২২ এপ্রিল, ২০২৫ | ৯ বৈশাখ, ১৪৩২ | ২৩ শাওয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  টেকনাফে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ডাকাতদলের গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১   ●  সিবিআইইউ’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে।   ●  গভীর রাতে পাহাড়ের মাটিভর্তি একটি ড্রাম ট্রাক( ডাম্পার) জব্দ করেছে কক্সবাজার বনবিভাগ   ●  অস্ত্র উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিলে জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন এসআই খোকন কান্তি রুদ্র   ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন   ●  প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার   ●  পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি’১৮ ব্যাচের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন   ●  উখিয়া সমাজসেবা কর্মচারীর নামে বিধবা ভাতা’র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ১৯৯২ সালের মিয়ানমার নীতিতে যা আছে

কক্সবাজার সময় ডেস্কঃ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকার ও দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি বাংলাদেশের সঙ্গে ১৯৯২ সালে স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিকে ভিত্তি হিসেবে দাবি করে আসছে। ১৯ সেপ্টেম্বর দেওয়া ভাষণে সু চি উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের এই যৌথ ঘোষণার ভিত্তিতে ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত মিয়ানমার। সোমবার (২ অক্টোবর) বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকের পর মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিবৃতিতেও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয় ১৯৯২ সালের ২৮ এপ্রিল। যৌথ ঘোষণাটিতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন ওই সময়কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএসএম মোস্তাফিজুর রহমান এবং মিয়ানমারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ ওহন গিয়াউ।

যৌথ ঘোষণা অনুসারে মিয়ানমারের ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ওই বছরের ২৩ থেকে ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সফর করে। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটিতে ছিলেন দেশটির তথ্যমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিয়ো থান্থ। যৌথ ঘোষণার তৃতীয় দফায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অবস্থানরত মিয়ানমারের শরণার্থী রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সংক্ষেপে তুলে ধরেন এবং নিম্নলিখিত চারটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন:
• মিয়ানমার থেকে মানুষের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
• শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন তাদের মূল আবাসস্থলে সম্মানজনক, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ হতে হবে।
• আস্থা অর্জনের পদক্ষেপ হিসেবে সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার/কমিয়ে আনা।
• ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য দীর্ঘমেয়াদি সমাধান গ্রহণ।

ওই যৌথ ঘোষণার ষষ্ঠ দফায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে উভয় দেশের ঐকমত্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন, প্রত্যাবাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় এবং স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে সমস্যাটি সমাধানে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
উল্লেখিত পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষ মতবিনিময় শেষে নিম্নলিখিত বিষয়ে একমত হয়:
১) উভয় পক্ষ বন্ধুত্বপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে শরণার্থী সমস্যার সমাধান এবং সীমান্তে আস্থা, সৌহার্দ্য ও শান্তি বজায় রাখার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে।
২) উভয় পক্ষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি পূর্ণাঙ্গরূপে অনুসরণে সম্মত হয়েছে।
৩) মিয়ানমার সরকার দেশটির বাসিন্দাদের বাংলাদেশে প্রবেশ ঠেকাতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। যারা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে এসেছে তাদের স্বেচ্ছায় ও নিরাপদে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে উৎসাহ দেবে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মানদণ্ডের বিষয়টি ৬ষ্ঠা দফার চতুর্থ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সরকার সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে যাচাই প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের যেসব বাসিন্দা শরণার্থী কার্ড দ্বারা বাংলাদেশে নিবন্ধিত এবং যারা মিয়ানমারের বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণ দিতে পারবে তাদেরকেই ফিরিয়ে নেওয়া হবে। শরণার্থীদের যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী যাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব কার্ড, এই বিষয়ে মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেওয়া নথি রয়েছে এবং যারা মিয়ানমারের বাসিন্দা হিসেবে ঠিকানা বা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারবে তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। মিয়ানমারের বাসিন্দা হিসেবে যারা নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে তাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকবে না। তারা (মিয়ানমার) আরও নিশ্চয়তা দেয় যে, বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া তালিকার সঙ্গে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের যাচাই করা ব্যক্তিদের তালিকা প্রায় একই।

এই ষষ্ঠ দফার ৬ষ্ঠ ধারায় বলা হয়েছে, উভয়পক্ষ এই প্রত্যাবাসন নিরাপদ ও স্বেচ্ছামূলক হবে বলে একমত হয়। মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া ব্যক্তিদের নিজেদের বাড়িতে ও মূল জমিতে পুনর্বাসন করা হবে এবং তাদের মিয়ানমার সমাজের সদস্য হিসেবে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ দেওয়া হবে। বাংলাদেশ সরকার নিরাপদ ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর প্রতিনিধিকে সহযোগিতা করবে বলে সম্মত হয়। মিয়ানমার সরকার আরও সম্মত হয় যে, ইউএনএইচসিআর-র সহযোগিতা উপযুক্ত সময়ে চাওয়া হবে।

সপ্তম ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, মিয়ানমারের বাসিন্দাদের স্বেচ্ছায় ও নিরাপদ ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগ কমানোর লক্ষ্যে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরে ইউএনএইচসিআর-এর ভূমিকার স্বীকৃতি দেয় উভয় পক্ষ। মিয়ানমার পক্ষ আরও নিশ্চয়তা দেয় যে, মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এই লক্ষ্যে কাজ শুরু করবে।

অষ্টম ধারায় বলা হয়েছে, উভয় সরকার ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য ব্যাপক ও স্থায়ী সমাধানে একমত হয়।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক অভিযান জোরদার হওয়ার পর পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে থেকেই বাংলাদেশে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাস করছিল। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।