কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কিটকট (চেয়ার) গুলোর অর্ধেক বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দেয়ার নির্দেশ রয়েছে হাইকোর্ট থেকে। এছাড়া আদালতের নির্দেশনার পর সমুদ্র সৈকতে টানানো হয়েছে সাইনবোর্ডও। তবে সাটানো সাইনবোর্ডে হাইকোর্টের আদেশ সম্বলিত বিষয় উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবায়নের কারো কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি বিষয়টি দেখার দায়িত্বে কে আছেন তা নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি।
সরজমিনে দেখা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশনার পর সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এবং কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতির নাম সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে চেয়ারের উপরে বিনামূল্যে বসার স্টিকার লাগিয়ে রাখা হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, স্টিকার লাগানোর দুইদিন পরেই সমুদ্র সৈকতের ব্যবসায়ীদের লোকজন স্টিকার লাগানো চেয়ারগুলো থেকেও টাকা নিচ্ছেন।
এছাড়া হাইকোর্টের আদেশের বিনামূল্যে বসার জন্য মোট চেয়ারের অর্ধ সংখ্যক চেয়ার খালি থাকার কথা বলায় অনেক পর্যটকদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের লোকজন ঝগড়া করেন। অন্যদিকে, বিনামূ্ল্যের চেয়ারে কোনো পর্যটক একবার দখলে নিলে তা চার-পাঁচ এমনকি সাত-আট ঘণ্টা ধরে রাখেন বলেও অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।
গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন, মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’রিপোটার্স ফোরামের সদস্যরা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গেলে এমন অনিয়ম ধরা পড়ে। হাইকোর্টের আদেশের পরও এমন ‘হ-য-ব-র-ল’ অবস্থা দেখে অনেকটা বিরক্ত প্রকাশ করেন সংগঠনের সাংবাদিক নেতাকর্মীরা।
চেয়ারে বসা পর্যটকদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে জানান, বিনামূল্যে বসার কথা থাকলেও কেউ-ই টাকা ছাড়া চেয়ারে বসতে পারছেন না। কার্যত হাইকোর্টের আদেশ পুরোপুরি মানছেন না সমুদ্রের তীরে চেয়ার পেতে রাখা ব্যবসায়ীরা।
হাইকোর্টের আদেশের পরও কেন নির্দেশনা মানছেন জানতে চাইলে কোনো উত্তর দিতে পারেননি চেয়ারের দ্বায়িত্বে থাকা লোকজন। এমনকি হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে হাসি ঠাট্টাও করেন তারা। নাম জানতে চাইলে নাম প্রকাশ করবে না বলেও হাসা-হাসি করেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আলী হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন, বলেন -হাইকোর্ট থেকে তো অনেক নির্দেশনা দিয়েছেন। আপনি কোন বিষয়টা জানতে চাচ্ছেন।
বিনামূল্যে চেয়ারে বসার উল্লেখ করে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, কিটকট চেয়ারগুলোতো সরকারি নয়। তারপরও আমরা হাইকোর্টের আদেশ সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছিলাম। তবে, মালিকরা তা সঠিকভাবে মানছে না।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডিসি বলেন, আপিল করা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।
টুরিস্ট পুলিশের এএসপি হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী বলেন, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা পুলিশ সুপারকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদেরকে এই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি বা কোনো ধরনের আদেশের নথিপত্রও আমরা পাইনি। তবে হাইকোর্টের আদেশ সম্বলিত সাইনবোর্ড টানানোর পর থেকে আমরা সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন করছি।
তিনি আরও বলেন, শুনেছি কিটকট চেয়ারের মালিকদের পক্ষ থেকে আপিল আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু ডিসি জানান, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে কিনা তা ওনার জানা নেই।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে থাকা ছাতা চেয়ারের (কিটকট) ৫০ শতাংশ সাধারণ মানুষের জন্য সংরক্ষণ করতে বলেছেন উচ্চ আদালত। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের জন্য তা বিনামূল্যে ব্যবহারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারিসহ অন্তর্বর্তীকালীন এই আদেশ দেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।