ঘূর্ণিঝড় আম্পান বুধবার (২০ মে) সন্ধ্যায় সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম শুরু করবে। এময় বাতাসের গতি অন্যসব ঝড়ের চেয়ে বেশি হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিদফতর। এদিকে, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। আর মোংলা ও পায়রা বন্দরে আগের মতোই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘আম্পান বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করবে। উপকূল অতিক্রম করার সময় অনেকখানি সময় ব্যয় হবে। তবে এতে আম্পানের শক্তি কমে যাবে এটা বলা যাবে না। আম্পানকে আমরা এখন আর সুপার সাইক্লোনও বলছি না। শুধু আম্পান বলছি। এর বাতাসের গতি অন্যসব ঝড়ের চেয়ে বেশি। এটি এখন পর্যন্ত যে গতিতে আসছে তাতে সুন্দরবন দিয়ে অতিক্রম করবে। এর প্রভাবে এরইমধ্যে উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকাও আকাশ মেঘলা, রাতে বৃষ্টি হয়েছে।’
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ফেনীতে ৭৫ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জে ২১ মিলিমিটার, চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে ফেনী ছাড়া রাঙামাটিতে ৪২ মিলিমিটার, রংপুর বিভাগের মধ্যে দিনাজপুরে ২৪, খুলনা বিভাগের মধ্যে মোংলায় ৫৮, সাতক্ষীরায় ৩৫, বরিশালে ৪৯ এবং পটুয়াখালীতে ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের সারাদেশের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, আম্পানের প্রভাবে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারো থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় আম্পান উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৯০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ২০ মে বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
সতর্ক সংকেতে আরও বলা হয়, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড় জনিত জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় এবং দ্বিতীয় পক্ষের চাঁদের সময়ের শেষ দিনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে থেকে ১০ থেকে ১৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঝড়ো হাওয়ার সতর্কতায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলতে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
জেলেদের জন্য সতর্কতায় বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।