সন্ধ্যার পর থেকে ভূতুড়ে এলাকার রুপ নিচ্ছে পেকুয়া, চকরিয়া। নামছে সুনসান নীরবতা। কমে গেছে কোলাহল ও যানবাহন চলাচল। রাস্তাঘাট ফাঁকা। শীতের শেষ মুহুর্তে কুয়াশা মাখা রাতে থমথমে পরিস্থিতি। সালাহ উদ্দিন আহমদ নিখোঁজের পর থেকে পেকুয়া,চকরিয়া ঘটছে সহিংসতা। সন্ধ্যা হলে নাগরিক মনে ভর করছে উদ্বেগ। আজকের দিনটি কেমন কাটবে সাধারণ লোকজনের মাঝে এক অজানা শংকা বিরাজ করছে। বিএনপির মূখপাত্র ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদ নিখোঁজের জের ধরে ২০ দলীয় জোটের নাশকতা এড়াতে তার নিজ জন্মস্থান পেকুয়া এবং চকরিয়া আইন-শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন চলছে আইনশৃংখলা বাহিনীর তল্লাশি। র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের অব্যাহত অভিযানের খবরে পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে অর্ধশত গ্রাম পেকুয়া-চকরিয়ার। জানা গেছে, পেকুয়া সদর, মগনামা, রাজাখালী, টইটং, শিলখালী সহ চকরিয়ার পৌর সভা, চিরিংগা ইউনিয়ন, বদরখালী, ডুলাহাজারা, লক্ষ্যাচরসহ প্রায় সবকটি ইউনিয়নে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ীতে বাড়ীতে তল্লাশী চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। শনিবার দুপুরে সালাহউদ্দিন আহমদের নিজ গ্রাম সিকদার পাড়ায়ও অভিযান চালিয়েছে সাদা পোশাকধারী এবং যৌথ বাহিনীরা। সালাহ উদ্দিন আহমদ নিখোঁজের পর দুই উপজেলা থেকে গ্রেফতার হয়েছে দুই ডজনের ও বেশি লোক। পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্র জানায়, একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে পেকুয়ায় অতিরিক্ত র্যাব, বিজিবি মোতায়ন রয়েছে। এদিকে গত বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাত ১১ টার দিকে পেকুয়া-মগনামা সড়কের আশরাফুল উলুম মাদ্রাসা পয়েন্টে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের মালিকনাধীন একটি পিকআপে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। পরে ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। অপরদিকে কক্সবাজার- চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া একটি যাত্রীবাহি সোৗদিয়া পরিবহণের বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করেছে দুর্বুত্তরা। এ সময় বাসে থাকা অনন্ত ৭ যাত্রী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে দগ্ধ হয়েছেন ১ জন। ৩ জনকে চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ১ জনকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানা যায়, চকরিয়া নলবিলা বনবিভাগের চেকপোষ্টের সংনিকটে শনিবার রাত ৯ টায় কক্সবাজার বাস টার্মিনাল হতে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী ( চট্টমেট্রো-ব-১১-০১৩৪) সৌদিয়া বাসে এ ঘটনা ঘটেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়ার এমন প্রেক্ষাপটে শনিবার পেকুয়া থানায় এক জরুরী বৈঠক করেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তিনাথ। পরে তিনি থানা কম্পাউন্ডে আয়োজিত শান্তির জন্যে পেকুয়া শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বলেন, আমজনতাকে নিয়ে পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবদু রকিবের সভাপতিত্বে ও এসআই শাহজাহান কামালের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় এএসপি মো. মাসুদ আলম সহ আওয়ামীলীগ নেতারা বক্তব্য রাখেন। এদিকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর লোকজন আওয়ামীলীগের চিিহ্নত সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে পেকুয়া-চকরিয়া বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ীতে বাড়ীতে তান্ডব চালাচ্ছে বলে স্থানিয় সাংবাদিকদের অভিযোগ করেছেন পেকুয়া-চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ এবং মিজানুর রহমান চ্যেধুরী খোকন মিয়া। অপরদিকে কক্সবাজার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সদর (সার্কেল চকরিয়া) মোহাম্মদ মাসুদ আলমের তদারকি বৃদ্ধি পাওয়ায় পেকুয়া-চকরিয়ায় পুলিশি টহল জোরদার থাকায় বড় ধরনের কোন সহিংসতা ঘটছেনা বলে এমন কথার উদয় হচ্ছে সচেতন মহলের কাছে। এদিকে সালাহউদ্দিনের সুস্থতা ও মুক্তি কামনায় জুমাবার থেকে গতকাল পেকুয়া-চকরিয়া প্রায় মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পেকুয়া উপজেলা মহিলাদলের সভানেত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ঝিনু গত কাল এ প্রতিবেদকে জানান, সালাহউদ্দিন আহমদের জন্য পেকুয়া-চকরিয়া গ্রামে-গ্রামে মহিলারা যেভাবে আহাজারী করছে যা সমুন্দ্রের গর্জনকে হার মানিয়ে থমকে সব আওয়াজকে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবেনা। তাদের একটাই দাবি সালাহউদ্দিনকে তাদের মাঝে ফিরিয়ে দেয়া হোক।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।