পার্শবর্তী দেশ মিয়ানমারে সেনা, পুলিশ ও রাখাইন সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গা নাগরিকদের (অনিবন্ধিত)শুমারি শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন-পুরাতন মিলিয়ে বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক একটি নির্দিষ্ট ‘তথ্যভান্ডার’ এর আওতায় এসেছে বলে মনে করা হলেও বাস্তবে তা ভিন্ন। উখিয়ার বালুখালী, কুতুপালং নতুন রোহিঙ্গা বস্তির অনেক রোহিঙ্গা এই শুমারি বিষয়ে অবগত নয়। তাদের অভিযোগ সার্ভে করার জন্য কোন তথ্য সংগ্রহকারী তাদের বস্তিতে যায়নি।
মঙ্গলবার সরেজমিন উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং নতুন রোহিঙ্গা বস্তি ঘুরে বিভিন্ন বস্তির মাঝি’র সাথে কথা বলে জানাগেছে, বাংলাদেশে অবস্থানকারী নতুন অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের সঠিক তথ্য ও সংখ্যা জানতে যে শুমারি সম্প্রতি শুরু হয়ে গত ১২ মার্চ হয়েছে, এতে অনেক রোহিঙ্গা অর্ন্তভূক্ত হয়নি। রোহিঙ্গা এনিয়ে তথ্য সংগ্রহকারী এবং সংশ্লিষ্ঠ পরিসংখ্যান কর্তা ব্যক্তিদের দায়ী করেছেন।
বালূখালী নতুন বস্তির বি-ব্লকের ফরিদ আলম(৩৩) নামের এক রোহিঙ্গা জানান, রোহিঙ্গা শুমারি ব্যাপারে সে অবগত নয়। তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কোন দপ্তর থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তার স্ত্রী লায়লা বেগম(৩০) ছাড়াও পরিবারের আরো তার ছেলে/মেয়ে রয়েছে, তারা হল-রাহেল (৭), সাদেক(৪), সুফাইরা (২)। এরা সবাই শুমারি থেকে বাদ পড়েছে। এ ধরনের বালুখালী নতুন বস্তিতে অন্তত শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার সদ্য সমাপ্ত হওয়া সার্ভে থেকে বাদ পড়ার অভিযোগ করেছে ওই ব্লকের মাঝি ছাবের আহমদ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফার এই শুমারি করার কথা থাকলেও পরে সময়সীমা দুইদিন বাড়িয়ে দেওয়া হয়। মূল শুমারি শুরু হয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারী। এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারী থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত খানা গণনার কাজ চলে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান জানিয়েছেন, গত রোববার শেষ দিনের মতো শুমারির কাজ চলে জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও বালুখালী এবং টেকনাফ উপজেলা নয়াপাড়া ও লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বস্তিতে। এবারের শুমারিতে নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি প্রথম শুমারিতে বাদ যাওয়া রোহিঙ্গাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু নিত্য নতুন রোহিঙ্গা বস্তিতে অবস্থান নেওয়ায় সব রোহিঙ্গাদের শুমারি অন্তভূক্ত করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরো জানান, কক্সবাজার জেলার পাঁচটি উপজেলা যথাক্রমে উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, রামু ও চকরিয়ায় শুমারি চলে। এছাড়াও বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলা এবং চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া, চন্দনাইশ,পটিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলায় এই শুমারি হয়েছে। তবে ‘আমরা আশা করছি, সকল মিয়ানমারের নাগরিকই শুমারির আওতায় আনার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে কোন মিয়ানমার নাগরিক যদি অন্যত্র লুকিয়ে থাকে বা তথ্য না দেয় সেক্ষেত্রে আমাদের করার কিছুই নেই। তারা বাদ যেতেই পারে।
তিনি বলেন, ‘শুমারি জন্য কক্সবাজার জেলায় ৪০০ জন গণনাকারী নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের প্রশিক্ষনও দেওয়া হয়েছে। তারা ২০০টি দলে ভাগ হয়ে এই ক’দিন কাজ করেছেন।প্রতিটি দলে ছিলেন একজন সুপারভাইজার ও একজন (তথ্য সংগ্রহ) গণনাকারী।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।