নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে বাছাই কমিটি গঠনের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে ‘সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব’ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া তিনটি বিষয়ের পর জোর দিয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে বাছাই কমিটিতে বিএনপির কাদের নাম প্রস্তাব করেছে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে রাজি হননি মির্জা ফখরুল।
রোববার বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের পর সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাছাই কমিটি সম্পর্কে তার সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছেন। আশা করছি, রাষ্ট্রপতি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পদ্ধতিগত বিষয় নির্বাচন করবেন। পরে পুনরায় আবারো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এটি পরিপূর্ণ করবেন।’
নির্বাচন কমিশন গঠনের এই প্রক্রিয়া রাষ্ট্রপতি আগামী মাসের মধ্যেই শেষ করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তিনটি প্রধান বিষয় হচ্ছে, নিরপেক্ষ বাছাই কমিটি গঠন, সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য ও সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং আরপিও সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণ।’
রাষ্ট্রপতি এই পদ্ধতিগত বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি সমাধানে আসবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আমরা খুশি হয়েছি। আশাবাদী হয়েছি। রাষ্ট্রপতি একজন আপাদমস্তক রাজনৈতিক নেতা, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি দেশের রাজনৈতিক সংকট উত্তরনে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করবেন।’
প্রায় এক ঘন্টাব্যাপি স্থায়ী ওই আলোচনা অত্যন্ত সৌহার্দ্য ও উষ্ণ পরিবেশে হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তার স্বভাবসুলভ আন্তরিকতা দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে।’বিএনপির আশা সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেবেন রাষ্ট্রপতি
ইসি নিয়ে আলোচনার জন্য বিএনপি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানোর প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতি প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে ডেকেছে বলে জানান মির্জা ফখরুল।
‘তিনি (রাষ্ট্রপতি) একথা উল্লেখ করেছেন, যেহেতু আপনারা ইসি গঠনে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া আহ্বান জানিয়েছেন, সে জন্য আপনাদের আগে ডেকেছি। আপনাতের মতামত নিতে চেয়েছি। রাষ্ট্রপতি মনে করেন, সকলের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য ও সাহসী ইসি গঠন প্রয়োজন। এ জন্য সকল রাজনৈতিক দলের মতামত প্রয়োজন’ বলেন বিএনপি মহাসচিব।
নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালীকরণে গত ১৮ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে যে প্রস্তাবনাগুলো রেখেছেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় মুলত সেগুলোই তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান মির্জা ফখরুল। খালেদা জিয়ার ওই প্রস্তাবের একটি কপি রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলেও এ সময় জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই প্রস্তাবে যেটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে, সকল দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে ইসি গঠন করতে হবে। ইসি নিয়ে যেহেতু কোনো আইন গঠন হয়নি, সেহেতু সকল রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতেই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে বিএনপি মনে করে।’
ইসি নিয়ে খালেদা জিয়া প্রস্তবনা দেওয়ায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাকে (খালেদা জিয়া) ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি বলেছেন ভবিষ্যতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এই প্রস্তাবনা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। আলোচনার মাধ্যমেই সৃষ্ট সংকটের সমাধানে পৌঁছাতে হবে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। নতুন যে নির্বাচন কমিশন হবে তার অধীনেই ২০১৯ সালে হবে একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নতুন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নিতে রোববার থেকে আলোচনা শুরু করছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। প্রথম দিন বিএনপির সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রতিনিধিদলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ছিলেন।
-পূর্বপশ্চিম
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।