১৭ এপ্রিল, ২০২৫ | ৪ বৈশাখ, ১৪৩২ | ১৮ শাওয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  সিবিআইইউ’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে।   ●  গভীর রাতে পাহাড়ের মাটিভর্তি একটি ড্রাম ট্রাক( ডাম্পার) জব্দ করেছে কক্সবাজার বনবিভাগ   ●  অস্ত্র উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিলে জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন এসআই খোকন কান্তি রুদ্র   ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন   ●  প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার   ●  পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি’১৮ ব্যাচের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন   ●  উখিয়া সমাজসেবা কর্মচারীর নামে বিধবা ভাতা’র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ   ●  ‘পটভূমি পরিবর্তনের জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য’ – সরওয়ার জাহান চৌধুরী

শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মালিকের স্বার্থ সংরক্ষণে ইসলামী শ্রমনীতি

Manjur New Picture

পহেলা মে ‘শ্রমিক দিবস’ বা ‘মে দিবস’ হিসেবে ইতিহাস সমাদৃত হয়ে আছে। ন্যায়সঙ্গত কর্মঘন্টা নির্ধারণের দাবীতে ১৮৮৬ সালের এই দিনে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিক সমাজের যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিলো তাকে কেন্দ্র করেই সূচিত হয় মে দিবসের ইতিহাস। এই আন্দোলনে শ্রমিকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। প্রাণও হারিয়েছেন শ্রমিক সমাজের অনেকেই। ফলশ্র“তিতে দিনটি শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। প্রতি বছর মে দিবস বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। দিবসটি স্মরণে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, র‌্যালি ইত্যাদি আয়োজন হয়ে থাকে। এসব আয়োজনে মে দিবসের ইতিহাস যেমন আলোচিত হয়; তেমনিভাবে উত্থাপিত হয় শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী সমূহ। কিন্তু শ্রমিকদের সেই ন্যায্য দাবী-দাওয়ার অধিকাংশই আজো পর্যন্ত কি বাস্তবতার মুখ দেখেছে ? বরং এখনও বিভিন্ন দাবীর আন্দোলনে শ্রমিকদের রক্ত ঝরছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায় না করার প্রতিবাদে গার্মেন্টসে শ্রমিক অসন্তোষ, পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট-অবরোধ, হরতালের মত কর্মসূচী ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপনের চিত্রও প্রতিদিনকার সংবাদপত্রে চোখে পড়ে।
এমতাবস্থায় শ্রমিকের অধিকার-মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও মালিকের স্বার্থ সংরক্ষণে ইসলাম প্রবর্তিত নীতি-আদর্শই হতে পারে প্রকৃষ্ট অবলম্বন। কারণ একমাত্র ইসলামই ঘোষনা করেছে শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বেই পারিশ্রমিক আদায় করে দাও। শুধু তাই নয়; মানবতার অগ্রদূত মহানবী (স.) ইরশাদ করেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি তিন শ্রেণীর লোকদের প্রতিপক্ষ হব। এরমধ্যে এক শ্রেণী হচ্ছে- সে সব লোক, যারা কোন মজদুর থেকে পরিপূর্ণ কাজ আদায় করে নেয়। কিন্তু সে অনুপাতে পারিশ্রমিক প্রদান করে না’। (বায়হাকী)। শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় যেমন ইসলাম গুরুত্বারূপ করেছে তেমনি ভাবে মালিকের কর্মসম্পাদনে শ্রমিকের উপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালনের জন্যও ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে।
আসুন! জেনে নিই শ্রমের গুরুত্ব, শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মালিকের স্বার্থ সংরক্ষণে ইসলামের নীতি ও আদর্শ।
শ্রমের গুরুত্ব ঃ
ইসলাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। তাই শুধুমাত্র ধর্মীয় বিষয়ে নয়; বরং মানবজীবনের প্রতিটি শাখায় ইসলাম দিয়েছে সু-স্পষ্ট দিক-নির্দেশনা। এরই ধারাবাহিকতায় হালাল উপার্জন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে শ্রম বিনিয়োগের ব্যাপারেও ইসলাম সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। অন্যের শ্রমলব্ধ জীবিকা ভোগ করে পরজীবী না হয়ে নিজের শ্রম ব্যয় করে হালাল জীবিকা উপার্জনের জন্য ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে।
শ্রম বিনিয়োগ হালাল উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম :
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন। অতএব তোমরা তার পৃষ্ঠে বিচরণ কর এবং তাঁর (আল্লাহর) দেয়া রিযিক আহরণ কর’। (সূরা- মুলুক- ১৫)। অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- ‘যখন নামাজ শেষ হয়ে যাবে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিযিক) অন্বেষণে ব্যাপৃত হয়ে যাও ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর। যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা- জুমআ, আয়াতÑ ১০)
হযরত রাসূলে কারীম (স.) ইরশাদ করেন, ‘হালাল উপার্জন করা ফরয কার্য সমূহের অন্যতম একটি ফরয।’ তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘সবচেয়ে হালাল জীবিকা হলো যাতে মানুষের উভয় পা এবং উভয় হাত সঞ্চালিত হয় আর তার কপাল হয় ঘর্মসিক্ত।’ ‘নিজ হাতে উপার্জিত খাবারই সবচেয়ে উত্তম। আর আল্লাহর নবী হযরত দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জিত অর্থে জীবিকা নির্বাহ করতেন’। এছাড়াও হালাল রিযিক অন্বেষণে আল্লাহ প্রেরিত নবী-রাসূলগণ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন বলে হাদীস শরীফ সূত্রে জানা যায়।
পবিত্র কুরআন ও হাদীসের উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শ্রম বিনিয়োগ হালাল উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম। সেহেতু চুরি, ডাকাতি, সুদ-ঘুষ, ভেজাল বাণিজ্যে লিপ্ত না হয়ে হালাল উপার্জনের জন্য শ্রম বিনিয়োগ করা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্মানজনক ও ফযীলতের কাজ।
ভিক্ষাবৃত্তি নয়; শ্রম বিনিয়োগই দারিদ্র বিমোচনের উৎকৃষ্ট পন্থা :
অনেক মানুষ সুস্থ-সবল হওয়া সত্ত্বেও জীবিকা উপার্জনের জন্য ভিক্ষা বৃত্তিকে বেছে নেয়। অথচ ইসলাম ভিক্ষা বৃত্তিকে অধিকতর নিরোৎসাহিত করেছে এবং শ্রম বিনিয়োগের ব্যাপারে যথেষ্ট তাগিদ দিয়েছে।
একদা রাসূল (স.) এর কাছে আনসারদের এক ব্যক্তি ভিক্ষার জন্য এসেছিলেন। মহানবী (স.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার ঘরে কি কিছু নেই? লোকটি বলল, হ্যাঁ ব্যবহারের একটি কম্বল ও পানি পানের একটি পাত্র আছে মাত্র। রাসূল (স.) বললেন, যাও সে দু’টি নিয়ে এসো। লোকটি ঐ কম্বল ও পানির পাত্র নিয়ে এলে রাসূল (স.) তা দুই দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করলেন এবং তা লোকটিকে দিয়ে বললেন, এক দিরহাম দিয়ে খাবার কিনে পরিবারকে দাও, অন্য দিরহাম দিয়ে একটি কুড়াল নিয়ে এসো। লোকটি যখন কুড়ালটি নিয়ে আসল রাসূল (স.) তাতে একটি হাতল বেঁধে দিয়ে তার হাতে তুুলে দিলেন, আর বললেন, যাও বন থেকে লাকড়ি কেটে বাজারে বিক্রি কর। ভিক্ষাবৃত্তির চেয়ে জীবিকার্জনের জন্য এ পন্থা অনেক শ্রেয়।
শ্রমিকের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলাম :
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ হিসেবে শ্রমিক-মালিক, ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা সকলের মর্যাদাই সমান। আল্লাহর কাছে একমাত্র ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে মর্যাদাবান যার অন্তরে তাকওয়া তথা খোদাভীতি রয়েছে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে তারাই বেশি মর্যাদাবান, যাদের মধ্যে অধিক আল্লাহ ভীতি রয়েছে’। তাই পেশায় শ্রমিক বলে কোন মানুষকে হেয় করা যাবেনা।
শ্রমিকরা আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শ্রেণী। কারণ আল্লাহ তা’আলা মানুষকে শ্রম নির্ভর করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষকে শ্রম নির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি’। (সূরা- বালাদ, আয়াত- ৪)।
উন্নয়ন-উৎপাদনে পুঁজির গুরুত্বের চেয়ে শ্রমের গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলÑ আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় শ্রমজীবী মানুষকে অত্যন্ত তুচ্ছ দৃষ্টিতে দেখা হয়। পুঁজির মালিককে বিবেচনা করা হয় অভিজাত শ্রেণীর মানুষ, আর শ্রমের মালিককে বিবেচনা করা হয় নিম্ন শ্রেণীর মানুষ হিসেবে।
ইসলাম এই কৃত্রিম আভিজাত্যবোধ ও সামাজিক বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের ন্যায় সঙ্গত মর্যাদা। শ্রমিকদের সম্পর্কে ইসলামের নবী মানবতার মুক্তির অগ্রদূত হযরত মুহাম্মদ (স.) ইরশাদ করেন, ‘তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের আয়ত্ত্বাধীন করে দিয়েছেন। অতএব যার কোন ভাইকে তার অধীন করে দেয়া হয়েছে সে যেন তাকে তা-ই আহার করতে দেয়, যা সে নিজে আহার করে এবং তাকে যেন এমন পরিধেয় পরিধান করতে দেয়, যা সে নিজে পরিধান করে। আর তাকে যেন এমন কাজ করতে বাধ্য না করে, যা করলে সে পর্যুদস্ত হয়ে যাবে। আর যদি এহেন কাজ করতে তাকে বাধ্য করে তাহলে সে যেন তাকে সহযোগিতা করে। (বুখারী)
এই হাদীস শরীফ থেকে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাওয়া যায়Ñ
১. মালিক-শ্রমিক উভয়ের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখা। ২. মালিক-শ্রমিকের মধ্যকার বৈষম্যের অবসান ঘটানো। ৩. থাকা-খাওয়ার সুযোগ-সুবিধা উভয়ের সমপর্যায়ে হওয়ার তাগিদে মজুরিও সেভাবেই নির্ধারণ করা। ৪. যে পরিমাণ কাজ শ্রমিক করতে সক্ষম সেই পরিমাণ কাজের ভার তার ওপর অর্পণ করা। এর চেয়ে অধিক হলে শ্রমিকের সহযাগিতায় মালিকের এগিয়ে আসা।
এভাবে ইসলাম শ্রমিকের মর্যাদার আসন সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।
অধীনস্থদের সাথে সদয় আচরণ রাসূল (স.) এর শিক্ষা :
অভাব-অনটনের কারণে নিজের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে যে মানুষেরা সামান্য পারিশ্রমিকে দিন-রাত পরিশ্রম করছে অধীনস্থ বলে সে ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষদের সাথে অনেক ধণাঢ্য মালিকরা প্রতিনিয়ত অমানবিক আচরণ করে। গৃহকর্তা-মালিকের নির্যাতনে শ্রমিক-কর্মচারীর মর্মান্তিক মৃত্যু ও আহত হওয়ার অসংখ্য খবর প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় নজর দিলেই দেখা যায়। অধীনস্থ শ্রমিক-কর্মচারীদের ব্যাপারে ইসলামের নীতিÑআদর্শের বাস্তবায়ন না থাকার কারণেই এমন অমানবিকতার অবসান হচ্ছেনা।
নবী করীম (স.) অত্যন্ত তাগিদের সাথে ইরশাদ করেলন, ‘তোমরা তোমাদের আপনজন ও আত্মীয়বর্গের সাথে যেমন ব্যবহার করে থাক, তাদের সাথেও অনুরূপ ব্যবহার করবে। আর মানুষ হিসেবে তারা তোমাদের চেয়ে কোনক্রমেই কম নয়। তোমাদের যেমন অন্তর আছে, তাদেরও অন্তর রয়েছে। তোমরা কি দেখনা আমি ‘যায়েদ’কে আযাদ করে আমার ফুফাত বোনের সঙ্গে তার বিয়ে দিয়েছি এবং ‘বিলাল’কে মুয়াজ্জিন মনোনীত করেছি। কেননা সে আমাদের ভাই।
অপর হাদীসে রাসূল (স.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা অধীনস্থদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে এবং তাদেরকে কোন রকম কষ্ট দেবে না। তোমরা কি জান না? তাদেরও তোমাদের ন্যায় একটি হৃদয় আছে। ব্যথা দানে তারা দুঃখিত হয় এবং কষ্টবোধ করে। আরাম ও শান্তি প্রদান করলে সন্তুষ্ট হয়। তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা তাদের প্রতি আন্তরিকতা প্রদর্শন কর না?
একদিন এক সাহাবী এসে নবী করীম (স.) কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হুজুর চাকর-খাদিমদের অপরাধ কতবার ক্ষমা করব? নবী করীম (স.) তা শুনে চুপ করে রইলেন। সে সাহাবী পুনরায় তা-ই জিজ্ঞেস করলেন, তখন হযরত মুহাম্মদ (স.) ব্যাকুল হয়ে বলে উঠলেন, (কতবারের কথা জিজ্ঞেস করছ) ‘প্রত্যেক দিন সত্তরবার হলেও তাকে ক্ষমা করে দিও’ (এ যে তোমার ভাই)।
নবী করীম (স.) নিজেরও এদের সাথে অত্যন্ত স্নেহঘন সম্পর্ক ছিল। হযরত আনাস (রা.) অনেক দিন পর্যন্ত নবী করীম (স.) এর খিদমতে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি নবী করীম (স.) এর সাথে দশ বছর অতিবাহিত করেছি, হুজুরের খিদমত করেছি, কিন্তু তিনি কোনদিন আমাকে ভর্ৎসনা করেননি। কোন দিন বলেননি- এটা এভাবে কেন করছ, ওঠা ঐ ভাবে কেন করনি।
এভাবে ইসলাম মালিককে সহনশীল হতে শিক্ষা দেয়। ক্ষমা সুন্দর মনোভাব নিয়ে শ্রমিকদের দোষ-ত্র“টি মার্জনা করে দিতে উৎসাহিত করে।
মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহানবী (স.) এর আদর্শ :
হাদীস শরীফের নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক মর্যাদা লাভের সাথে সাথে পুঁজিদাতার সমমানের খাবার, বাসস্থান ও পোশাক পরিচ্ছেদের ব্যবস্থা করার জন্য প্রয়োজনীয় মজুরি পাওয়ার অধিকার শ্রমিকদের রয়েছে। শ্রমিক যাতে ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত না হয় সে লক্ষে নিয়োগের আগেই পারিশ্রমিকের পরিমাণ জানিয়ে দেওয়ার জন্য রাসূল (স.) তাগিদ দিয়েছেন। শ্রমিকের অসহায়ত্বের সুযোগে শ্রম বিনিয়োগে বাধ্য করে ন্যায্য মজুরি আদায়ের ক্ষেত্রে কোনরূপ বাহানার আশ্রয় নেয়া যাবেনা। এ প্রসঙ্গে সতর্ক করে দিয়ে রাসূল (স.) ইরশাদ করেন, ‘শ্রমিক যখন তার কাজ সমাপ্ত করবে তখন তার পারিশ্রমিক পূর্ণমাত্রায় আদায় করে দিতে হবে’। (মুসনাদে আহমদ)। মহানবী (স.) আরও ইরশাদ করেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি তিন শ্রেণীর লোকদের প্রতিপক্ষ হব। এরমধ্যে এক শ্রেণী হচ্ছে- সে সব লোক, যারা কোন মজদুর থেকে পরিপূর্ণ কাজ আদায় করে নেয়। কিন্তু সে অনুপাতে পারিশ্রমিক প্রদান করে না’। (বায়হাকী)।
শ্রমিকের মজুরি যথাসময়ে আদায়ের প্রতি তাগিদ দিয়ে রাসূল (স.) ইরশাদ করেন, ‘শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক আদায় করে দাও’। (বায়হাকী)। তথাপি রাসূল (স.) দ্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, ‘তার সামর্থ্যের বাইরে কোন কাজ করতে তাকে (শ্রমিককে) বাধ্য করা যাবেনা।’ (মুয়াত্তা-মালিক)
শ্রমিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য :
ইসলাম মালিককে শ্রমিকের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি শ্রমিককেও তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। মালিক তার পুঁজি বিনিয়োগ করেছে বলেই শ্রমিকের জন্য কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। সেহেতু মালিকের অবদানের কথা স্মরণ রেখেই শ্রমিককে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে এবং মালিকের সম্পদ সংরক্ষণে যতœবান হতে হবে। কারণ মলিক যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে শ্রমিকের পারিশ্রমিক সে পরিশোধ করবে কি করে?
এ প্রসঙ্গে রাসূল (স.) ইরশাদ করেন, ‘যখন কোন শ্রমিক কোন কাজ করে তখন যেন সে তা উত্তমভাবে নিষ্ঠার সাথে করে’। (বায়হাকী)।
শ্রমিক যদি মালিককে ধোকা দেয়, কাজে ফাঁকি দেয় বা তার সম্পদ তসরুপ বা বিনষ্ট করে, তাহলে তাকে কাল কিয়ামতে আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞাসিত হতে হবে।
ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই :

আজ থেকে ১২৯বছর পূর্বে ১৮৮৬ সালের পহেলা মে যে দাবিতে আমেরিকার শিকাগো শহর শোষিত শ্রমিক সমাজের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল, সেই দাবি দেড় হাজার বছর পূর্বেই ইসলাম উত্থাপন করেছে এবং এর বাস্তবায়নে সুস্পষ্ট শ্রমনীতি ঘোষণা করেছে। আজকের জাতিসংঘ শ্রমিকদের যে অধিকার দিয়েছে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি দিয়েছে ইসলাম। পুঁজিবাদী ও স্বার্থপর মালিকদের শোষণ থেকে শ্রমিক সমাজের মুক্তি, শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নতকরণ, দারিদ্র বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সেই সাথে মালিকদের সম্পদের সুরক্ষায় ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। অতএব, মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের কন্ঠে একটি শ্লোগান ও দাবী উত্থাপিত হওয়াই উচিত, ‘মালিক-শ্রমিক ভাই ভাই/ইসলামী শ্রমনীতির বাস্তবায়ন চাই’।

লেখক ঃ
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার ইসলামী সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদ।
স্ধাারণ সম্পাদক, রামু লেখক ফোরাম।
ঊ-সধরষ : যধভবুধনঁষসধহুঁৎ@মসধরষ.পড়স
তারিখ ঃ ৩০/০৪/২০১৫ইং।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।