২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি

সচেতনতায় নয়, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানেই গুরুত্ব বাহিনীগুলোর

বাংলা ট্রিবিউনঃ মাদক নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ কম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর। বরং বিশেষ অভিযানেই তাদের আগ্রহ বেশি। অথচ এসব অভিযানের সময় তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে।

তবে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধু অভিযান নয়, মাদক নিয়ন্ত্রণে অভিযানের পাশাপাশি তারা বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিও গুরুত্বের সঙ্গে পালন করছে। আর বরাবরের মতো নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ বাহিনীগুলো অস্বীকার করেছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১৫ মে থেকে গতকাল সোমবার (২৬ আগস্ট) পর্যন্ত মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৪২৪ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ১১৯ জন, পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২১৫ জন, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৪৮ জন, বিজিবি ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে ৩ জন এবং বিজিবি’র সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৩৯ জন নিহত হয়। এর বাইরে ৩২ জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

আর র‌্যাবের হিসাব বলছে, ২০১৮ সালের ৩ মে থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত তাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১২৪ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। সংস্থাটি মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করে ২০১৮ সালের ৩ মে। পরে ১৫ মে থেকে অন্যান্য বাহিনীও বিশেষ অভিযান জোরদার করে।

মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানের ক্ষেত্রে পুলিশের বিশেষ কোনও স্লোগান না থাকলেও র‌্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দুটি স্লোগান রয়েছে। র‌্যাবের স্লোগান হচ্ছে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে।’ আর বিজিবি’র স্লোগান ‘আছি মোরা যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে।’ এর বাইরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বেশ কয়েকটি স্লোগান রয়েছে।

পুলিশ: দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও মাদক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর মধ্যে পুলিশকেই প্রধান ফোর্স হিসেবে মনে করা হয়। বাহিনীটির মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ শাখার এআইজি সোহেল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের নানামুখী উদ্যোগ রয়েছে। এটি চলমান।’

তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ কমিউনিটি পর্যায়ে সব শ্রেণির মানুষকে সম্পৃক্ত করে মাদকের কুফল সম্পর্কে জানানো হচ্ছে। পুলিশের অপারেশন পর্যায়ের সব ইউনিট একযোগে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলেও জানান তিনি। তার দাবি, পুলিশের নানামুখী উদ্যোগের কারণে মাদক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

র‌্যাব: ২০১৮ সালের মে মাসে বিশেষ অভিযান শুরুর পরপরই র‌্যাব মাদক ও মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করে।  র‌্যাব সদর দফতরের মিডিয়া উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৩ মে থেকে গত ১৮ আগস্ট পর্যন্ত র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনেক বার গুলিবিনিময় হয়। এতে ১২৪ জন মাদক কারবারী নিহত হয়। এই সময়ে তারা ৬৯৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করছে।

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মাদকের বিরুদ্ধে তথ্য দিতে জনসচেতনতায় র‌্যাবের কোম্পানিগুলোর নম্বরসহ বিলবোর্ড স্থাপন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা।

কোস্ট গার্ড: বর্তমানে নদীপথেই মাদক পাচার বেশি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। কোস্টগার্ড বিভিন্ন সময় নদীপথের চালান আটক করছে। তাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হওয়ার তথ্য জানা যায়। তবে কোস্টগার্ড বিষয়টি স্বীকার করেনি। তাদের হিসাবে, ২০১৮ সালে ৪৭৫ কোটি ৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে তারা। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই উদ্ধার করেছে ৮১ কোটি ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকার মাদকদ্রব্য।

কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট (বিএন) হায়াত ইবনে সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধেও তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সচেতনতামূলক কাজও করে তারা। মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

বিজিবি: মাদক পাচার প্রতিরোধে প্রধান দায়িত্ব পালন করে বিজিবি। তাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৩১ জন নিহত হয়েছে বলে জানা যায়। তবে বিজিবি থেকে বিষয়টি স্বীকার করা হয়নি।

বিজিবির সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা চোরাচালানের প্রবণতা বেশি থাকায় বিজিবি ওই সীমান্তে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। ২০১৮ সালে বিজিবির অভিযানে কক্সবাজার সীমান্তে ইয়াবা উদ্ধারের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৮ পিস। আর ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রতিমাসে গড়ে ৭ লাখ ৬৬ হাজার ১৭৯ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে।

মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতায় কী কী কাজ করছে বিজিবি, জানতে চাইলে বিজিবি’র সদর দফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার ফরিদ হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “বিজিবি মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে। সেজন্য সীমান্তে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘শুধু অভিযান নয়, জনসচেতনতায়ও কাজ করছে বিজিবি। সীমান্ত এলাকার লোকদের মাদকের কুফল সম্পর্কে বলা হয়।’ এসব কারণে ইয়াবার পাচার অনেক কমে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরও মাদক নির্মূলে কাজ করে। মাদকদ্রব্য অপব্যবহার ও পাচারবিরোধী সরকারি-বেসরকারি সব কাজের সমন্বয়, তত্ত্বাবধান, মূল্যায়ন ও পরামর্শ দেওয়াসহ জনসচেতনতা সৃষ্টিতে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কমিটি রয়েছে তাদের। এ ছাড়া দেওয়াল লিখন, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড ও ব্যানারের মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছে তারা। সংস্থাটির অনেকগুলো স্লোগানের একটি হচ্ছে ‘জীবন একটাই, তাকে ভালোবাসুন, মাদক থেকে দূরে থাকুন।’

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।