সাড়ে চার দশকে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা এখনও অধরা। মানুষে মানুষে ব্যবধান বাড়ছে, বাড়ছে অস্থিরতাও। সাধারণ মানুষের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের প্রতিফলন নিয়ে প্রশ্ন আছে, আছে বিতর্ক। পাকিস্তানের দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন ও শোষণের হাত থেকে পূর্ব বাংলার জনগোষ্ঠীর মুক্তির তাগিদে যে যুদ্ধ, তা আজও শেষ হয়নি বলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস।
বিশেষ করে অর্থনৈতিক মুক্তির যুদ্ধে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন অদম্য মানুষেরা। মেহনতি মানুষের স্বপ্ন জয়ের গল্পে রাজনীতির গল্প হার মেনেছে বহু আগেই। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
সফলতা আর ব্যর্থতার পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ বিজয়ের ৪৫ বছরে পা রাখছে আগামী ১৬ ডিসেম্বর। সাড়ে চার দশকের বাংলাদেশের যতগুলো অর্জন তার মধ্যে জাতি হিসেবে যুদ্ধাপরাধের বিচার গর্ব করার মতো অন্যতম ঘটনা।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘এই সময়টির অপেক্ষায় জাতিকে দীর্ঘ ৪৫ বছর প্রহর গুনতে হয়েছে। যুদ্ধপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে আমরা জাতিকে অভিশাপমুক্ত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি।’
মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধীদের এ দেশে বিচার হতে পারে তা ছিল এক সময় কল্পনাতীত। যারা বাংলাদেশ জন্মের বিরোধিতা করে নানা অপরাধ সংঘটিত করেছিলেন, তারাই বাংলাদেশ সৃষ্টির পর রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতা পেয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের কেউ কেউ নানা সময় সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারও করতে থাকেন।
কালের বিবর্তনে মানবতাবিরোধী অপরাধীর দাম্ভিকতায় টান পড়ে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে জাতি আজ কলঙ্কমুক্তির পথে। অপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করে শাপমোচন হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের অভিশপ্ত অধ্যায়ের।
২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতের সাবেক নেতা বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রথম রায় ঘোষণা করেন। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টা ১ মিনিটে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি কাদের মোল্লার ফাঁসি দেয়ার মধ্য দিয়ে রায় কার্যকরের সূচনা হয়, যার ধারাবাহিকতায় শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের সাজাও কার্যকর হয়। জাতির অভিশপ্ত এই অপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকেও মুক্তি পাচ্ছে সমাজ। অপরাধ করলে সাজা মিলবেই তা ক্রমশই প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ বিষয়ে বলেন, ‘এবারের বিজয় দিবস মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কাছে ‘শাপ মোচনের দিবস’ বলে মনে করি। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে গোটা জাতি আজ স্বস্তিতে, যেটি জাতিসত্তা দাঁড় করাতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে’।
তবে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির এ বিষয়ে বলেন, ‘এখনও অনেক পথ বাকি। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারলেই জাতি অভিশাপমুক্ত হবে। নানা বাধা বিপত্তি আসবেই, আর তা মোকাবিলা করাই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। যে চেতনা দিয়ে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা মোকাবিলা করা সম্ভব। আর তখনই বিজয়ের সত্যিকার স্বাদ উপলব্ধি করা যাবে।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।