩ থেকে ১৪ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত চিনির চাহিদা রয়েছে। এনবিআর তথ্যমতে, ১৪ লাখ ৮ মেট্রিক টন চিনি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ সুগার কর্পোরেশনের কাছে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন চিনি মজুদ রয়েছে।
বর্তমান বাজারে চিনির খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ৩৮ টাকা থেকে ৪২ টাকা। যা গতবারের চেয়ে দশ শতাংশ কম। এভাবে মশুর ডালের চাহিদা ৩ লাখ ৭৫ হাজারের বিপরীতে দেশি উৎপাদন প্রায় সোয়া দুলাখ মেট্রিকটন এবং এলসি নিষ্পত্তি করা ১ দশমিক ৯ লাখ মেট্রিক টন মশুর ডাল মিলিয়ে এবার সরবরাহ বেশি হয়েছে। মশুর ডালের খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ৮৫ থেকে ১২০ টাকা। ছোলার চাহিদা রয়েছে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশি উৎপাদন প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন। বাকী প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করা হয়েছে। বর্তমান খুচরা বাজারে ছোলার মূল্য ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। স্থানীয় বাজারে ছোলার মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রমজানে প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিকটন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। এনবিআর তথ্যমতে, ১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রায় ১৭ হাজার মেট্রিক টন খেজুর প্রবেশ করেছে। খেজুরের খুচরা মূল্য ৮০ থেকে ২২০ টাকা। একইভাবে পিঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, বিবিধ মসলাও চাহিদার বিপরীতে বেশি সরবরাহ রয়েছে।
তোফায়েল বলেন, মন্ত্রী হিসেবে বাজার তদারকি করা আমার পছন্দ নয়। আল্লাহর রহমতে আগেও দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। বাজার স্থিতিশীল ছিল। ভবিষ্যতেও বাজার স্বাভাবিক থাকবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ৯১ দিন অবরোধ ডেকে খালেদা দেশের সাপ্লাই চেইন ধ্বংসের চেষ্টা করেছিলেন। কিছুটা ক্ষতি হলেও আপনারা ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না, কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়ে ঘরে ফিরে গেছেন।
বৈঠকে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনসহ দেশের শীর্ষব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, আইন প্রয়োগকারি সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।