মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মানবাধিকার-বিষয়ক একটি প্রতিনিধি দল ৭ জানুয়ারি ঢাকা আসছে। তিনদিনের সফরে প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশেরে কক্সবাজার জেলায় বৈধ-অবৈধভাবে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘের রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি মিয়ানমার। ফলে জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা নেবে। এজন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন জেলাগুলোয় সফর করবে প্রতিনিধি দলটি। দলের সদস্য সংখ্যা হবে তিন থেকে পাঁচজন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে গত বছরের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। মানবিক কারণে তাদের এখানে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় কেউ রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশে আসতে চাইলে আমরা তাদের স্বাগত জানাব। বাংলাদেশে আসার পর জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নিজেরা নিজেদের মতো করে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাত্কার নেবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, এর আগে গত মাসে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছিলেন। ক্যাম্প পরিদর্শনের পর ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের মানবেতর অবস্থায় জীবনযাপনের বিষয়ে কথা বললেও মূল সমস্যা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। জাকার্তাকে এ বিষয়ে আরো সংবেদনশীল হওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
জানা গেছে, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য মালয়েশিয়ায় ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) একটি জরুরি বৈঠকও আহ্বান করা হয়েছে। কুয়ালালামপুরে ১৯ জানুয়ারি বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকটিতে অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ। ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ওই বৈঠকে একটি সমাধান চিহ্নিত করে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র আরো জানায়, রাখাইন প্রদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার বিষয়টিকে দেশটির সরকার যে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, তা বোঝানোর জন্য ঢাকায় বিশেষ দূত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে মিয়ানমার। বিশেষ দূতের সফর চলাকালে দ্বিপক্ষীয়ভাবে প্রতিশ্রুত ২ হাজার ৪৯৫ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বৈঠকে দেশে বিভিন্ন সময়ে অনুপ্রবেশকারী নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের বিষয়টিও তুলে ধরা হবে।
প্রসঙ্গত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে তিন লাখ রোহিঙ্গা অভিবাসী অবস্থান করছে। অন্যদিকে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে আরো ৫০ হাজার রোহিঙ্গা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।