এম.এ আজিজ রাসেলঃ আসন্ন শারদীয় দূর্গোৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শারদীয় দূর্গাপুজা উপলক্ষে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সহকারী কমিশানার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট একেএম লুৎফুর রহমানের পরিচালনায় ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ারুল নাসের এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, র্যাব-৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন, ট্যুরিষ্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার হোসাইন মোঃ রায়হান কাজেমী, সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়–য়া, সহকারি পুলিশ সুপার (মহেশখালী সার্কেল) রতন কুমার দাশ গুপ্ত, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এড. রনজিত দাশ, সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা, সহ সভাপতি রতন দাশ, কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন অফিসার সাফায়েত হোসেন, সদর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক দাশ, শহর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডাঃ চন্দন শর্মা, সাধারণ সম্পাদক স্বপন গুহ ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সম্পাদক সাংবাদিক দীপক শর্মা দীপু।
সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ারুল নাসের বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষের মাঝে রয়েছে অটুট বন্ধন। যা বিশ্বে প্রশংসিত। অন্য কোন দেশে সব ধর্মের মানুষের মধ্যে এমন সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত খুব কম। তাই আসন্ন শারদীয় দূর্গা পূজা সম্পন্ন করতে সকলের সহযোগিতা দরকার।
র্যাব-৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন বলেন, পূজায় পটকা-বাজি ফোটানো যাবে না। এ থেকে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। এ জন্য সচেতনতা প্রয়োজন। আর ঝুঁকিপূর্ণ মন্ডপ গুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে। পূজা চলাকালীন র্যাব সব সময় সতর্ক থাকবে।
ট্যুরিষ্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার হোসাইন মোঃ রায়হান কাজেমী, বিসর্জন অনুষ্ঠানে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে মঞ্চে অতিরিক্ত ভীড় থাকে। এ জন্য নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খেতে হয়। এবার মঞ্চে নির্দিষ্ট অতিথি ছাড়া আর কাউকে উঠতে দেয়া যাবে না। এছাড়া বর্তমানে আবহাওয়ার অবস্থা ভাল না। বলবৎ রয়েছে ৩নং সতর্ক সংকেত। তাই বিসর্জনের সময়ে সাগরে মহিলা ও শিশুদের নামতে দেয়া হবে না। যে কোন অঘটন রোধে সতর্ক রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এড. রনজিত দাশ বলেন, সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ এই দেশের সকল ধর্মের মানুষ। তার মধ্যে কক্সবাজার অন্যতম উদাহরণ। এ পর্যন্ত অন্য জেলায় প্রতিমা-মন্দির ভাংচুরের ঘটনা ঘটলেও কক্সবাজার তার দিক দিয়ে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এখানে আজ পর্যন্ত এই রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। ভবিষ্যতেও ঘটবে না। তিনি আরো বলেন, শারদীয় পূজা বাঙালির প্রাণের উৎসব। পূজা চলাকালীন আযানের সময় সকল মন্ডপের মাইক বা সাউন্ড বন্ধ থাকবে। ছিটানো হবে না রঙ। রোহিঙ্গা ভাই-বোনের কথা মাথায় রেখে এবার টেকনাফ উপজেলা সৈকতে বিসর্জন অনুষ্ঠানে যোগ দেবে না। তবে অন্যসব উপজেলা কক্সবাজার সৈকতে জাকঝমকভাবে বিসর্জনের আসবে। এছাড়া পূজা মন্ডপ এলাকায় চুরি, ছিনতাই ও ইভটিজিংসহ সকল অনাকাঙ্খিত ঘটনা রোধে সকলকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের ইন্সক্টের বিনয় কুমার বড়–য়া, কমিউনিটি পুলিশের ওসি একরাম, কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের জিএম নুর মোহাম্মদ মজুমদারসহ বিভিন্ন উপজেলার পূজা উপদযান পরিষদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ হলো-১/ জুমার খুতবায় ইমামরা পূজা নিয়ে শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থান মনোভাব পোষন করার জন্য মুসল্লিদের জানাবেন। ২/ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে কমিটি গঠন। ৩/ ইমাম, মুসল্লী, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী পূজা কমিটির প্রতিনিধিদের সাথে ওসি ও ইউএনও’র উদ্যোগে সমন্বয় সভার আয়োজন। ৪/ মসজিদ-পূজা মন্ডপ পাশাপাশি হলে পারস্পরিক সংযম-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। ৫/ পূজা চলাকালীন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। ৬/ মন্ডপে দুর্ঘটনা রোধে বালুভর্তি বালতি, পানি সংরক্ষণ ও জেনারেটরের ব্যবস্থা করা। ৭/ আজানের সময় মাইক-সাউন্ড বন্ধ রাখা। ৮/ আযানের বিষয়ে ইমাম সমিতি-ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৯/ পূজায় পথচারীদের চলাচলে ব্যবস্থা নেয়া ও ঈদগাও বাশ বাজার স্থানান্তর করা। ১০/ পৌর এলাকায় রাস্তা মেরামত-সংস্কার করা। ১১/ স্ব স্ব মন্ডপের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকের তালিকা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে প্রেরণ। ১২/ বাংলা মদ বিক্রি রোধে অভিযান পরিচালনা। ১৩/ গোলদিঘির পাড়, ঘোনার পাড়া ও বৈদ্যঘোনা, স্টেডিয়াম সম্মুখে পর্যাপ্ত লাইটিং এর ব্যবস্থাসহ ভ্রাম্যমান আদালতের মনিটরিং সক্রিয় থাকা। ১৪/ খুরুস্কুল, খরুলিয়া, রামু চাকমারকুল ও রাবেতা মরিচ্যা সড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন। ১৫/ মদ, গাজা, ইভটিজিং প্রতিরোধে মাঠে থাকবে মোবাইল কোর্ট। ১৬/ সকল মন্ডপ ও বিসর্জন অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার কর্তৃক নিরাপত্তা জোরদার করা। ১৭/ বিসর্জন অনুষ্ঠানে মেডিকেল টিম ও ফায়ার সার্ভিসকে সতর্ক থাকা। ১৮/ জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপার, ইএনও, ওসিসহ পদস্থা কর্মকর্তাদের পুজা মন্ডপ পরিদর্শন করা। ১৯/ বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন লাবনী পয়েন্টে সড়ক, বিজয়ার মঞ্চ সজ্জিত ও পরিচ্ছন্ন রাখা। ২০/ নীতিমালার আলোক বরাদ্দ প্রদান করা। ২১/ বরাদ্দ পেতে হয়রানী না হতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে নির্দেশ। ২২/ বিসর্জনে মহেশখালী ও কুতুবদিয়া ছাড়া অন্যান্য উপজেলা দুপুর ১২টার মধ্যে সৈকতে আসা। ২৩/ লোডশেডিং হলে মন্ডপে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। সর্বশেষ ২৪/ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে র্যাবকে অবহিত করা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।