রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতির (প্রভিশন) ঘাটতি প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থার খেলাপি ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। আর মোট ঘাটতির সিংহভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের।
খেলাপি ঋণের উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ সময় ছয়টি ব্যাংকের মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণেই ব্যাংকিং খাতে বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ। আর এ সময়ে যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানুয়ারি-মার্চের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, এ তিন মাসে ব্যাংক খাতে নিয়মিত খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
এ সময়ে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতিতে পড়েছে ছয় ব্যাংক। এ তালিকায় সরকারি খাতের তিনটি ও বেসরকারি খাতের ৩টি ব্যাংক রয়েছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে-রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড এবং বেসিক ব্যাংক লিমিটেড।
বেসরকারি খাতের মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ছয় ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি দুই হাজার ৮৮০ কোটি, সোনালী ব্যাংকের ২ হাজার ১০৩ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ১ হাজার ৪৯৬ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ২৯০ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৫১১ কোটি টাকা ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২১২ কোটি টাকা।
তবে আলোচিত সময়ে অনেক ব্যাংকের প্রভিশন উদ্বৃত্ত থাকায় ব্যাংকিং খাতে মোট প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৩২ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো ধরনের ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না।
এ বিষয়ে সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেশি। তাদের প্রোফিট করার যোগ্যতা নেই। তাই তাদের প্রভিশন ঘাটতি বাড়ছে। তবে বাজে বিষয় হচ্ছে প্রতিবছর জাতীয় বাজেট থেকে এ ঘাটতির টাকা দিচ্ছে সরকার। যা অনৈতিক। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চের শেষে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৪১ হাজার ৯২০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৮৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৩২ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।