কক্সবাজারে হামের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যেখানে দশ লাখে ৪ জনের এ রোগ ধরা পড়ত, এখন ধরা পড়ছে ৪৫৩ জনের। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর শতগুণের বেশি এ রোগের প্রাদূর্ভাব বেড়েছে। এর পেছনে সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দায়ী করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিভাগ কক্সবাজার জেলাব্যাপী বিশেষ টিকাদান কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। গতকাল শনিবার থেকে শুরু হওয়া উক্ত কর্মসূচী আঠার দিনব্যাপী চলবে বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ করে জেলাব্যাপী বিশেষ করে উখিয়া-টেকনাফে হামের প্রাদূর্ভাব ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করার দ্রুত বিশেষ টিকাদান কর্মসূচী গ্রহণের জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গতকাল শনিবার থেকে কক্সবাজার জেলার ১১২টি স্থায়ী কেন্দ্রে এবং আরো ১৮২৩টি অস্থায়ী কেন্দ্রে একযোগে টিকাদান কর্মসূচী শুরু হয়েছে বলে জানান সহকারী সিভিল সার্জন ডা. মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর।
তিনি জানান- টিকাদান কর্মসূচী আগামী ১৫ মে পর্যন্ত চলবে এবং এতে ৫ মাস থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের হাম-রুবেলা রোগের টিকা খাওয়ানো হবে। যারা ইত:পূর্বে টিকা নিয়েছে তারাও এ টিকা নিতে পারবে। তবে অসুস্থ ও আগে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়েছে এমন শিশুদের এ টিকা দেওয়া হবে না। এ কর্মসূচীতে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ১৩৮ জন শিশুর মাঝে টিকা খাওয়ানোর লক্ষ্য রয়েছে বলে তিনি জানান।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. পু চ নু জানান- গত বছরের অক্টোবরের পর থেকে কক্সবাজার জেলায় ব্যাপক ভাবে নতুন রোহিঙ্গা আসার কারণে এ রোগের প্রাদূর্ভাব বেড়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। কারণ রোহিঙ্গা শিশুরা ‘অরক্ষিত’, তাদেরকে কোন রোগ প্রতিরোধক টিকা দেওয়া হয় না।
প্রসঙ্গত: গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশের ৩টি ফাঁড়িতে একযোগে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিজিপির ৯ জন সদস্য ছাড়াও ৭ জন হামলাকারী নিহত হয়। ঘটনার জন্য রোহিঙ্গাদের দায়ী করে আসছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এরপর থেকেই প্রায় ৬ মাস ধরে চলে সেনা অভিযানে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত এবং সহ¯্রাধিক মানুষ আহত ও শতাধিক নারী ধর্ষণের শিকার হয়। এসময় দলে দলে বাংলাদেশে চলে আসে রোহিঙ্গারা। বর্তমানে প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান নিয়েছে। যার অধিকাংশই শিশু।
কক্সবাজারের বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এম এন আলম জানান- হাম ও রুবেলা একটি ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ। এটাকে তিন দিনের হামও বলা হয়ে থাকে। যেকোন বয়সের মানুষ রুবেলা আক্রান্ত হতে পারে। তবে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে এটি সংক্রমিত হয় বেশি। এ রোগে আক্রান্ত শিশু প্রতিবন্ধীতে পরিণত হতে পারে।
তিনি জানান- এ রোগে সর্দি, কাশি, মাথাব্য থা ও সামান্য জ্বর (১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত) হয় এবং কানের পেছনে ও ঘাড়ে লিম্ফ গ্ল্যান্ড ফুলে যায়। তাছাড়া গীটে গীটে ব্য থা এবং চামড়ায় হাল্কা লাল বা গোলাপী রঙের রেশ (ৎধংয) হতে পারে। তিন দিন পর সাধারণতঃ জ্বও সেরে যায়, চামড়ায় রেশ থাকলে তাও আস্তে আস্তে চলে যায়। তবে আক্রান্তদের মধ্যে গর্ভবর্তী মহিলাদের এক পঞ্চমাংশের ডেলিভারিতে মৃত সন্তান প্রসব হতে দেখা যায়। বাকিদের মধ্যে হৃদযন্ত্রে জন্মগত ত্রুটি, বধিরতা, ছানিযুক্ত চোখ ও অন্ধত্বসহ বিভিন্ন জন্মগত সমস্যা হতে পারে। তাদের অনেকে মানসিক প্রতিবন্ধী হয়, পড়াশোনায় আগাতে পারে না এবং দৈহিক বৃদ্ধিও কম হয়।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।