২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক   ●  সড়ক দখল করে নৈরাজ্য সৃষ্টি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারে আ.লীগের ৯১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

লাঞ্ছিত শিক্ষককে ‘হিন্দু রাজাকার’ দাবি করলেন এমপি কমল

বিশেষ প্রতিবেদকঃ রামুর প্রবীণ শিক্ষক সুনীল কুমার শর্মাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় বক্তব্য দিতে সাংবাদিকদের মুঠোফোন যোগাযোগে সাড়া না দিলেও গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছেন কক্সবাজার সদর আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল। এ বিবৃতিতে তিনি শিক্ষক সুনীল কুমার শর্মাকে হিন্দু রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুনীল শর্মা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শান্তি কমিটির সহযোগিতাকারি ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। শিক্ষকতাকালীন সময়ে সুনীল শর্মার বিরুদ্ধে একাধিক শিক্ষার্থী ধর্ষণেরও অভিযোগ রয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন এমপি কমল। আর সুনীল কুমার শর্মা তাকে (এমপি কমলকে) শিশুকালে কখনোই কোন ভাবে পাঠদান দেননি বলেও দাবি করেন তিনি।

তাঁর পাঠানো বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, গতকাল (১৬ জানুয়ারি) বিভিন্ন পত্রিকায় ‘শিক্ষককে লাঞ্ছিত করলেন সাংসদ কমল’ শিরোনামে সংবাদটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংবাদটি মোটেও সত্য নয়। মুলত: প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় নিয়ে উচ্চ বাক্য বিনিময় হয়েছিল। তাকে আমার শিক্ষক হিসেবে সংবাদে দেখানো হয়েছে। অথচ তিনি কখনো আমার শিক্ষক ছিলেন না। তিনি একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে শান্তি বাহিনীর সহযোগি ছিলেন এবং পাক হানাদারদের বাজার করে দিতেন, যাহা এলাকাবাসি জানেন। তিনি জিয়াউর রহমানের বিএনপি ও এরশাদ সরকারের জাতীয় পার্টির আমলে সক্রিয় নেতা ছিলেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীলীগ বিরোধী বক্তব্য রাখার কারণে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের দ্বারা ১৯৮৫ সালের উপজেলা নির্বাচনে, ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে ও ৯০ এর গণআন্দোলনে গনপিটুনীর শিকার হন।

এমপি কমল উল্লেখ করেন, তিনি (সুনীলশর্মা) একজন ধর্ষন মামলার অভিযুক্ত আসামি। রামু খিজারী বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জনৈক ছাত্রীকে ধর্ষন করিলে এলাকাবাসি তাকে হাতেনাতে ধরে গণধোলাই দেয়। এঘটনায় কারনে পরবর্তীতে ওই ছাত্রীর পর পর চার বার বিয়ে ভেঙ্গে যায়। উখিয়ারঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও অনুরুপ ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে গণধোলাইর শিকার হয়। তৎকালিন খালেদা জিয়া সরকারের আমলে বিএনপির নেতাদের মাধ্যমে তিনি সাজা ভোগ না করে সুবিধা অর্জন করেন। তিনি বর্তমানে বিএনপির সাবেক সাংসদের স্কুলের শিক্ষক। তাকে অন্য কেউ জায়গা দেয় নাই বলে বিএনপি নেতার আশ্রয়ে আছেন।
এমপি কমল আরো উল্লেখ করেন, একদিন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ সাহেব আমাকে রামু সমিতির অনুষ্ঠানের কথা বলিলে আমি লজ্জা পাই, কারন আমাকে দাওয়াত করা হয় নাই। অথচ ফোরকান সাহেব অতিথি হয়ে সব বিষয়ে জানেন। আমার বক্তব্যের পরে ঢাকাস্থ রামু সমিতির সভাপতি নুর মোহাম্মদ ও পোষ্ট অফিসের সাবেক ডিজি আব্দুল মোমেন চৌধুরী তাদের বক্তব্যে বিষয়টি আর ভুল হবেনা বলে সুরাহা দেন।

উক্ত কমিটির সেক্রেটারি সুজন শর্মা বিষয়টি কর্নেল ফোরকান সাহেবকে বলেন যে, উনাকে দাওয়াত করাতে আমি সুজনকে নাজেহাল করেছি। এ মিথ্যা বিষয় নিয়ে ফোরকান সাহেব মনক্ষুন্ন হয়ে মিথ্যা অজুহাতে আমার উপর রাগ দেখান। এই বিষয়টি নিয়ে আমি সুজন শর্মার পিতা সুনীল শর্মাকে বলি, আপনার ছেলে, আমি এবং ফোরকান সাহেবের মধ্যে যে তিক্ততা শুরু করেছে এগুলো বন্ধ করতে বলুন। বিষয়টি অনেক মানুষের সামনে ঘটলেও তাকে গলাধাক্কা দেয়া হয়েছে এ কথা কেউ বলতে পারবে না। মুলত সে আওয়ামী বিরোধী লোক। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিলকে তাল বানিয়ে বিএনপি ও আমার প্রতিপক্ষদের অপরাজনীতি করার সুযোগ করে দিচ্ছে।

এমপি কমলের সেই বিবৃতির জবাবে মুঠোফোনে প্রবীণ শিক্ষক সুনীল কুমার শর্মা বলেছেন, আমি তাকে (এমপি কমলকে) ছোটবেলায় পড়িয়েছি কিনা তা তাঁর বড় ভাই রামু উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল, বোন জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী ও তাঁর মা ভাল করেই জানেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে কমলের বয়স ছিল এক দেড় বছর। আমি রাজাকার ছিলাম কিনা তা এমপি কমলের বাবা সাবেক সাংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী ভালই জানতেন। তিনিই আমাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে লিখিত স্বীকৃতি দিয়েছেন। আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম বলেই ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনী আমাকে খোঁজতে এসে না পেয়ে আমার ভাইকে তারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। আমাদের বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান হানাদাররা। সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য থানায় করা এমএলএ মামলাটির আমিই প্রথম আসামী হিসেবে অভিযুক্ত ছিলাম। এসব তথ্য কি প্রমাণ করে আমি রাজাকার ছিলাম?

ধর্ষকের অভিযোগ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সমাজে সব পেশা-শ্রেণীর মানুষের শত্রু থাকে। আমাকে নাজেহাল করতেই একটি স্বার্থন্বেষী মহল ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলেন। যার বিচাররক ছিলেন কমলের বাবা ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী। যেকোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে পারে। আমার বিরুদ্ধে উত্তাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল কিনা তাঁর বাবাসহ বিচারে থাকা অন্যরা ভালই জানেন। আমাকে নানা কটুক্তিমূলক বাক্যে অপদস্ত করে যদি এমপি কমল উচুতে উঠতে পারে তাতে আমার দু:খ নেই। এলাকার মানুষ হিসেবে আমার কাছের অনেক বন্ধু বিএনপিসহ নানা দলের সাথে যুক্ত। আর শিক্ষকতা আমার পেশা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন দলের আদর্শ প্রচার করে না। আমি মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক বলে আমার বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক রাখলে কি রাজাকার বা বিএনপি হয়ে গেলাম..?

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।